শরণার্থী ইস্যুতে ওআইসি, আরব লীগ চুপ কেন?

আহসান কামরুল
Published : 8 Sept 2015, 06:34 PM
Updated : 8 Sept 2015, 06:34 PM

যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ার শরণার্থীদের নিয়ে সারা বিশ্বে চলছে তোলপাড়। সবশেষে ইউরোপের সমূদ্রের একটি তীরে ছোট্ট শিশু আয়লান কূর্দির মৃত্যু নাড়া দিয়েছে বিশ্ববিবেককে। ইউরোপের বিভিন্ন দেশের যে নেতারা শরণার্থীদেরকে নিজেদের দেশে গ্রহন করার বিপক্ষে ছিলেন, ছোট্ট আয়লানের উপুড় হওয়া লাশ তাদেরকেও সিদ্ধান্ত পরিবর্তনে বাধ্য করেছে। তার ফলক্রমে গত শুক্রবার রাতে হাঙ্গেরি থেকে রওয়ানা হওয়া অনেক অভিবাসীকে প্রবেশাধিকার দিতে রাজি হয়েছে অস্ট্রিয়া, জার্মানি ও ব্রিটেন। আর অস্ট্রিয়া সীমান্তে পৌঁছাতে অভিবাসীদের জন্য বাসের ব্যবস্থা করেছে হাঙ্গেরি।

যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ায় নিরাপত্তাহীনতার কারণে মানুষ বাপ, দাদার ভিটা ছেড়ে, জীবনের ঝূঁকি নিয়ে নতুন বাসস্থানের সন্ধানে বেরিয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেও ওআইসি, আরব লিগ এ বিষয়ে কি কোনো বিবৃতি দিয়েছে? যুদ্ধের কবলে পড়ে গৃহহীন এ মানুষদের আশ্রয়ের জন্য পার্শ্ববর্তী তাদের সদস্য দেশকে কি তারা আহ্বান করেছে? আমার জানা মতে, এ বিষয়ে তারা কোনো বিবৃতি দেননি। যদি কোনো বিবৃতি তারা দিয়ে থাকেন, বিপন্ন মানবতা রক্ষায় যদি তারা পাশ্ববর্তী আরব দেশ সমূহকে আহ্বান করে থাকেন, তবে 'আরবপ্রেমী বাঙ্গালি মুসলমান'দেরকে তার লিংক দেয়ার জন্য অনুরোধ রইলো।

সিরিয়ার শরণার্থীরা জীবন বাঁচাতে স্বজাতিদের কাছে আশ্রয় না পেয়ে যখন ইউরোপে ছুটছেন, তখন তিন দিনের সফরে আমেরিকা গিয়ে একটি হোটেলের পুরোটাই ভাড়া নেন সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আব্দুল্ আজিজ। ২২২ রুমের হোটেলটির গাড়ি থেকে শুরু করে পার্কিং গ্যারেজের পিচ, রেড কার্পেট, লাইট, আলনা, টেবিল, টুপি সব কিছুই ছিলো স্বর্ণে মোড়ানো! এছাড়া একমাস আগে ফ্রান্সের রিভেরিয়া সমুদ্র সৈকতে ছুটি কাটানোর জন্য সৌদির বাদশাহ ১ হাজার লোক ভাড়া করেছিলেন, ও নিজের বহর নিয়ে ফূর্তি করতে পুরো সৈকত বন্ধ করে দেন!

অন্যদিকে নগ্ন ছবি তুলে আলোচিত হলিউডের অভিনেত্রী কিম কার্দেশিয়ানকে সৌদি'র রাজপুত্র এক রাতের জন্য মিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে হলেও পেতে চান! অথচ যুদ্ধের কবলে পড়ে বাসস্থান হারিয়ে জীবন বাঁচাতে শরণার্থী হওয়া মানুষদেরকে তারা আশ্রয় দিতে চান না। খাদ্যসংকটে পড়া মানুষদেরকে তারা খাবার দিতে নারাজ! আয়লান কুর্দি নামের শিশুর জন্যও তাদের মন খারাপ হয় না। কার্দেশিয়ানের 'বৃহৎ পশ্চাদ্বেশের স্পর্শের সূখ' পেয়েও বাঙ্গালি মুসলমানদের কাছে তারা ইসলামের সোল এজেন্ট, 'খাস সেবক'!

অভিবাসী সঙ্কট ইউরোপের না, এই সমস্যা আরব বিশ্বের। তবু ইউরোপের নেতারা ভিন্ন ধর্মের হয়েও মনুষ্যত্ত্ববোধের কারণে, মানবিক দিক বিবেচনায় তাদেরকে আশ্রয় দিতে পারলে আরবের নেতারা কেনো পারবেন না? সাধারণ মানুষ যখন বেঁচে থাকার সংগ্রামে ব্যস্ত, ইউরোপের ইহুদি, খ্রিষ্টানরা যখন মানবতার খাতিরে ঘরহারা মানুষদের আশ্রয়ে নিজেদের মিলিয়ন ডলার ব্যয়ের ঘোষণা দিচ্ছেন, ওআইসি, আরব লিগের নেতা, আরবের বাদশাহ, শেখ, যুবরাজরা তখন আনন্দ ফূর্তি, নায়িকাদের গোপনাঙ্গ দেখার জন্য মিলিয়ন ডলার খরচে ব্যস্ত! এরপরেও বাঙ্গালি মুসলমানরা তাদেরকে 'ইসলামের সেবক' মনে করবেন?

সিরিয়ার শরণার্থী মানুষদের আশ্রয় দেয়ার জন্য যুক্তরাজ্যের সরকারের কাছে চিঠি লিখেছেন বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত সেখানকার এম.পি টিউলিপ সিদ্দিকসহ আরো কয়েকজন। ওআইসি'র সদস্য দেশ হিসেবে বাংলাদেশের সরকার সিরিয়ার শরণার্থী মানুষদের আশ্রয় দেয়ার জন্য ওআইসি'র নেতৃত্বকে আহ্বান করতে পারেন। সম্ভব হলে আরব লিগের নীতিনির্ধারণী ফোরামে এ বিষয়ে প্রস্তাব পাঠানো যেতে পারে। কারণ, শরণার্থীদের দূর্দশার বাস্তবচিত্র বাংলাদেশের চেয়ে আর কে বেশি বুঝতে পারে? এরপরেও যদি তারা শরণার্থীদের আশ্রয় না দিয়ে স্বর্ণে মোড়ানো পাঁচ তারকা হোটেল আর হলিউডের নায়িকাদের গোপনাঙ্গ লেহনের পেছনে মিলিয়ন, বিলিয়ন ডলার খরচের প্রতিযোগিতায় মগ্ন থাকে, তবে তাদেরকে 'ইসলামের সেবক' না বলে একেকটা 'কুত্তার বাচ্চা' বললে কারো কোনো অনুভূতিতে আঘাত লাগবে না তো?

আহসান কামরুল
০৮.০৯.২০১৫ খ্রি.
ঢাকা।