অস্থিরতা: প্রেক্ষাপট ও ভিত্তি

কাওসার জামান
Published : 23 Oct 2014, 08:59 AM
Updated : 23 Oct 2014, 08:59 AM

আওয়ামীলীগ আন্দোলন করে দেশকে স্বাধীন করেছে। আওয়ামীলীগ প্রধান বঙ্গবন্ধু ফাঁসির কাষ্ঠে গিয়েও তুলেছেন এদেশের মুক্তির দাবী। পাশবিক শক্তিকে হারিয়ে আনা আমাদের এই জয় ছিলো পরাশক্তি আমেরিকার জন্য এক বিরাট ধাক্কা। তাই আওয়ামীলীগ ও বঙ্গবন্ধুকে শেষ করে দিতে হবে – কার স্বপ্ন ছিলো এটা? স্বাধীনতাযুদ্ধে যে অশুভ শক্তি পরাজিত হয়েছিলো তাদের। তারা কারা? হানাদার পাকিস্তান, তাদের প্রভু সাম্রাজ্যবাদী আমেরিকা, চীন, সৌদি বাদশা আর পাকিস্তানিদের এদেশীয় সহযোগী দালালেরা।
পুঁজিবাদী দানব মানবতার শত্রু আমেরিকা তো নিজের এমন অপমান ও স্বার্থহানি মানবিক ঔদার্য দিয়ে গ্রহণ করে নিতে পারে না। তাই আঘাত তাকে করতেই হয়েছে স্বাধীনতার মহানায়ক বঙ্গবন্ধুর উপর। আর তার আগে ওরা তাদের দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে আঘাত হানার প্রেক্ষাপট তৈরী করতে লাগলো। ত্রাণবাহী জাহাজ ফিরিয়ে নিলো আমেরিকা, পাকিস্তানি এজেন্ট ও রাজাকারেরা সন্ত্রাস ও মজুতদারীর মাধ্যমে দেশে অস্থিরতা তৈরি করলো। এই সেই আমেরিকা যারা শুধু মতের অমিলের জন্য খুন করিয়েছিলো চিলির নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট আলেন্দেকে। যারা লাদেনকে নিজেদের স্বার্থে ধর্মের নামে উন্মাদ বানিয়ে রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে অস্ত্র ও অর্থ দিয়ে সাহায্য করেছিলো বছরের পর বছর আবার স্বার্থোদ্ধারের পর সেই লাদেনকে সন্ত্রাসী উপাধি দিয়ে ১০ বছর ধরে খোঁজে বের করে খুন করেছে মুহুর্তের মধ্যে। আমেরিকা নিজ স্বার্থে যুগে যুগে বিভিন্ন দেশে গণতান্ত্রিক সরকারকে উৎখাত করে সামরিক একনায়কদের ক্ষমতায় বসিয়েছে বিভিন্ন হুজুগ তোলে বা ধর্মের নাম বেঁচে। বঙ্গবন্ধুকে খুন করে এক সামরিক স্বৈরাচারকে তেমনি বসিয়েছিলো বাংলাদেশেও। সেই স্বৈরাচার ছিলো জিয়া। আমেরিকার সেবাদাস হয়ে তাদের ইচ্ছে পুরন করেছিলো অনিচ্ছায় যুদ্ধে যাওয়া ধূর্ত জিয়া। তার ছিলো শক্ত পাকিস্তানি যোগাযোগ। তাই ক্ষমতায় এসেই তার প্রথম কাজ ছিলো পাকিস্তানি এজেন্ট রাজাকারদের সবক্ষেত্রে পুনর্বাসন করা, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী ও এমপি বানানো যাতে তার পাকিস্তানি ও আমেরিকান প্রভুরা খুশি হয়ে তার অবৈধ ক্ষমতা দখলকে স্থায়ী ভিত্তি দেয়। ঐ অন্ধকার যাত্রায় দালাল জিয়া দেশের সব কিছুকে পাকিস্তান – মুখী করে তুলেছিলো। পাকিস্তান ছিলো তার সকল কর্মের নির্দেশদাতা। সেই পাকিস্তান যে পাকিস্তান মাত্র ৪ বছর আগে আমাদের ৩০ লাখ নিরীহ মানুষকে খুন করেছিলো, লাখো নারীর ইজ্জত নষ্ট করেছিলো, আমাদের দেশকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছিলো আর যাদের থেকে মুক্ত হতে এদেশের ৯৮% মানুষ প্রাণপণ লড়াই করেছিলো। মজার বিষয় হলো এই জিয়াকেই মুক্তিযোদ্বা বলার মতো মূর্খও আছে এই দেশে। যে জিয়া পাকিস্তানি জাহাজ সোয়াত থেকে বাঙ্গালিদের মারার জন্য বয়ে আনা অস্ত্র খালাস করতে বন্দরে গিয়েছিলো ৭১ এর ২৪ শে মার্চ আর পাবলিকের দৌড়ানি খেয়ে ভেগে এসে পরে যুদ্ধে যোগ দিয়েছিলো নিজের ধূর্ত বুদ্ধি দিয়ে বাস্তবকে অনুভব করে সেই জিয়াই দুর্নীতির রাণি গোলাপি ও ধর্ম ব্যাবসায়ীদের রাজনৈতিক খুঁটি, তাও লাখো শহীদের রক্তভেজা এই মাটিতে। বিশ্বাস করা কঠিন যে এটা ২১ শতকের বাংলাদেশ, মধ্যযুগের বাংলা নয়।
বিচিত্র এই বঙ্গভূমি। সেই অধার্মিক জিয়া ধর্মকে কুটিল কৌশলে রাজনীতিতে ব্যবহার করেছিলো, সন্ত্রাসকে রাষ্ট্রীয় ভিত্তি দিয়েছিলো, জেল থেকে সব খুনী যুদ্ধাপরাধী ও ডাকাতদের ছেড়ে দিয়ে ক্যান্টনমেন্টে জন্ম নেয়া নিজের বিজাতীয় জোড়াতালির দলে টেনে নিয়েছিলো। দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী ঐ মহা অভিশাপ জিয়ার হাত থেকে দেশকে বাঁচাতে ১৮ বার বিদ্রোহ করে হাজারে হাজারে প্রান দিয়ে ১৯ তম বার সফল হয়েছিলো। এই মুনাফেক জিয়াই মুক্তিযুদ্ধে কপালে গুলি খাওয়া দেশের শ্রেষ্ঠতম বীরদের একজন খালেদ মোশাররফ, পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধা তাহের ও হায়দার সহ শত শত মুক্তিযোদ্ধা সৈনিকের নির্মম খুনের জন্য দায়ী। অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী খুনী জিয়ার সেইসব অপকর্মের কুফল আজো ভোগ করছে দেশ। তাই নরকবাসী জিয়ার নষ্ট দল ও ভ্রষ্ট পরিবারকে এর মুল্য দিতেই হবে।