আসাদ দুররানীর আণবিক বোমা এবং কিছু নির্লজ্জ ব্লগার

মুক্তকন্ঠ
Published : 18 March 2012, 05:36 AM
Updated : 18 March 2012, 05:36 AM

আসাদ দুররানীর আণবিক বোমা ফাটানোর পর স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলাম কিছু সময়ের জন্য, কিছু একটা লেখা দরকার কিন্তু কি লিখব ভেবে উঠতে পারছিলাম না, আমাদের মহামান্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী কি বলেন সেটা শুনার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলাম, কিন্তু না উনি কিছুই বললেন না, তবে হ্যা ওনার, ভারে ভারাক্রান্ত সচিব যা বলার যথারীতি তাই বললেন। সচিব সাহেবের বক্তব্য নিয়ে তেমন একটা ভাবার বা গুরুত্ত্ব দেবার দরকার আছে বলে মনে করি না, তাছাড়া ৯১ এর নির্বাচনের সময় বিএনপির ভিতরের খবর জানার মত অবস্থানেও উনি ছিলেন না। আমার লেখার মূল বিষয়ও তাই ওনার বক্তব্য নিয়ে নয়।

আমাদের এই প্রিয় বিডি ব্লগের কিছু পোস্ট পড়ে বড়ই আশ্চর্য হলাম এবং স্বয়ংক্রিয় ভাবেই দুহাতের আঙুল গুলো ল্যাপটপের কী-বোর্ডে চালাতে শুরু করলো। আমি অনেক বার আমার বিভিন্ন মন্তব্যে বলেছি আমি কোন লেখক নই, তবে আলোচনা, সমালোচনা বা বিশ্লেষণ করতে কখনো কার্পণ্য করি না। আর অযৌক্তিক কোন কিছু দেখলে তো আমার অতি প্রিয় মানুষদেরকেও এক হাত দেখাতে ছাড়ি না। বন্ধু মহলের সকলেই সেটা জানে এবং তাই এক হাত খেলেও চুপ করে থাকে।

ব্লগ লিখন বা পঠনের মাধ্যমে আমাদের সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধি পাবে, সমাজের বিভিন্ন অসঙ্গতি, অন্যায়, অবিচার গুলো তুলে ধরা যাবে কিংবা বিভিন্ন মতের মানুষের মধ্য থেকে অনেক নতুন নতুন জ্ঞান অর্জন হবে, নিজের ভুলগুলো শুধরে নেবার সুযোগ থাকবে এটাই প্রত্যাশা করি। কিন্তু দুররানি বোমার পর আশ্চর্যজনক ভাবে খেয়াল করলাম বিডি ব্লগের কিছু লেখা। আধারের বাসিন্দা নামের ব্লগারের এই পোস্টটা পড়ে একটু আশ্চর্যই হলাম। লেখাটা পড়ে মনে হল খালেদার রাজনৈতিক জীবন ১০০ ভাগ স্বার্থক, দেশে ওনার এমন অন্ধ ভক্তও বিরাজমান। ব্লগার বললেন:

ভারত ভিক্তিক ডেইলি মেইলের হলুদ সাংবাদিকেরা প্রকাশ করল বিএনপি নাকি ৫০ কোটি রুপি নিয়েছে । পঞ্চাশ মিলিয়ন হয়ে গেল পাঁচশত মিলিয়ন?

আধার মাণিক ভাইকে বলছি "Daily Mail" ভারত ভিত্তিক কোন পত্রিকা না। এটা যুক্তরাজ্যের প্রথম সারির একটা পত্রিকা। কথা সেটা না, কথা হল দুররানীর নিজের শিকারোক্তি। ৫০ মিলিয়ন না ৫০ কোটি সেটা বড় কথা নয় আসল কথা হল খালেদা আইএসআই এর বাংলাদেশী এজেন্ট এটা প্রমাণিত হয়েছে। তাদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করেছেন। ১০ ট্রাক অস্ত্রের বিষয়টা ভালোভাবেই মিলে গেলো মনে হয়।

