পথশিশু আর অসহায়দেরকে নিজের পুরনো শীতবস্ত্র দিন

আহসান কামরুল
Published : 30 Oct 2015, 07:47 PM
Updated : 30 Oct 2015, 07:47 PM

বর্ষা প্রায় শেষ। এর মানে হলো আমাদের সামনে চলে এসেছে শীতে আগমনী বার্তা। শীত, সেতো এক মহানন্দের নাম! কারণ, গরমে এ জীবন অতিষ্ঠ হলেও শীত তার সম্পূর্ণ বিপরীত। খেজুরের রস, রসের তৈরি গুড়সহ আরো মজাদার কতো খাবারের নাম মনের পর্দায় ভেসে ওঠে শীতের বিষয়টি মনে হলে। গরমে পোষাকের বিড়ম্বনা থাকলেও শীতের সময় যতো খুশি পড়তে পারেন! আরামদায়ী বিভিন্ন পোষাক, যাতে শীতের তীব্রতা আমাদের শরীরে না লাগে…।

হ্যাঁ, শীতের তীব্রতা রোধে যখন আমরা নিজেদের শরীরে আরামদায়ক বিভিন্ন পোষাক জড়াই, তখন আমাদের চোখের সামনে একশ্রেণীর মানুষ, বিশেষ করে শিশুরা উদোম গায়ে রাস্তায় ঘোরাঘুরি করে, ঘুমিয়ে থাকে! সাধু ভাষায় আমাদের সমাজ এদেরকে 'গরিব, বা পথশিশু' বলে! দারিদ্রের কারণে তাদের মা, বাবা শীতের তীব্রতা থেকে বাঁচাতে তাদেরকে কোনো পোষাক কিনে দিতে পারেন না। অনেকের আবার এই মা, বাবাটাই নেই। তাই তাদের এ অবস্থা…।


যে বয়সে তাদের থাকার কথা স্কুলে, পাওয়ার কথা সবার ভালোবাসা আর আদর, বিকেলবেলা মায়ের হাতে গরম কাপড় পড়ে খেলতে যাওয়ার কথা, তারা সেটা না পেয়ে গরম কাপড়হীন অবস্থায় পড়ে থাকে রাস্তায়। আপনার, আমার দায়িত্ব রয়েছে এ শিশু, আর দরিদ্র মানুষগুলোর ওপর। আমাদের একটুখানি সদিচ্ছাই পারে তাদেরকে এ কষ্টের অবস্থা থেকে উত্তরণ করতে।

ভাবছেন কীভাবে সম্ভব এটা? টাকা, পয়সা দিয়ে তাদেরকে সহায়তা করার বিষয়? না, টাকা-পয়সার সরাসরি লেনদেনে আমরা যাচ্ছি না। কারণ, উপকার করতে গিয়ে এতে অনেক নেগেটিভ বিষয়ের আশঙ্কা আছে। সো, আমরা চাচ্ছি আরো সহজ একটা বিষয়ের মাধ্যমে 'গরীব, পথশিশু', বা শীতবস্ত্র কিনতে অক্ষম, সামর্থহীন মানুষদেরকে সরাসরি শীতবস্ত্র বিতরণ করতে। যেমন ধরুন, আপনার, আমার বাসায় প্রয়োজনের তুলনায় বেশি, বা অপ্রয়োজনীয় পুরনো জামা, কাপড় আছে। সেগুলো যদি আমরা ঘরে ফেলে না রেখে এ শিশু, বা সামর্থহীন মানুষদের দেই, তবে আমাদের এ অপ্রয়োজনীয় পোষাকের মাধ্যমে তারা নিজেদেরকে শীত থেকে রক্ষা করতে পারবেন।

আমরা চাই, টাকা-পয়সার সরাসরি লেনদেনে না গিয়ে আপনাদেরকে নিয়ে একটা সমন্বিত প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে আপনার বাসায় থাকা পুরনো পোষাক, বা আপনি চাইলে নতুন পোষাক, শীতের সময়ে শরীরে দেয়ার জন্য বিভিন্ন লোশন, ক্রিম ইত্যাদি কিনে সরাসরি তাদেরকে দিতে পারেন। এ ক্যাম্পেইনের আয়োজক 'মমতাজ-কালাম ফাউন্ডেশন' এর ফেসবুক পেজে মেসেজ করে আমাদেরকে কনফার্ম করে আপনি আপনার অপ্রয়োজনীয় পোষাকগুলো কুরিয়ার, বা অন্য কোনো সহজ মাধ্যমে দিতে পারেন। আপনার পোষাক, বা শীত নিবারণের অন্যান্য বস্তুগুলো পেলে তার আপডেট ফেসবুকসহ অনলাইনের বিভিন্ন মাধ্যমে আমরা জানাবো। সেই সঙ্গে নির্ধারিত স্পটে (আলোচনা সাপেক্ষে) পোষাক, বা শীত নিবারণের অন্যান্য বস্তুগুলো বিতরণের সময় আপনি যদি সেচ্ছাসেবক হিসেবে আমাদের সঙ্গে থাকতে চান; নাম, পরিচয়, আর মোবাইল নম্বরসহ তাও আমাদেরকে জানান। বিতরণের নির্ধারিত সময়ের আগে আমরা আপনাকে নক করবো।

এছাড়া আপনি যদি চান, আপনার এ বাড়তি পোষাক আপনার পাশের কোনো দরিদ্র শিশু, বা গরিব কাউকে দান করে তাদের মুখে হাসি ফোটাবেন, তবে সেটাও পারেন। সেক্ষেত্রে, পোষাক বিতরণের সময়কার ছবি, আপনার পরিচয়, স্পটের নাম, ঠিকানা আমাদেরকে মেসেজ করুন। ফেসবুকসহ বিভিন্ন মাধ্যমে আমরা সেটা প্রকাশ, প্রচার করবো। কারণ, এ ক্যাম্পেইনের উদ্দেশ্য হচ্ছে শীতে কিছু সংখ্যক হলেও অসহায় মানুষের কষ্ট মোচন করা। মনে রাখবেন, এটা কোনো ধরণের আত্নপ্রচারণার বিষয় না, মূলত: আপনার এ মহৎ কাজের ছবি দেখে যাতে মানুষের পাশে আরেকজন এসে দাড়ায়, এজন্যই আমরা আপনার ছবি প্রমোট করবো।

সুতরাং এখনই আপনি, আপনার বন্ধু ও পরিচিতজনদের সঙ্গে বিষয়টির শেয়ার করে সামনের শীতে মানুষের সেবায় আমাদের সঙ্গে থাকতে পারেন। আগেভাগে এ পদক্ষেপের কারণ, এ শীতে গরমের কাপড় দিয়ে কমপক্ষে ৫০০ মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে চাই আমরা। কয়েকজনের মুখে হাসি ফোটাতে আমার অপ্রয়োজনীয় পোষাকের তালিকা করে ফেলেছি, এবার আপনার পালা…।

আহসান কামরুল
২৫.১০.২০১৫ খ্রি.
ঢাকা।