এটিএননিউজ-এ ১৫ই আগস্ট জন্মোৎসব পালন

জুলভার্ন
Published : 25 August 2011, 06:17 PM
Updated : 25 August 2011, 06:17 PM

ডেটলাইন ১৫ই আগস্ট
স্থান: এটিএননিউজ এর নিউজরুম
সময়: বিকেল বেলা
সূত্র: এটিএন নিউজ এর কয়েকজন দেশপ্রেমী সাংবাদিক

এটিএন নিউজরুমে হেপী বার্থ ডে নামাঙ্কিত একটা কেক আনা হলো। দু-একজন জুনিয়র সংবাদকর্মী ছাড়া সবাই হাসিখুশি। কে বলবে, মাত্র দুদিন আগেই এই প্রতিষ্ঠানের সিইও মিশুক মুনীর নিহত হয়েছেন মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায়!

৫ই আগস্ট সকালে শহীদ মিনারে নিহত তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীরকে শেষ শ্রদ্ধা জানায় শোকার্ত মানুষ। আর বিকেলে এটিএননিউজ-এ জন্মদিনের পার্টি করেন প্রতিষ্ঠানটির এক সংবাদ কর্মী। পাটিতে উপস্থিত ছিলেন প্রতিষ্ঠানের সব স্তরের কর্মকর্তারা। বিস্তারিত পরে বলছি। ছবি সংযুক্ত করা হলো। ছবির বর্ণনাও পরে করছি।

"কাঁদো বাঙ্গালী কাঁদো" শ্লোগানে জাতির জনকের ৩৬তম শাহাদাত বার্ষিকী "জাতীয় শোক দিবস": শোকার্ত জাতি এদিন শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছিলো জাতির জনককে। আর বিরোধী দলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া বরাবরের মতোই পালন করেন তার জন্মদিন- যা বেশীর ভাগ সাধারন মানুষ, সুশীলকুল(?) এবং ৯৫ ভাগ সাংবাদিকদের কাছে নিন্দনীয়।

ডেটলাইন ১৫ই আগস্ট
স্থান: কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার: তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীরকে শোকার্ত মানুষের শেষ শ্রদ্ধা
সময়: সকাল বেলা

সর্বস্তরের শোকার্ত মানুষের গভীর শ্রদ্ধা আর ফুলেল ভালবাসায় চিরবিদায় নিলেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চলচ্চিত্রকার তারেক মাসুদ এবং বিশিষ্ট চিত্রগ্রাহক ও এটিএন নিউজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আশফাক মুনীর মিশুক। বাঁধভাঙা জোয়ারের মতো শোকাকুল মানুষ বললেন, 'এভাবে চলে যেতে নেই'।

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে তাদের মরদেহ রাখা হয়। এ সময় রাজধানীর সকল স্তরের মানুষ জাতির এই দুই কৃতী সন্তানের কফিনে পুষ্পার্ঘ অর্পণ করে তাদের শেষ বিদায় জানান। এ সময় শহীদ মিনার চত্বরে নেমে আসে শোকের ছায়া। কান্নায় ভেঙে পড়েন অনেকেই। নাগরিক শ্রদ্ধা নিবেদনের প্রাঙ্গণে নিহতদের স্মরণে খোলা হয় শোকবই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধী দলীয় নেতার পক্ষে ফুল দিয়ে এই দুই গুণী ব্যক্তিত্বের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। শ্রদ্ধা জানান মন্ত্রী পরিষদের অনেক সদস্য, ঢাকার মেয়র সাদেক হোসেন, ঢাবি'র ভাইস চ্যান্সেলরসহ সকল স্তরের অগনিত শোকার্ত মানুষ । এর আগে সকাল দশটায় রাজধানীর কাওরান বাজারে এটিএন নিউজ কার্যালয়ের সামনে মিশুক মুনীরের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় এটিএন নিউজের কর্মী ছাড়াও অসংখ্য মানুষ ফুল দিয়ে নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।

