ফেরারি পালক

সজীব জমশের আলি
Published : 2 Sept 2017, 11:49 AM
Updated : 2 Sept 2017, 11:49 AM

এই ঈদ উপলক্ষে একটু বড় রকমের কর্মবিরতি থাকে। সবাই ফিরে যায় তাদের কাছের মানুষদের কাছে। বর্তমানে দেশের কর্মক্ষম মানুষের বড় একটা অংশ পোশাক শ্রমিক। যারা ঢাকার আশেপাশে গড়ে উঠা শিল্পাঞ্চলগুলোতে অস্থায়ী ভাবে বসবাস করে। দিনরাত বিরতিহীন কঠোর পরিশ্রমের কাজ তাদের। নিয়ম হয়তো আছে ৮ সর্বোচ্চ কাজ করানো যাবে। কিন্তু এমনও হয় মাসে ২০দিনই একজন শ্রমিককে ১৫/১৬ ঘন্টা করে কাজ করতে হয়। যাই হোক পোশাক কারখানার কাজ মানে সবকিছু ছেড়ে ছুড়ে বনবাসে যাওয়ার গল্প। এই পোশাক শ্রমিকদের কাছে দুই ঈদের ছুটি পরম প্রতীক্ষার বিষয়, হাঁফ ছাড়ার অনিন্দ অবসর।

পূজা যেমন একটা সার্বজনীন উৎসব। ঈদকেও আমি সবসময় সেই দৃষ্টিতে দেখি। ধর্মভিত্তিক কখনো কিছু হতে পারে না বা হওয়া উচিৎ নয়। আমরা একাত্তরে দেখেছি ধর্মকেন্দ্রিক রাষ্ট্র গঠন করতে গিয়ে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে তৎকালীন মুসলিম লীগ সরকার। মানুষের জন্য ধর্ম, ধর্মের জন্য মানুষ নয়। দেশের সব মানুষের মৌলিক উৎসব এটা।

কথিত আছে কোন এক নবী স্বপ্নযোগে আদিষ্ট হয়েছিলেন স্রষ্টার তরে প্রিয়বস্তু ত্যাগে। রীতি অনুসারে শতাধিক উট জবেহ করলেন তিনি। অতপর পরবর্তী রাত্রিতেও একই স্বপ্ন দেখলেন নিদ্রামধ্যে। যার অর্থ দাঁড়ায় প্রভুর অসন্তুষ্টি। পরপর কয়েকবার উট উৎসর্গ করেও যখন ফল পেলেন না তখন স্বীয় পুত্রকে জবাই করার কথা ভাবলেন। কারণ বার্ধক্যে প্রাপ্ত এ সন্তানই তার সবচে প্রিয়। এরপর চোখ বন্ধ করে আত্মজকে জবাই করার পর দেখলেন সেখানে স্বর্গীয় পশু রক্তাক্ত পড়ে আছে, আর তার প্রিয় পুত্র অক্ষত তার পার্শ্বে দন্ডায়মান। এরপর থেকে আজ অবধি হাজার বছর যাবত এই উৎসব পালিত হয়ে আসছে।

এই অবসরের কথাটাও আপেক্ষিক। মুলত ছুটির পুরোটা অবসর নয়। ঈদের ছুটিতে যাদের বাড়ি যাওয়ার অভিজ্ঞতা আছে তারা সবাই ভাল করে জানেন যে কী পরিমাণ যানজট হয়। গিয়ে পৌঁছতে পৌঁছতে একেক জনের অবস্থা অাধমরার মত হয়ে যায়। আবার কর্মস্থলে ফেরার সময়ও সমান ঝক্কি। গায়ের এমন শিতল মাটিতে পা রেখে আপনজনদের কাছে পাওয়ার পর সব ক্লান্তি আপনি দূর হয়ে যায়। দু'চারদিনের জন্য গম গম করে উঠে গ্রামগঞ্জ।

আমি বিশ্বাস করি আনন্দ বা সুখের চেয়ে বড় কিছুই নেই। আমরা আমাদের জীবন-যাপন করতে গিয়ে প্রতিটা মুহূর্তে এই সুখেরই সন্ধানি।