আন্তর্জাতিক অটিজম সম্মেলন: আমাদের আশা-ভরসার স্থল হয়ে উঠুক

বেবী মওদুদ
Published : 11 Jan 2011, 10:31 AM
Updated : 22 July 2011, 05:25 PM

আগামী সোমবার ২৫ ও ২৬শে জুলাই ২০১১ তারিখে সকাল ১১টায় ঢাকায় হোটেল রূপসীতে অনুষ্ঠিত হবে আন্তর্জাতিক অটিজম সম্মেলন। এরই ধারাবাহিকতায় ২৭, ২৮ ও ২৯ শে জুলাই অনুষ্ঠিত হবে অটিজম প্রশিক্ষণ। এ প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করবে অটিজম আক্রান্ত সন্তানের মা অথবা বাবা, চিকিৎসক এবং অটিজমদের নিয়ে কাজ করছেন শিক্ষক ও সংগঠকদের। এই সম্মেলনের প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে জনসচেতনাতা বৃদ্ধি, বিভিন্ন দেশের বিশেজ্ঞদের মত বিনিময়, সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগকে পৃষ্ঠপোষকতা করা। আর প্রশিক্ষণের লক্ষ্য হবে এইসব শিশুদের প্রতি যত্ন, চিকিৎসা, শিক্ষা ও পূনর্বাসনের ব্যবস্থাপনা। এই সম্মেলনে দক্ষিণ এশিয়ার বিশিষ্ট সরকারি ও রাজনৈতিক ব্যক্তিরা অংশগ্রহণ করলেও যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যর অটিজম চিকিৎসক, স্কুল সাইকোলজিস্টরাও অংশ নেবেন ও প্রশিক্ষণ দেবেন। জর্ডানের প্রতিনিধিও থাকবেন। বলা চলে, এ অঞ্চলে এ ধরনের সম্মেলন প্রথম হতে যাচ্ছে। জাতিসঙ্ঘ, ইউনিসেফ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও আগ্রহ নিয়ে এ সম্মেলনে অংশ নেবেন। নি:সন্দেহে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্মেলন হবে এবং এধরনের সম্মেলন যে কত জরুরী তা ভুক্তভোগী মা-বাবা, শিক্ষক ও সংগঠক ছাড়া কেউ উপলব্ধি করতে পারবে না।

আন্তর্জাতিক অটিজম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে, কিন্তু এ সম্পর্কে আমরা কতজন জানি, কতটুকুই বুঝি ? আমার মনে হয় শতকরা নব্বই জন চিকিৎসকই জানেন না। সামান্য কয়েকজন বিশেষজ্ঞ থাকতে পারেন, আর নিউরোলজিস্টরা যদি কিছু জানেন। সবাই এ চিকিৎসা করবেন বা জানবেন সেটাও আমরা দাবি করছি না। আমাদের কথা হলো, এইসব বিশেষ রোগাক্রান্ত শিশুরা গেলে বিশেষজ্ঞদের কাছে না পাঠিয়ে নিজেরা চিকিৎসা করেন কেন ? বিশেষ চিকিৎসা গ্রহণ করলে সে হয়তো সুস্থ হয়ে যেতে পারে। সামান্য হলে সম্ভাবনাটি অঙ্কুরেই কেন নষ্ট করে দেবেন ? আমাদের মেডিক্যাল কলেজগুলোতে অটিজম সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞানটুকুও দেয়া হয় না। এসব কথা চিকিৎসকরাই বলে থাকেন। আমাদের শিশু বিশেষজ্ঞরাও এমন কথা বলে থাকেন। আজ এই একুশ শতাব্দীতে এসে যদি কোন ডিগ্রীপ্রাপ্ত চিকিৎসক বলেন, অটিজম সম্পর্কে আমার কোন ধারণা নেই বা ছিল না, তাহলে নিশ্চয়ই বুঝতে হবে চিকিৎসাজ্ঞানে আমরা কতখানি পিছিয়ে আছি। এই বিশেষ শিক্ষা সম্পর্কে আমাদের চিকিৎসকদের জ্ঞান সীমিত থাকায়, তারা এসব শিশুর সাধারণ জ্বর, পেটব্যথা ইত্যাদি চিকিৎসা সেবা দিতেও অনীহা প্রকাশ করে থাকেন। সেটা তার অপরাধ হিসেবেও বিবেচনা করা যায় না কি ? আমাদের চিকিৎসকরা এই সম্মেলনে প্রশিক্ষণের সুযোগ পাবেন আশা করা যাচ্ছে। জানি না, কতজন এটা নেবেন এবং আমার অসহায় শিশুরা কি সঠিক চিকিৎসা পাবে ?