পত্রিকায় অনেক আজগুবি খবর ছাপে কাটতি বাড়ানোর জন্য সেটা আমরা সকলেই জানি। অর্থের বিনিময়ে অনুমান ভিত্তিক অনেক আজগুবি খবর পৃথিবীর সকল বিখ্যাত পত্রিকাতেই ছাপানো যায়, হোক না সেটা "International Herald Tribune" কিংবা "The Economist". কিন্তু কোন দেশের সুপ্রীমকোর্টের শুনানি নিয়ে সম্পূর্ণ মিথ্যা রূপকথার গল্প প্রচার করার মত কোন হলুদ সাংবাদিক মনে হয় বাংলাদেশের "মানবজমিন" পত্রিকাতেও কাজ করে না। যদি পাকিস্তান সুপ্রীমকোর্টে আইএসআই নিয়ে কোন শুনানি না হয়ে থাকে বা সাবেক আইএসআই প্রধান শিকারোক্তি মূলক কোন জবানবন্দী না দিয়ে থাকে তাহলে পাকি সরকার ও দুররানী নিজেই "দৈনিক খালিজ টাইমস" "Daily Mail" এর বিরদ্ধে মামলা করবে এটাই স্বাভাবিক, কারণ মিথ্যা হলে ওটা হবে পাকি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষরযন্ত্রের শামিল। কিন্তু এখনো পর্যন্ত কোন মামলাতো দূরের কথা একটা প্রতিবাদও আসে নাই, যেমনটা আসে নাই খালেদার মুখ থেকেও। দয়াকরে আবার বলবেন না "দুররানী" সাহেব শেখ হাসিনার কাছ থেকে টাকা খেয়েছে বা দুররানীর দাদা বাড়ি গোপালগঞ্জ, আপনাদের দিয়েতো আবার সবই সম্ভব।

এতদিন ধরে একটা কথা সবাই (জামাত-শিবিরের কর্মী ছাড়া) জানি বা বিশ্বাস করি যে জামাত পাকিদের দোসর। কিন্তু যদিও বিএনপি জামাতীদের সারা জীবনের নিরাপদ আশ্রয়স্হল, তারপরও অসংখ্য বীর মুক্তিযোদ্ধা এই দলটির সাথে জড়িত। সরাসরি দেখা না গেলেও তাদের অনেকের মধ্যেই জামাত বিরোধী একটা মনোভাব সবসময়ই রয়েছে। তারপরও ওই সকল মুক্তিযোদ্ধা মানুষ গুলো বিভিন্ন কারণে বা আওয়ামীলীগের কিছু ভুলত্রুটির কারণে নিজেদের মনের ইচ্ছার বিরুদ্ধেই বিএনপির সাথে রয়েছে একটা আসা নিয়ে যদি কখনো দলের মূল শক্তিটাকে মুক্তিযুদ্ধা কেন্দ্রিক করা যায়। যে কথাটা বিএনপি এক সময়ের সহ-সভাপতি ও মন্ত্রী শাহজাহান সিরাজ অবশ্য অকপটে বলেও ফেলেছিলেন, জানিনা তিনি সুবিধা বঞ্চিত হয়ে বলেছিলেন কিনা, তবে কথাটা ১০০ ভাগ সত্য।

কিন্তু এই স্বাধীনতার মাসে এটা কি জানলাম ! কি শুনলাম ! যিনি তার প্রয়াত স্বামীকে স্বাধীনতার ঘোষক (!) বলে দাবী করেন তিনিই কিনা পাক হায়েনাদের কানট্রি ডিরেক্টর। এই লজ্জা রাখবো কোথায়। যাই হোক বিএনপির আসল চেহারাটা দেশবাসীর কাছে পরিষ্কার হল, সে জন্য পাকি হায়েনা হলেও আসাদ দুররানী ধন্যবাদ পেতেই পারেন, তিনি বাংলাদেশের রাজনীতির অনেক জটিল একটা সমীকরণ সহজে মিলিয়ে দিলেন। বিএনপি পন্থী মুক্তিযোদ্ধাদের নতুন করে ভাবার একটা সুযোগ করে দিলেন। দেশ মাতৃকার ওই সকল বীর সৈনিকদের কি উচিত না এই মানসিক যন্ত্রনা থেকে বেরিয়ে এসে আওয়ামী লীগের সাথে না হোক অন্তত একটা দেশ প্রেমিক প্লাটফর্ম নিয়ে পাক দোসরদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া ?

সন্মানিত ব্লগারদের অনুরোধ করছি যদি ফকরুল আলমগীরের মত আপনাদের ভারমুক্ত হবার কোন দায় না থাকে তাহলে দয়া করে আপনারাও পাকি সরকার কিংবা তাদের বাংলাদেশী দোসর খালেদার মত চুপ করে থাকুন। অযথা নির্লজ্জের মত বয়ান ছেড়ে আমাদের আর লজ্জা দিবেন না।