সংকটমোচনে সামরিক শাসন কাম্য নয়

তাজা কলম
Published : 4 March 2013, 08:28 AM
Updated : 4 March 2013, 08:28 AM

দেশের বর্তমান সংকটময় অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য কেউ কেউ দেশে সামরিক শাসনের প্রত্যাশা করছেন। এর চেয়ে নির্বোধ ভাবনা আর কি হতে পারে ! আমরা যারা নব্বইয়ের স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সাথে সংশ্লিষ্ট ছিলাম তারা জানি একজন সামরিক শাসককে বিতাড়ন করা কত কষ্টসাধ্য কার্যক্রম। সামরিক শাসন নিয়ে এ দেশবাসীর তিক্ত অভিঞ্জতা রয়েছে। পাকিস্তান আমলে আয়ুবী শাসন, এবং স্বাধীনতার পববর্তীতে জিয়া এবং এরশাদের সামরিক শাসনকাল যে কি বিশাল দুঃশাসন ছিল তা বলাই বাহুল্য। এই সব সামরিক শাসনগুলোর অবসানে জনগণকে প্রচুর মূল্য দিতে হযেছিলো যার পুনরাবৃত্তি কোন দেশপ্রেমিক ব্যক্তি চাইতে পারে না। সামরিক শাসন হবে উত্তপ্ত কড়াই থেকে জ্বলন্ত চুল্লিতে প্রবেশ করা।

বস্তুতঃ সামরিক শাসনের প্রেক্ষাপট তৈরী করার জন্য উদগ্রীব এখন জামায়েতে ইসলামি। সম্ভাব্য সামরিক শাসনে তারাই লাভবান হবে বেশী। কারণ সামরিক শাসন জারি হলে দেশে আপাতঃ স্বস্তি আনার জন্য সামরিক কতৃপক্ষ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য গঠিত ট্রাইব্যুনালের কাজ আপাততঃ স্থগিত রাখবে বলাই বাহুল্য। জামাত-শিবিরের চলমান নাশকতামূলক কার্যক্রম এই বার্তাই বহন করছে। বিনা উস্কানিতে হিন্দু মন্দির, বাড়িঘর জ্বালানো, পুলিশ হত্যা, রেললাইন, সেতু উপড়ানো, ইত্যাদি নাশকতামুলক কার্যক্রম করে তারা এখন সামরিক শাসনের প্রেক্ষাপট তৈরী করছে। দূর্ভাগ্যজনক হলেও বিএনপি জামাতের এই ফাঁদে পা দিয়েছে। সামরিক শাসন যদি সত্যি সত্যিই আসে তাহলে যে বিএনপিও ক্ষতিগ্রস্ত হবে এ বাস্তবতা তারা বুঝতে পারছে না।

সামরিক শাসন না হলে বর্তমান সংকটময় অবস্থা থেকে পরিত্রাণের উপায় কি? উপায় আছে, আমরা যারা কোন দলীয় রাজনীতিতে সংশ্লিষ্ট না (এবং এরাই সংখ্যাগরিস্ঠ) তাদেরে সচেতন এবং প্রতাবাদী হয়ে ওঠা। আমরা জানি বিএনপির বেশীরভাগ সমর্থকই যুদ্ধাপরাধীর বিচার চান। চলমান জাগরণ মঞ্চের সাথে জড়িত আছেন নতুন প্রজন্মের অনেক বিএনপি সমর্থক তরুণ ছাত্র-ছাত্রী। জামাতকে ত্যাগ করতে তাদেরকে দলের নেতৃত্বের উপর চাপ প্রয়োগ করতে হবে। এতে ব্যর্থ হলে প্রয়োজনে নতুন নেতৃত্বে একটা ব্যাকেট বন্দি বিএনপি প্রতিষ্ঠা করতে হবে। বিএনপির অনেক নেতারাই আছেন স্বাধীনতা সপক্ষের শক্তি, যারা একাত্তরের গণহত্যার বিচার চান। এদের নেতৃত্বে প্রয়োজনে নতুন বিএনপি গঠন করেন। এবং দেখবের কিছুদিনের মধ্যেই নতুন বিএনপিটিই হবে বিএনপির মূল স্রোত। এ ব্যাপারে ড: বদরোদ্দৌজার বিকল্প ধারাও কাজে আসতে পারে। জামায়াতের ক্ষপ্পর থেকে বি এন পি বাচানোর দায়িত্ব এখন বিএনপির নতুন প্রজন্মের।

আর সংকট উত্তরণে আওয়ামী লীগকে হতে হবে কৌশলী যাতে হতাহতের সংখ্যা মাত্রা ছাড়িয়ে না যায় এবং দেশে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতাবস্থায় ফিরে আসে। যেহেতু জামায়েতে ইসলামি তার রাজনীতি নেতৃত্বের বিকেন্দ্রীয়করণ করেছে, প্রশাসনকেও সেভাবে কাজ করতে হবে। ইউনিয়ন, উপজিলা, জিলা প্রতিটি স্তরের সন্ত্রাসী জামাত দলের চেইন অব কমান্ড এ মূহূর্তেই ভেঙ্গে দিতে হবে। আর মসজিদ, মাদ্রাসাগুলোকে আনতে হবে নজনদারীতে, যাতে করে এইগুলোকে প্লাটফর্ম হিসেবে ব্যবহার করে জামাত কোন নাশকতামূলক কার্যক্রম চালাতে না পারে।