"অটিজম একটি ছোট্ট শব্দ, কিন্তু এর গভীরতা ব্যাপক। বর্তমানে অনেকেই এ শব্দের সঙ্গে পরিচিত হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় কম। ফুটফুটে এ সকল শিশুদের হঠাৎ করে দেখে বোঝার উপায় নেই যে, কী তাদের সমস্যা। কারণ অটিস্টি শিশুদের চেহারা বা অবস্থা স্বাভাবিক মতো এবং সাধারণত: তাদের শারীরিক কোন সমস্যা থাকে না। অটিজম হচ্ছে শিশুদের মস্তিষ্কের বিন্যাস এবং বিকাশগত সমস্যা, যা সাধারণত : শিশুর জন্মের তিন বছরের মধ্যে প্রকাশ পেয়ে থাকে। অটিজম কোন মানসিক রোগ নয়। বিবিধ কারণকে এর জন্য দায়ী মনে করা হলেও নির্দিষ্ট কোন কারণ কিংবা কারণসমূহকে এখন পর্যন্ত চিহ্নিত করা যায় নি। অনেকক্ষেত্রে শিশু তার নিজের চাহিদাগুলো প্রকাশের সময় হলেও তার অনুভূতিগুলো প্রকাশের ভাষাটি ব্যবহার করতে জানে না। আচরণগত সমস্যার কারণে অনেকেই এদের পাগল ভাবে, সমাজে এরাই বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। প্রতিটি অটিস্ট শিশু ভিন্ন ভিন্ন ধরনের বিধায় এদের সমস্যা চিহ্নিতকরণের বিষয়টিও বিশাল। তবে যে প্রধান তিনটি বৈশিষ্ট্য প্রায় সকল শিশুর মধ্যে দেখা যায় তা নিম্নরূপ :


১. মৌখিক ও অমৌখিক যোগাযোগ সীমাবদ্ধতা;অধিকাংশ অটিস্টিক শিশু কথা বলে মনের ভাব প্রকাশ করতে পারে না। শিশুর নিজের চাহিদাগুলো কোনভাবে প্রকাশ করতে পারলেও তার অনুভূতিগুলো প্রকাশে সামাজিক পরিবেশে কীভাবে ব্যবহার করতে হবে তা বোঝাতে পারে না। মুখভঙ্গী ও অঙ্গভঙ্গী ইত্যাদি আচরণসমূহ বোঝা যায় না এবং এর ব্যবহারও অনেক সময় যথাযথ হয় না। বয়স অনুযায়ী অনেকের শব্দভাণ্ডার বৃদ্ধি পায় না। অনেক সময় দেখা যায় যে কিছু কিছু কথা সময়মত শিশু বলে থাকলেও সেগুলো পরবর্তীকালে বলে না। বেশিরভাগ অটিস্টিক শিশু চোখে চোখে তাকায় না। কথপোকথন শুরু করা বা চালিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা এদের নাও থাকতে পারে। অনেক শিশু কথার পুনরাবৃত্তি করে এবং অর্থহীন কথা বলে।

২. কাঙ্খিত সামাজিক আচরণে সমস্যা। অটিস্টিক শিশুরা সাধারণত : সমবয়সীদের সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলে না। ভাব প্রকাশ প্রায়ই একতরফা হয়। কিছু শিশু সমাজ থেকে নিজেকে গুটিয়ে রাখে। অন্যের প্রতি আগ্রহ দেখায় না। যাদের অটিজম আছে তাদের সামাজিক বোধের অভাব থাকায় সামাজিক নিয়ম-কানুন মেনে চলা তাদের পক্ষে অত্যন্ত কষ্টকর। অটিস্টিক শিশুদের পক্ষে অন্যরা কী ভাবছে বা উপলব্ধি করছে ইত্যাদি বোঝার ক্ষেত্রে সমস্যা থাকায় তাদের কাছ থেকে কোনও সহানুভূতিশীল মনোভাব বা আচরণ আশা করা যায় না। পুনরাবৃত্তিমূলক আচরণ অটিজমের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য। যেমন অনবরত দুই হাত নাড়ানো, শরীর দোলানো, মাথা নাড়ানো, একই কথা বারবার বলা ইত্যাদি।

৩. খেলাধুলা এবং কল্পনাযুক্ত খেলার সমস্যা। অন্যের সাথে কোন খেলনা বা জিনিস নিয়ে কল্পনাযুক্ত খেলাধুলা করতে পারে না।

