কোরবানি হোক বন্যার্তদের জন্য

কেফায়েত শাকিল
Published : 18 August 2017, 07:23 PM
Updated : 18 August 2017, 07:23 PM

বন্যা কবলিত এলাকার কিছু পরিবারের স্থান হয়েছে একটি স্কুলে

ছোটকাল থেকে বইয়ে পড়ে এবং মুরুব্বিদের থেকে জেনেছি কোরবানি মানুষকে ত্যাগের শিক্ষা দেয়। আলেম ওলামদের থেকে জেনেছি, আল্লাহ তা'আলা কোরবানির মাধ্যমে পশুর মাংস বা রক্ত কিছুই নেন না বরং মানুষের মন পরীক্ষা করেন। আল্লাহর নির্দেশে হযরত ইব্রাহীম (আ.) তাঁর প্রিয় সন্তানকে কোরবানির সিদ্ধান্ত নিয়ে ত্যাগের এক নিদর্শন তৈরি করেন। তাঁর এই আত্মত্যাগের নিদর্শনকে ধরা হয় কোরবানির শিক্ষা হিসেবে।

কোরবানিকে আত্মত্যাগের শিক্ষা বলা হলেও প্রতি বছর ঈদুল আজহা এলে যেমন হাঁক-ডাক দেখা যায় তাতে বুঝার উপায় থাকে না যে এটা আত্মত্যাগের নিদর্শন। পশু কেনার অবস্থা দেখলে মনে হয় যেন আল্লাহ বোধয় মাংসই নিবেন। বাজারে বাজারে বড় বড় গরুর আনাগোনা, বিশাল দামের বহর আর সর্বোচ্চ দামে গরু কেনার প্রতিযোগিতা দেখে মনে হয় যেন কোরবানির নামে বড়লোকত্ব দেখানোর শোডাউন চলছে। আর ফ্রিজের দোকানে গেলেতো সাদা চোখেই ধরা পড়ে 'প্রচলিত' কোরবানির শিক্ষা!

নিরাপদ আশ্রয়ের খোজেঁ একটি পরিবার

আমরা সবাই জানি গত বেশ কিছুদিন ধরে ভয়াবহ বন্যার কবলে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল। গণমাধ্যমের দেয়া তথ্যমতে বন্যায় এপর্যন্ত মারা গেছে ১১৩ জন। যার মধ্যে ৪৮ ঘণ্টায় মারা গেছে ২৪ জন। এসব এলাকায় নেই পর্যাপ্ত খাবারের কোনো ব্যবস্থা। নেই তাদের ডুবে যাওয়া সম্পদ কিংবা ফসল ফিরে পাওয়ার আশা। নেই বেঁচে ফেরারও কোনো নিশ্চয়তা। কোনোভাবে বন্যা মোকাবিলা করে বেঁচে ফিরতে পারলেও বন্যা পরবর্তি সময়ে তাদের দিন কিভাবে কাটবে তারও নেই কোনো নিশ্চয়তা। এই মুহূর্তে বন্যা দুর্গত আলাকাগুলোতে চতুরদিকে চলছে ত্রাণের জন্য হাহাকার। ত্রাণের কিছু পেলে খেয়ে নয়তো না খেয়েই কাটছে এসব মানুষের দিন। তাই পর্যপ্ত ত্রাণ সহায়তায় সরকারের পাশাপাশি এগিয়ে আসা দরকার সকল শ্রেণির মানুষকে।

দেশের বন্যা দুর্গত অঞ্চলে খাবার সংগ্রহ বা জীবন রক্ষায় হাহাকার চললেও তার ছোঁয়া লাগেনি নিরাপদ অঞ্চলগুলোতে। নিরাপদ এলাকায় চলছে কোরবানির ঈদের প্রস্তুতি। সবাই হিসেব কষছেন এবার কোরবানির পশুর দাম বেশি হবে কি না কম। গরু কিনবো না ছাগল ইত্যাদি।

ইসলাম সম্পর্কে আমি যতটুকু বুঝি, ইসলামের ভাষায় ঈদ হচ্ছে সার্বজনিন উৎসব। ঈদ ধনী গরিবকে একত্রিত করে। একে অপরের মাঝে ভেদাভেদ দূর করে সম্পৃতি তৈরি করে। উভয়ের এক কাতারে দাঁড়ানোর পরিবেশ করে দেয়। আর কোরবানি আত্মত্যাগের শিক্ষা দেয়। দুইয়ের সম্মিলনে যা ঘটে তা হলো ত্যাগের মাধ্যমে সার্বজনিন একটি উৎসব পালন। এই শিক্ষা থেকে যদি বলি তাহলে দেশের বড় একটি অংশের বন্যা দূর্গতদের রেখে ঢাক-ঢোল পিটিয়ে কোরবানি পালন করা কি আত্মত্যাগ বা সার্বজনিন উৎসবের নিদর্শন হতে পারে?

বাঁধ ভেঙে হু হু করে ঢুকছে পানি

তাই আসুন না, আমার এবারের কোরবানির আত্মত্যাগ হোক বানভাসিদের জন্য। 'না' পাঠক আমি আপনাকে কোরবানি বাদ দিতে বলছি না। বলছি আপনার এবারের কোরাবনির বাজেট কিছুটা সীমিত করে তার কিছু অংশ পাঠিয়ে দিন বানভাসিদের জন্য। এতে যেমন বানভাসিরা উপকৃত হবে তেমনি সমাজে তৈরি হবে আত্মত্যাগের অনন্য এক নিদর্শন। তৈরি হবে কোরবানির আরেক শিক্ষা। আর মহান আল্লাহও সন্তুষ্টচিত্তে গ্রহণ করতে পারেন আপনার কোরবানি। কেননা মহান আল্লাহ কোরাবনির পশুর রক্ত বা মাংস গ্রহণ করেন না, গ্রহণ করেন কোরবানি দাতার মনের ইচ্ছা।