সরকারি দলের নেতা তাই সরকারি জমি দখল, অবাক হবার কী আছে?

জুয়েল মিয়া
Published : 16 August 2012, 05:00 AM
Updated : 16 August 2012, 05:00 AM

ক্ষমতাসীনরাই তো ক্ষমতা দেখাবে। আপনার হাতে বর্ম না থাকলে আপনি কী বর্মটা উপরে তুলে দেখাতে পারবেন? আ'লীগ এখন ক্ষমতায় তারা যদি এই সময়ে সরকারি জমি দখল না করে তবে আর কখন করবে বলুন তো? একেই বলে, 'সময় থাকতে সাধন'।

নিশ্চিতভাবেই তারা 'অজ্ঞানী' নন! তারা নিশ্চয় সময়ের গুরুত্ব বুঝেন। তারা যদি সময়ের গুরুত্ব না বুঝেন তবে আমাদের লিড দেবেন কী করে! বিএনপি যদি ক্ষমতায় আসে তাহলে বিএনপির নেতারাও একই কাজ করবে। ভবিষ্যৎ ভারসাম্য রাখার প্রত্যয়ে বোধ করি দখল কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।

খবরে প্রকাশ, নরসিংদীর শিবপুরে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হারুন অর রশিদ খানের বিরুদ্ধে সরকারি জমি দখলে নিয়ে বহুতল বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে। ভবনটির একাংশ সরকারি জমির ওপর—এমন অভিযোগ এনে একাধিকবার উপজেলা প্রশাসন তা অপসারণে নোটিশ, এমনকি আদালতের নিষেধাজ্ঞাও আমলে না নিয়ে ভবনের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন সরকারি দলের এই নেতা।

এই প্রতিবেদনটি প্রথম আলো অনলাইনে ১৬ আগষ্ট ২০১২তে প্রকাশিত হয়েছে। বিস্তারিত তথ্যের জন্য বাকী অংশটুকু হুবহু তুলে দেয়া হলো।

উপজেলা ভূমি কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১০ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি স্থানীয় চক্রধা ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয়ের এক প্রতিবেদনে সরকারি জমিতে কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই পাকা ভবন নির্মাণ করার অভিযোগ আনা হয়। একই সঙ্গে সরকারি ভূমিতে ভবন নির্মাণ বন্ধ রাখার কথা উল্লেখ ছিল।

ইউনিয়ন ভূমি অফিসের প্রতিবেদন পাওয়ার পর উপজেলা ভূমি কার্যালয় সার্ভেয়ার দিয়ে ভূমি পরিমাপ করে। ৪ এপ্রিল তাঁদের প্রতিবেদনে নির্মাণাধীন ভবনটির মধ্যে আরএস রেকর্ডে শিবপুর মৌজায় ১ নম্বর খতিয়ানে ৩৮৭ ও ৩৮৮ দাগে ৪ শতাংশ সরকারি জমি রয়েছে বলে উল্লেখ করে।

একই বছরের ২২ জুন অপর এক প্রতিবেদনে বাধা দেওয়া সত্ত্বেও পাকা ভবন উত্তোলন করা হচ্ছে মর্মে উপজেলা সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) অবহিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়। এরপর ১৪ অক্টোবর উপজেলা সহকারী কমিশনার হারুন অর রশিদ খান সাত দিনের মধ্যে অবৈধ স্থাপনা সরানোর জন্য নোটিশ দেন। অন্যথায় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানানো হয়। নোটিশ পাওয়ার পরও সরকারি জমি থেকে স্থাপনা অপসারণ করা হয়নি। পরবর্তীকালে প্রশাসনিকভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করলে হারুন খান জমির মালিকানা দাবি করে আদালতে মামলা করেন। আদালত মামলা চলাকালীন সব স্থাপনা নির্মাণে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। কিন্তু এর পরও ভবনের কাজ বন্ধ করা হয়নি।

চক্রধা ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয়ের সহকারী কর্মকর্তা অজিত কুমার বিশ্বাস প্রথম আলোকে বলেন, হারুন অর রশিদ খানকে ভবন নির্মাণ বন্ধ করতে লিখিত ও মৌখিকভাবে বলা হলেও কোনো কাজ হয়নি। এমনকি আদালত বিচারাধীন সময়ে কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিলেও তা মানা হয়নি।

যোগাযোগ করা হলে হারুন অর রশিদ খান মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, খরিদসূত্রে জমির মালিক তাঁরা। আরএস রেকর্ডে ভুলে খাস জমি হিসেবে রেকর্ডভুক্ত হওয়ায় সংশোধনের জন্য মামলা করেছেন। আদালতের নির্দেশনার পরও কাজ চালিয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'আমি কোনো ধরনের নিষেধাজ্ঞা পাইনি।'

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হেলাল উদ্দিন বলেন, সরকারি জমি দখল করে বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ করা অন্যায়। এ ব্যাপারে প্রশাসনের পক্ষ থেকে একাধিকবার নোটিশ করা হয়েছিল। সব বাধা উপেক্ষা করে তিনি কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।

শুধু নরসিংদীতে কেনো সারা দেশের ক্ষেত্রেই এই কথা প্রযোজ্য। বিএনপি কিংবা আ'লীগ অথবা স্বেরশাসকের আমল; সব সময়ই এই দখলদারিত্ব থাকে এবং থাকবে!! যে যখন ক্ষমতায়, জনতার সম্পদ লুটে-পুটে খায়।

কেবল যে সরকারি জমি দখল করে নিচ্ছে তা কিন্তু নয়, ক্ষমতা বলে সাধারণ জনগণের (যাদের হাতে ক্ষমতা নেই) জমিও তারা দখলে নিচ্ছে। এটাই আমাদের দেশের বর্তমান রাজনৈতিক সংস্কৃতি। ক্ষমতার পালাবদল হবে কিন্তু দখল রাজনীতির অবসান হবে না।

বর্তমান সরকার বেশ কিছু ভালো কাজ করেছে। সাধারণ জনতার প্রত্যাশা করে 'স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি'র দাবীদার আ'লীগ 'দখল রাজনীতি' থেকে বের হয়ে আসবে। তারা যদি দেশের জন্য কিছু না করে 'যুদ্ধপরাধীরা' করবে? আ'লীগের উপরই দেশের একটা বিরাট জনগোষ্ঠী আস্থা রাখতে চাই, প্লিজ জনগণের আস্থার প্রতিদান দিন। মুখে নয়, কাজ করে দেখান। যে সব নেতা সাধারণের জমি বা সরকারি জমি দখল করে নিচ্ছেন বা নিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে সরকার কী ব্যবস্থা নেন সেটাই দেখার বিষয়!

এই গণমাধ্যমগুলো যা শুরু করেছে! আরে ভাই তিনি সরকারি দলের লোক তিনি তো সরকারি জমি দখল করতেই পারেন- তাতে আপনাদের কী? তিনি তো সরকারেরই লোক, সাধারণ জনগণ নন। আমরা আশা করবো গণমাধ্যম সকল ক্ষেত্রে প্রহরীর ভূমিকায় কাজ করবে। কিন্তু মুশকিল হলো এই ধরণের সংবাদ প্রকাশের পর প্রায়শই ক্ষমতাধররা অত্যাচারের স্টিমরোলার চালান সংশিষ্ট প্রতিবেদকের উপর, আর তা হয় সরকারি দলের যোগসাজসেই।