৪. অন্যান্য বৈশিষ্ট্যে দেখা যায় অনেকে ধ্বংসাত্মক আচরণ করে। অভ্যাস বা রুটিন পরিবর্তনে ঘোর বিরোধিতা করে। প্রায় বিশ ভাগ অটিস্টিক শিশু ব্যক্তিদের মাঝে মৃগীরোগ (Epilepsy) দেখা দেয়।

বেশির ভাগ অটিস্টিক শিশু অত্যন্ত সম্ভাবনাময় হয়। প্রতি দশজন অটিস্টিক শিশুর মধ্যে একজনের ছবি আঁকায়, গানে, গণিতে বা কম্পিউটারে প্রচন্ড দক্ষতা থাকে। (সুত্র: জাতীয় প্রতিবন্ধি ফাউন্ডেশন)।

আমাদের দেশে অটিজমকে বুদ্ধি-প্রতিবন্ধিকতা বা মানসিক রোগ বলা হয়ে থাকে। কিন্তু বুদ্ধি-প্রতিবন্ধিকতা ও অটিজমের মধ্যে যথেষ্ট পার্থক্য রয়েছে। বুদ্ধি-প্রতিবন্ধিদের বিকাশের প্রতিটি স্তর সমান গতিতে চলে। কিন্তু অটিজম আক্রান্তদের বিকাশ সর্বক্ষেত্রে সমান গতিতে বৃদ্ধি পায় না। এ পর্যন্ত অটিজমের কোন প্রকৃত চিকিৎসা বা ঔষধ আবিস্কার হয়নি যাতে সুস্থ ও স্বাভাবিকভাবে জীবনযাপন করা যেতে পারে। এসব কারণে অটিজম আক্রান্তদের চিহ্নিত করে চিকিৎসা-শিক্ষা প্রশিক্ষণ-সামাজিকীকরণের মাধ্যমে সমাজে তাদের প্রতিষ্ঠিত করা যেতে পারে। আমাদের দেশের শারীরিক প্রতিবন্ধি, মুক-বধির, জন্মান্ধ ও অটিস্টিক শিশুরা ছবি আঁকায়, গান-নাচ-আবৃত্তি করে সকলের প্রশংসা অর্জন করেছে। আবার বিশ্ব বিশেষ অলিম্পিকে অংশগ্রহণ করে সোনার মেডেল অর্জন করেছে– এটা অনেক বড় কৃতিত্ব। দীর্ঘসময় লেগেছে তাদের প্রশিক্ষণ ও প্রাকটিসে। প্রশিক্ষকরাও দক্ষ ও প্রশংসা পাবার যোগ্য।

অনেকের মুখে শুনেছি ইউরোপের কল্যাণমুখী দেশগুলো প্রতিবন্ধি বা অটিজিম আক্রান্ত শিশুদের জন্য স্বর্গরাজ্য। সেখানে এসব শিশুদের কত ভালো রাখা যায়, কত আনন্দে রাখা যায় তার জন্য রাষ্ট্র দায়িত্ব নেয়। কমিউনিটির কর্মীরা সেই দায়িত্বে নিয়োজিত থাকে। তাদের যত্ন নেয়, চিকিৎসা, শিক্ষা, সরকারি ভাতা সবরকম সুযোগ সুবিধার ব্যবস্থা তারাই দেখাশোনা করে। এমন কি এসব সন্তানের খবর পেয়ে তার মা-বাবার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বলে, 'আপনি যদি আপনার সন্তানকে নিজের কাছে রাখতে চান, তাহলে আমরা কী কী সাহায্য করতে পারি। আর যদি নিজের কাছে রাখতে না চান, তাহলে রাষ্ট্র তার দায়িত্ব নিয়ে লালন-পালন করবে।' ভাবতেই ভালো লাগছে যে, এমন দেশও আছে যেখানে এসব মা-বাবা ও শিশুরা নিশ্চিত জীবন-যাপনের সুযোগ পায়। মাকে চোখের জল ফেলতে হয় না। স্বামী স্ত্রীকে ছেড়ে যায় না বা তালাকও দেয় না। সমাজও কোন লাঞ্ছনা গঞ্জনা করে না। আমাদের দেশে এমন অবস্থা কবে হবে জানি না, তবে প্রত্যাশা রাখতে পারি। ভারতের বিভিন্ন স্থানে প্রচুর সরকারি বেসরকারি উদ্যোগ আছে। আমি দেখেছি সেখানে চিকিৎসা ব্যবস্থাটা উন্নত। দক্ষিণ এশিয়ার অনেক দেশে বেসরকারি উদ্যোগও ভালো। সরকারি পৃষ্টপোষকতাও থাকে। সরকারি শীর্ষ ব্যক্তিদের স্ত্রীরাও পৃষ্টপোষকতা করে থাকেন। ফলে কাজ হচ্ছে সর্বত্র। বিশ্বের অনেক খ্যাতনামা সংগঠন সহযোগিতামূলক কাজ করে যাচ্ছে। কিন্তু কোথাও কোন সমন্বয় নেই, পারস্পরিক মতবিনিময়, যোগাযোগ নেই। এসব থাকলে অভিজ্ঞতা বাড়ে, কাজের সুবিধা হয়।