মুল ঘটনা: জন্মদিনের
ডেটলাইন ১৫ই আগস্ট
স্থান: এটিএননিউজ এর নিউজরুম

মরচুয়ারির হিমঘরে শুয়ে আছেন এটিএন নিউজ এর প্রধান নির্বাহী সদ্য অকাল প্রয়াত মিশুক মুনীর আর দেশ বরেণ্য চলচিত্রকার তারেক মাসুদ। এটিএন নিউজ এর নিউজরুমে আনা হলো একটি কেক। সেদিন ছিলো তাদেরই এক নারী কর্মীর জন্মদিন। (১৫ই আগষ্ট!!)

পুরো অনুষ্ঠানটি ভিডিও করা হলো। ছবি তোলা হলো বিভিন্ন ভঙ্গিমায়। সবার হই হল্লার মাঝেই কাটা হলো কেক। এর আগে জন্মদিনের শুভেচ্ছা কাগজে লিখে পাঠ করলেন এক সংবাদ পাঠক।

এই পাঠকের নাম মাহমুদুল হাসান। তার পারিবারিক এক পরিচয়ও রয়েছে। জনাব হাসানের আপন মামার নাম আবদুল মাজেদ। নামটা কি চেনা চেনা লাগছে? জি, ঠিকই চিনেছেন! Captain আবদুল মাজেদ এর কথাই বলছি! জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর পলাতক খুনী Captain আবদুল মাজেদ এর ভাগ্নে মাহমুদুল পাঠ করলেন জন্মদিনের শুভেচ্ছা। হাততালি আর "হেপী বার্থ ডে টু ইউ —– —" উল্লাসে প্রকম্পিত করলেন এটিএননিউজ এর সিনিয়র সাংবাদিক প্রণব সাহা (কালো টি শার্ট), প্রভাষ আমিন (বুকে শোকের প্রতীক কালো ব্যাজ) এবং এটিএন নিউজের হেড অব নিউজ বঙ্গবন্ধু, শেখ হাসিনা পরিবারের একনিষ্ঠ খেদমতগার, প্রয়াত মিশুক মুনিরের স্নেহধন্য মুন্নী সাহাও! পাঠক, মুন্নী সাহাকে চিনতে কি আরো বয়ানের দরকার আছে?

মিশুক মুনীর নিহত হবার পর টিভিতে দেখেছি কান্নায় ভেঙ্গে পড়ছেন তারা। কান্নার কতরকম পোজ, য়্যাকশন-রিয়্যাকশন, অভিব্যক্তি থাকতে পারে-তা বিভিন্ন ভিস্যুয়াল মিডিয়ার কল্যাণে পাঠক-দর্শক নিশ্চই বহুদিন মনে রাখবেন! অথচ ১৫ই আগস্ট সকালে মিশুক মুনীরের দেহ মরচুয়ারিতে রেখে বিকেলেই এটিএন নিউজ এর নিউজরুমে এমন পাটি দেখে হতবাক। প্রতিষ্ঠানটির অনেকেই! তখন নিরবে, লজ্জায় আর প্রতিবাদে নিউজরুম ছেড়ে চলে যান অনেকেই।

সব থেকে মজার ব্যাপার ছিল-আলোচ্য বিখ্যাত সাংবাদিক সহকর্মীর জন্মোত্সবে এসেছিলেন শোকের প্রতীক কালো ড্রেসে। কারন একটু পরেই তিনি জাতীয় শোক দিবসে "কাঁদো বাঙ্গালী কাঁদো" কয়েকদিন সেলিব্রেটিদের নিয়ে লাইভ টক শো করবেন এবং তিনি তা করেছিলেন। সেই অনুষ্ঠান তিনি স্বভাবমতো কেঁদেছিলেন, বিরোধীদলীয় নেতার জন্মোৎসব নিয়ে যথারীতি ঘৃণা-উষ্মাও প্রকাশ করতে ভুল করেননি!

আজ আর নয়-ইয়ে বহুত লম্বি কাহানী হ্যায়!