সবার ভালোবাসায় বাঁচতে চায় চৈতী

মো. খালেদুন
Published : 16 Jan 2016, 12:34 PM
Updated : 16 Jan 2016, 12:34 PM

আমার বিভাগের এক ছোট ভাই। তার পারিবারিক অবস্থা নিতান্তই খারাপ। নামটা বলছি না। কষ্ট করে পড়ালেখার খরচ নিজেই চালায়। অভাব-অনটন নিত্য সঙ্গী হলেও মনটা তার আকাশ সমান বিশাল। পরান ভাই এর চিকিৎসার জন্য সাহায্য সংগ্রহ করতে গিয়ে বিষয়টা টের পেয়েছিলাম। তারিখটা মনে নেই, মানিব্যাগ থেকে সে ১০০ টাকা বের করে দিলো। আমি বললাম এত দিচ্ছ কেন? একটা মিস্টি হাসি দিয়ে আরও কিছু খুচরো টাকা জোর করে আমার হাতে ধরিয়ে দিলো। বিনয়ের স্বরে বলল, ভাই রাখেন। আমি আর কিছু বলতে পারলাম না। খুব বেশি অবাক হয়েছিলাম। সেদিনের আগে মনে হয় পরান ভাই এর নামটাও সে কোনোদিন শোনেনি। কিন্তু যতোটা ভালোবাসা সে দেখাল তার সজ্ঞায়ন আমার কাছে নেই। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের ৩২তম ব্যাচের সিদ্দিকুর রহমান পরান ভাই, যিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক হয়েছিলেন। গত বছর মরণব্যাধী ক্যান্সার তাকে ছিনিয়ে নিয়ে গেছে আমাদের মাঝ থেকে।

কিন্তু জাহাঙ্গীরনগরেরই আরেক শিক্ষার্থী জিনিয়া ঠিকই ক্যান্সারের মুখ থেকে ফিরে এসেছে। সৃষ্টিকর্তার অশেষ কৃপা আর সবার ভালোবাসার জোরে সেটা সম্ভব হয়েছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটি্উট অব ইনফরমেশন টেকনোলজির ৩৯ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী নুসরাত জেরিন জিনিয়া। শিক্ষাজীবনের সব ক্ষেত্রেই ফাস্ট ক্লাশ। হঠাৎ করেই ধরা পড়ল তার ব্লাড ক্যান্সার। চিকিৎসার খচর যোগানো সম্ভব ছিল না তার পরিবারের পক্ষে। আমাদের জিনিয়াস জিনিয়া কি হারিয়ে যাবে আমাদের মাঝ থেকে? না জিনিয়া হারায় নি। সবার ভালবাসায় জিনিয়াস জিনিয়া ভারতে ক্যান্সারের চিকিৎসা শেষে গত ডিসেম্বরে আমাদের মাঝে ফিরে এসেছে। জিনিয়ার ফিরে আসার সুসংবাদের মাঝেই আরও একটি দুঃসংবাদ কানে এলো। ক্যাম্পাসের সব দেয়ালে চোখে পড়লো "সেভ চৈতী" শিরোনামের পোস্টার।

পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মনিকা রহমান চৈতী। সেও বিভাগের ফাস্ট গার্ল। কিন্তু এই মেধাবী শিক্ষার্থীর পথ আগলে ধরেছে তারই শরীরের দুটো কিডনি। তার দুটো কিডনিই অকার্যকর হয়ে পড়েছে। চিকিৎসার জন্য ইতিমধ্যে ২০ লক্ষ টাকা ব্যয় করে তার পরিবার এখন নিঃস্ব। তিন মাস যাবৎ ঢাকার এ্যাপোলো হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে চৈতি। প্রাথমিক কিছুদিন হাসপাতালে ভর্তি ছিল। কিন্তু আর্থিক সংকটের কারণে বেশিদিন হাসপাতালে রাখা সম্ভব হয়নি পরিবারের পক্ষে। বর্তমানে সে ঢাকার মুগদা এলাকায় একটি ভাড়া বাড়িতে পরিবারের সাথে আছে। তার গ্রামের বাড়ি নঁওগা জেলায়।

চিকিৎসকরা বলেছেন, অতি দ্রুত কিডনি প্রতিস্থাপন করলে সে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারবে। কিন্তু কিডনি দান করে এই অসম্ভবকে সম্ভব করবে কে? এই অসম্ভবকেই সম্ভব করছে তার "মা"। প্রাণপ্রিয় সন্তানকে বাঁচাতে একটি কিডনি দিয়ে দিচ্ছেন তার মা।

পৃথীবিতে এর চেয়ে ভালোবাসার দৃষ্টান্ত আর কি বা হতে পারে! তবে মা-মেয়েকে কিডনি দিতে পারবে কিনা তা নিয়ে ডাক্তাররা পরীক্ষা-নীরিক্ষা (ক্রস ম্যাচিং) করছেন। ১১ দিন পর সেই রিপোর্ট পাওয়া যাবে বলে চৈতীর সহপাঠিরা জানিয়েছে।

কিন্তু রিপোর্ট পজিটিভ হলেও মা তার কিডনি দিতে পারবে না। কারণ ৪০ লক্ষ টাকা যে মায়ের নেই। কিডনি প্রতিস্থাপনসহ চিকিৎসার জন্য খরচ লাগবে ৪০ লক্ষ টাকা। এছাড়া প্রতিদিনের খরচ তো আছেই। এক দিন পর পর ডায়ালাইসিস করাতে হচ্ছে।

আচ্ছা একটিবার সেই মায়ের মনের অবস্থাটা একটু অনুভব করার চেষ্টা করুনতো। সেই মনের অবস্থাটা অনুভব করার ক্ষমতা কারও পক্ষেই সম্ভব নয়! তবে আর্থিকভাবে সাহায্য করার ক্ষমতাটা কিন্তু আমাদের আছে। আসুন না একটু চৈতীর পাশে দাঁড়াই। চৈতীকে তার মায়ের কোলে ফিরিয়ে দিই। সন্তানের জন্য মায়ের দেয়া কিডনি প্রতিস্থাপনের দায়িত্বটাকি আমরা নিতে পারিনা?

চৈতীর জন্য সাহায্য পাঠান এই ঠিকানায় (ব্যাংক ও বিকাশ):

মো. মতিউর রহমান,

সঞ্চয়ী হিসাব নং: ১০০০০২৫৪২,

সোনালী ব্যাংক, কমলাপুর শাখা।

বিকাশ অ্যাকাউন্ট নাম্বারঃ ০১৭৫০৪৪৭৪০৮।

প্রয়োজনে যোগাযোগ: ০১৭৬৫৪৪৪৯৮৩,০১৭৬০৭৩০৫৭৫।