ঢাকায় আন্তর্জাতিক অটিজম সম্মেলনের প্রধান উদ্যোক্তা সায়মা হোসেন পুতুল, যুক্তরাষ্ট্রের লাইসেন্সপ্রাপ্ত স্কুল সাইকোলজিস্ট। ন্যাশনাল এসোসিয়েশন অব স্কুল সাইকোলজিস্টের সদস্য এবং রিসার্চ বেজড সংগঠন অটিজম স্পীকসের বাংলাদেশের একজন প্রতিনিধি। পুতুল অটিজম নিয়ে দেশে-বিদেশে কাজ করেছে, বিভিন্ন গবেষণামূলক কাজও করেছে। তারপরও সায়মা হোসেনের দৃষ্টি ছিল সর্বদা বাংলাদেশে। এখানকার মা ও শিশুদের নিয়েও সে কাজ করেছে। ২০১০ সালের জুলাই মাসে পুতুল যখন ঢাকায় আসে তখন বাংলাদেশ জাতীয় প্রতিবন্ধি ফোরাম একটি মত বিনিময় অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। প্রায় একশত জন মা, চিকিৎসক, শিক্ষক, সংগঠক তাদের কাজকর্ম ও অভিজ্ঞতা নিয়ে অনেক কথা বলেন, এই অভিজ্ঞতা নিয়ে পুতুল আন্তর্জাতিক ফোরামে বক্তব্য রেখেছে। বাংলাদেশের অটিজম অবস্থান তুলে ধরেছে। পুতুলের এই অভিজ্ঞতার ভিত্তি নিয়েই ঢাকায় এই আন্তর্জাতিক সম্মেলন হতে যাচ্ছে।

এ সম্মেলন নিয়ে প্রধান উদ্যোক্তা সায়েমা হোসেন পুতুলের সঙ্গে আলাপ করছিলাম। সে জানাল, "এ অঞ্চলে অটিজম নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্মেলন এই প্রথম হতে যাচ্ছে। আমরা এ বিষয়ে জনসচেতনা গড়ে তুলতে চাই। এ অঞ্চলের অটিস্টিক শিশুরা অত্যন্ত অবহেলিত। তাদেরকে অভিশাপ হিসেবে গণ্য করা হয়। ঘরের ভেতর লুকিয়ে রাখা হয়। আমরা সামাজিকীকরণ করতে চাই। এদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা, শিক্ষা ও যত্ন দিলে কেউ কেউ সুস্থ স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারে। মেধাবী হতে পারে।" সম্মেলনের শেষে ২৭, ২৮ ও ২৯ জুলাই মা-চিকিৎসক স্কুল শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ সম্পর্কে পুতুল গুরুত্ব দিল বেশি। সে জানাল, "এই প্রশিক্ষণ খুব কাজে দেবে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে যারা আসছেন তারা সেখানে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন। এ বিষয়ে তারা বিশেষজ্ঞ তারা সম্মেলনের কথা শুনে নিজ উদ্যোগে আসছেন, আমি তাদের সঙ্গে কাজ করছি। সুতরাং আমরা মনে করি, এ প্রশিক্ষণ এখানে যথেষ্ট অবদান রাখবে।"

