বিদ্যার্থীর খোঁজ

সজীব জমশের আলি
Published : 16 Jan 2018, 09:48 AM
Updated : 16 Jan 2018, 09:48 AM

উপস্থিত সময়গুলোতে রাস্তার পাশে একই রঙের বোরকা পরা বা ম্যাচিং করা প্যান্ট-শার্টে মার্জিত ভদ্র বেশ ভুষার মানুষদের ছোট ছোট জটলা সচরাচর সকলের নজরে পরে। মানুষকে এনারা জ্ঞান শেখান কিছু অর্থের বিনিময়ে। শিল্প-কারখানা সমৃদ্ধ শহর বা মফস্বলগুলোর আনাচে-কানাচে গড়ে উঠা অজস্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সভ্যতার একটা বাড়তি সৌন্দর্যও বটে। ডিসেম্বর জানুয়ারির এ মওসুমটায় শিক্ষকরা তাদের প্রতিষ্ঠানের জন্য ছাত্র জোগাড় করতে বের হয় তারা মানুষকে বিদ্যা অর্জনের গুরুত্ব বোঝায় তার চেয়ে বেশি যেটা বুঝায় তা হল তাদের প্রতিষ্ঠানটাই সর্বোৎকৃষ্ট।

এ দলের লোকেরা অনেক ক্ষেত্রেই সবার বিরক্তির কারণ হয়। নিজেদের দোষে নয় পরিস্থিতির দুষ্টুতায়। যথোপযুক্ত বিনয়ের সঙ্গে কথা বলা শুরু করলেও তাদের বক্তব্যের অন্তসার শুন্যতা সকলে উপলব্ধি করেই ফেলে। যারা ক্রমাগত অভিনয় দেখে দেখে অভ্যস্ত তাদের সমুখে এ কৃত্রিম বিনয় নিতান্ত হাস্যকর। একজন মহিলার ব্যাপারে জানি, তার ফ্লাটে একদা কাকতালীয়ভাবে হলেও একই দিনে সাতটা স্কুল থেকে লোক আসে। প্রথমে তিনি ভদ্রতার সহিত তাদের সাথে আলাপচারিতা করছিলেন ও বিদায় করছিলেন। কিন্তু ধারাক্রমে যখন আসতেই থাকলো তখন তার ধৈর্যে আর কুলাল লাজ-লজ্জার মাথা খেয়ে তিনি এ কথাই বলে ফেললেন যে ভাই যা ছিল দিয়ে দিছি। আরেকটা আছে হইলে দেবো। অপমানে সেই টিচার  শিক্ষতাই ছেড়ে দিয়েছেন শুনেছি।

প্রশ্ন উঠতে পারে এভাবে ছাত্র জোগানো কি অন্যায়? কেউ কেউ আরো একটু এগিয়ে বলতে পারে এ প্রয়াসে বহু অনাগ্রহি মানুষ তাদের পরবর্তী প্রজন্মকে শিক্ষিত করার করার মানসিকতা অর্জন করছে। তাদের উদ্দেশ্যে বলবো এ কাজটা করতে নেমে অনেক বাড়তি কথা বলতে হয় মিথ্যে আশা দিতে হয় যে গুলোকে আমি কদাপি ন্যায় বলবো না। যেখানে মানুষকে বোঝানো উচিৎ বিদ্যার সুফল অর্থনৈতিক নয় মানবিক। সেখানে তাদেরকে অর্থনৈতিক স্বাবলম্বিতার স্বপ্ন দেখিয়ে তাদের মূলধন লুটে নেয়া হচ্ছে। ক'জন শিক্ষক আছে যারা বলে জ্ঞানের জন্যে পড়ো? অথচ এ প্রবাদবাক্য সকল প্রতিষ্ঠানের কপালেই খোদাই করা থাকে যে বিদ্যার্থে এসো আর সেবার্থে বের হও। ব্যাঙের ছাতার মত গজিয়ে উঠা স্কুলগুলোর অপকারিতা মোটেই সামান্য নয়। একথা দিনের আলোর মত পরিষ্কার যে প্রাইভেট স্কুল-কলেজগুলো বস্তুতই ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। বিশুদ্ধভাবে তো নয়ই গোঁজামিল দিয়েও বিদ্যা শেখানোর লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত নয়। তারা যেনতেন ভাবে কিছু সার্টিফিকেট ধরিয়ে দেয় কিছু ফর্মালিটির মধ্য দিয়ে। পরবর্তিতে এরা কোথাও উচ্চশিক্ষার সুযোগ পায় না এবং পরিবার কর্তৃক লাঞ্ছনা সইতে বাধ্য হয়। পরিবার স্বাভাবিক ভাবেই সন্তানের পড়ালেখার পেছনে খরচ করা টাকা-পয়সাকে ইনভেস্টমেন্ট ভাবে আর উচ্চশিক্ষার সুযোগ অর্জন করতে না পারাকে সন্তানের ব্যার্থতা। তারা এটা ভুলে যায় যে সকল ইন্টারমিডিয়েট পাস করা স্টুডেন্টদের উচ্চশিক্ষা লাভ কোনদিন সম্ভবপর নয়। পরিবারের কাছে বাকিদের যে ব্যার্থতা তার দায় কে নেবে? তারা কি নেবে যারা ব্যবসা হেতু মানুষকে আঁধারে রাখছে?

একজন শিক্ষকের মান এমনকি আত্মমর্যাদাও অনেক নিচে নেমে গেছে, প্রতিষ্ঠানগুলোরও। একটা প্রতিষ্ঠান করার আগে অবশ্যই ভাবা উচিৎ এ প্রতিষ্ঠান সময় ও সমাজকে নব্য ও আধুনিক কিছু দেবে কিনা। দরকারি হল অভিনবত্ব আনয়ন আঙ্গিক ও রুচিতে ভিন্নতা আনা। একটা স্কুল তখনি তৈরি হতে পারে যখন প্রতিষ্ঠাতা বুকের ভেতর থেকে সে প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে উঠবেন তখন নয় যখন কারো জীবিকার সঙ্কট হয়।

এ শর্ত রক্ষা করে কোন স্কুল স্থাপিত হলে তার ছাত্রঘাটতি কখনো হবেনা। আর স্যারদেরও পথে পথে ঘুরে অপমানিত হতে হবে না। এ বিষয়ে বেশ কিছুদিন আগে আমার এক স্যার আমার সাথে আলোচনা করেছিলেন, লিখতেও বলেছিলেন। এতদিন হয়ে উঠেনি। লেখার আইডিয়াটা তার দেয়া, সেজন্যে স্যারকে অশেষ কৃতজ্ঞতা।