ছাত্র জীবন থেকে সাংবাদিকতা পেশার সঙ্গে যুক্ত থাকার কারণে অনেক পুলিশ সদস্যদের সঙ্গেই অন্তরঙ্গতা সৃষ্টি হয়েছে। তা পুলিশের একজন কনস্টেবল থেকে শুরু করে কর্মকর্তা পর্যন্ত রয়েছেন। অনেকের সঙ্গে বন্ধুত্ব। বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টিং জীবনে ক্যাম্পাসে দায়িত্ব পালনকারী বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য, এমনকি থানা পুলিশের অনেকের সঙ্গেই ভাব জমেছিল। দেশের বিভিন্ন জায়গায় অবস্থানকারী এসব পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে আজও টুকটাক যোগাযোগ অব্যাহত আছে। রাজধানীতে নতুন করে ভাবের সৃষ্টি হয়েছে অনেক পুলিশ সদস্যের সঙ্গে। তাদের মধ্যে অনেকেই বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের বন্ধু, অনেকে আছে সরাসরি আমার বিভাগেরও। পেশাগত জীবনে তারা প্রায় সবাই তথ্য দিয়ে সহযোগীতা করছে।
মনে পড়ছে, ওয়ান ইলেভেনের সময় পুরান ঢাকার কোর্টকাচারি এলাকায় দায়িত্ব পালন কালে দাঙ্গা পুলিশ ধেয়ে আসছিল আমাদের একদল সাংবাদিকদের লাঠিপেটা করার উদ্দেশ্যে। তখনও আমরা বিশ্ব বিদ্যালয়ের ছাত্র। অনেকের মেজাজ চওড়া। কারও কারও চেষ্টা ছিল প্রতিরোধ করার। সেদিন কোতয়ালী থানার তৎকালীন ওসি কামরুল ভাই (এখন সম্ভবত মুন্সিগঞ্জের এএসপি) আমাদের রক্ষা করেছিলেন। জড়িয়ে ধরে বলেছিলেন-ওরা আমার সাংবাদিক ভাই। ওদের মের না। বিভিন্ন সময়, বিভিন্ন জায়গায় পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নানাভাবে পুলিশের সহযোগীতা নেই। অনেক সংঘর্ষের সময় পুলিশের আশ্রয়ে নিজেকে নিরাপদ করি। পুলিশ সোর্সের মাধ্যমে পাওয়া গুরুত্বপূর্ণ অনেক তথ্য দিয়ে নিউজ তৈরি করে নিজের চাকরিটাও রক্ষা করি।
তবে গত কয়েক দিনে এ কী দেখছি? মনে হচ্ছে গণমাধ্যম কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের একটি লড়াই চলছে। পুলিশকে গণমাধ্যম কর্মীদের প্রতিপ বানিয়ে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেওয়া হচ্ছে। মনে হচ্ছে সু-পরিকল্পিতভাবেই এটা করা হচ্ছে। এর জন্য পুলিশের অতি উৎসাহী কিছু সদস্য ও গণমাধ্যম কর্মীদেরও অতি উৎসাহী কোন সদস্য থাকতে পারে। তা না হলে এমন হবে কেন?
দু'টি ঘটনার কথা বলি-৮ মে শুক্রবার ধানমন্ডির ২ নম্বর সড়কে ইন্ডিপেন্ডেন্ট পত্রিকার সাংবাদিক বিভাস দাকে গাড়িতে চাপা দিয়ে হত্যার দিন কী হয়েছিল? সহকর্মী হারিয়ে সাংবাদিকরা হয়তো কিছুটা উত্তেজিত ছিলেন। এ উত্তেজনা থামাতে ওসি মনিরুজ্জামানের ফাঁকা গুলি পর্যন্ত করতে হলো কেন? আর কি অন্য কোন পথ ছিল না ? সাংবাদিক আর পুলিশকে মুখোমুখি করার জন্যই কি সেদিন এটা করা হয়েছিল? ফাঁকা গুলির নির্দেশ কোথায় থেকে এসেছিল? এসব ওসিদের কারণে পুলিশ আর গণমাধ্যম কর্মীদের মধ্যে বৈরীভাব চলতেই থাকবে?
অপর ঘটনাটি ১৬ মে- পুরান ঢাকার আদালত পাড়ায়। বিএনপি নেতাদের প্রিজন ভ্যানে উঠাচ্ছে পুলিশ। সাংবাদিকরা ছবি তুলতে গেলেন। বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা সেখানে বিক্ষোভ করলো। পুলিশ পিটুনি দেওয়া শুরু করলো। রেহাই পেলনা সাংবাদিকরাও। এর কিছু প্রতিবাদ করাতেই পুলিশের পায়ের বুট ওঠে এলো সাংবাদিকদের বুকে! পুলিশের এরা কারা, যারা দায়িত্ব পালন কালে সাংবাদিক চেনেন না। তবে আদালত এলাকায় সাংবাদিক নির্যাতনকারী এসব পুলিশ সদস্যদের মুখ চেনা গেলেও নাম জানা যায়নি। নির্যাতনের সময় অনেকের বুকে নাম ফলকও ছিল না।
আসলে সাম্প্রতিক কিছু ঘটনায় মনে হচ্ছে পুলিশে এরা কারা? এরা কি পুরো বাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করছে না। পুলিশ বনাম গণমাধ্যম কর্মী; পক্ষান্তরে গণমাধ্যম কর্মীদেরকে গণতান্ত্রিক সরকারের বিরুদ্ধে এভাবে কি উস্কে দেওয়া হচ্ছে না? যাদের ভাবা প্রয়োজন, তারা বিষয়টি নিয়ে ভাববেন কি?
১৮ মে, ২০১২