পুতুলের মতে, "সম্মেলনের প্রধান আকর্ষন ভারতের অটিজম কর্মকাণ্ডের প্রধান পৃষ্ঠপোষক সোনিয়া গান্ধী হলেও, পাকিস্তানের পার্লামেন্টের স্পীকার ফাহমিদা মির্জা, শ্রীলংকার ফার্স্ট লেডি শিরস্থি রাজাপাকাসে, মালদ্বীপের সেকেন্ড লেডি ইহাম হুসেন ছাড়াও এ অঞ্চলের আরও অনেকেই থাকছেন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্মেলনে সভাপতিত্ব করবেন। এছাড়া মধ্য প্রাচ্য, জাতিসঙ্ঘের প্রতিনিধিসহ অনেকেই থাকবেন। সুতরাং এটা একটা বিরাট প্রভাব ফেলবে। এতোদিন দেখা গেছে যে, বেসরকারি উদ্যোগে এ কাজগুলো বিচ্ছিন্নভাবে হচ্ছিল। আমরা চাই রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা বা সরকারি ব্যবস্থাপনা গড়ে উঠুক। তাহলে উভয়ে সমন্বিতভাবে অটিজম সম্পর্কে জনসচেতনা বৃদ্ধির প্রচারের কাজটি যেমন করতে পারবে তেমনি এসব শিশুদের জন্য উন্নত চিকিৎসা ও জীবনযাপনের ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারবে।" পুতুল তার অভিজ্ঞতা থেকে জানালো, "এসব শিশুরা কেন অবহেলার পাত্র হবে। এরা আচরণগত দিক দিয়ে কিছু কিছু দুর্বলতা ও মাত্রাতিরিক্ত উত্তেজিত থাকে। কিন্তু আমরা যদি তাদের উপযুক্ত যত্ন-চিকিৎসা-শিক্ষা দিতে পারি এবং পরিবার ও সমাজের সাথে একত্রিত রাখতে পারি, তাহলে নিশ্চয়ই তাদের বেশিরভাগ স্বাভাবিক জীবনযাপনে কিছুটা অভ্যস্ত হতে পারবে। এরা মা-বাবাকে অনেকটা চিন্তামুক্ত রাখতে পারবে। আমরা সেই জনসচেতনতা গড়ে তুলতে চাই। মানুষের কাছে, মা-বাবার কাছে, সংগঠক-শিক্ষক এবং চিকিৎসকদের কাছে এটাই আমরা জানাতে চাই।"

পুতুল ঢাকায় এসেছে গত ৩ জুলাই। তারপর থেকে প্রতিদিন এই সম্মেলনের নানা কাজে ব্যস্ত রেখেছে নিজেকে। এই সম্মেলন নিয়ে সে যথেষ্ট আশাবাদী। সে জানায়, "এই ধরনের সম্মেলন এ অঞ্চলে এই প্রথম হতে যাচ্ছে, তবে আমি আশাবাদী যারা এ আন্দোলনে জড়িত তারা উপকৃত হবে। তাদের কাজকর্ম চিন্তা-ভাবনায় আদর্শগত মাত্রা বৃদ্ধি পাবে। আমরা একটা সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা নিতে পারবো। কাজের প্যাটার্ন নতুন করতে পারবো এবং সবচেয়ে বড় কথা যারা অজ্ঞ ও অনভিজ্ঞ তাদের অনেক কিছু জানাতে পারবো এবং আমি আনন্দিত যে, অটিজম আক্রান্ত মা-বাবার মনে আশা – ভরসা জাগবে। চোখের জল নয় এসব শিশুরা তাদের চোখের মনি ও হৃদয়ের সম্পদ হয়ে উঠবে।"

আমাদের দেশের অটিজম শিশুদের নিয়ে সায়মা হোসেন পুতুল যথেষ্ট আশাবাদী। তাদের সম্পর্কে জানালো, "বিশ্বের অনেক উন্নত দেশের তুলনায় আমাদের শিশুরা সৃজনশীল চর্চা ও খেলাধুলায় অনেক এগিয়ে। এটা আমাদের গর্ব ও গৌরব। যারা এ অসাধ্য সাধ্য করেছেন তাদের আমরা প্রশংসা করি। তারাই আদর্শ প্রশিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেছেন।"

পুতুল আরও জানালো, "এখানেই তো শেষ হবে না, আমরা ভবিষ্যতে আঞ্চলিক সমন্বয়ের মাধ্যমে মতবিনিময়, প্রশিক্ষণ, কর্মশালা ইত্যাদি কাজগুলো চালিয়ে যাব।"

আমরা আশা করবো আন্তর্জাতিক অটিজম সম্মেলন আমাদের আশা-ভরসার স্থল হয়ে উঠুক। দেশের যে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর মধ্যে এসব শিশুরা আছে তারা মা-বাবার শক্তি-সাহস-আনন্দের সম্পদ হয়ে উঠুক। রাষ্ট্র-সমাজ-পরিবারে তারাও আপন উজ্জ্বলতায় মাথা উঁচু করে দাঁড়াক। আর আমরাও যেন এদের ভালোবাসতে পারি।