আহারে ‘গণতন্ত্রী’!

কাওসার জামান
Published : 9 Jan 2015, 08:14 AM
Updated : 9 Jan 2015, 08:14 AM

গনতন্ত্রপ্রেমীর বেশধারী কিছু সুবিধাবাদীর কান্না দেখে মাছের মাও লজ্জা পাচ্ছে। ঐ গনতন্ত্রকামীরা কি নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর দিতে পারবে?

কোন্ গণতন্ত্র বলেছিল বিরোধিতার কদর্য রূপ দেখিয়ে বিরোধী দলীয় নেত্রীকে গ্রেনেড ছুঁড়ে মেরে ফেলার চেষ্টা করতে? কোন্ গণতন্ত্র খালেদার কুপুত্র তারেককে হুকুম করেছিল নিরীহ ২৪ জন মানুষকে খুন করতে, ৪ শতাধিক মানুষকে পঙ্গু করে দিতে, সেই হামলাকারীদের বাঁচাতে জজ মিয়া নাটক রচনা করতে? ধর্ম ব্যবসায়ী খালেদা কোন্ গণতন্ত্রের অধীনে কিবরিয়া, আহসানউল্লা, মঞ্জুরুল ইমাম সহ শতাধিক জনপ্রিয়, পরিচ্ছন্ন ইমেজের আওয়ামীলীগ নেতাকে হত্যা করেছিল?

কোন্ গণতন্ত্র খালেদার পালিত জংলিদের লাইসেন্স দিয়েছিল বিনা বিচারে হাজার হাজার নির্দোষ সাধারণ মানুষকে বোমা মেরে, গাছে ঝুঁলিয়ে, পিটিয়ে খুন করতে, আদালতগুলোতে বোমা ফাটিয়ে বিচারকদের হত্যা করতে, ৬৩ টি জেলায় একসাথে বোমা ফাটিয়ে জনআতঙ্ক তৈরী করতে আর থানায় ওসির চেয়ারে বসে জামাই আদর নিতে? কোন্ গণতন্ত্রীরা বলেছিল এই বোমাবাজ জংলিরা মিডিয়ার সৃষ্টি?

লেখক হুমায়ুন আজাদ যখন খালেদার পোষা জানুয়ারদের নৃশংস বর্বরতার শিকার হয়ে সিএমএইচে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন তখন তাঁকে দেখতে যাওয়া শেখ হাসিনার গাড়িবহরকে কোন্ গণতন্ত্র বাঁধা দিয়েছিল? গাড়ি রেখে যখন হাসিনা ৫ কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে সিএমএইচে পৌঁছালেন তখন কোন্ গণতন্ত্র তাঁকে গেটে আটকে দিয়েছিল? হাসিনা অবশ্য তখন কোনো মহিলা পুলিশকে ছাগলনাইয়ার ছাগী বা বগুড়ার বগী বলে চিহ্নিত করেননি।

আওয়ামী লীগ অফিসে ঢুকে নেতা-কর্মীদের নির্বিচারে পিটানো, শব্দদুষণের কথা বলে আওয়ামী লীগের জনসভার মাইক কেড়ে নেয়া কিংবা তাজউদ্দিনের ছেলে সোহেলকে মেরে আহত করা কোন্ গণতন্ত্রের ভাষা ছিল? কোন্ গণতন্ত্র প্রেসক্লাবের ভিতর সাংবাদিকদের উপর পুলিশী হামলা চালিয়েছিল, জনপ্রিয় টিভি চ্যানেল 'একুশে'কে বন্ধ করে দিয়েছিল আর ২০০২ এ দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ১০৩২টি গুমের রেকর্ড সৃষ্টি করেছিল?

কোন গণতন্ত্র ময়মনসিংহের এক সিনেমা হলে জেএমবির বোমা হামলার জন্য ইতিহাসবিদ মুনতাসীর মামুনকে চরম নির্যাতন করা বা বুয়েট ছাত্রী সনিকে খুন করার অনুমতি দিয়েছিল? অধ্যক্ষ মুহুরী, সাংবাদিক বালু সাহা সহ অসংখ্য পেশাজীবিকে হত্যা করা কিংবা ৫৪ জন সুস্থ সাধারণ মানুষকে ধরে নিয়ে মেরে ফেলে হার্ট অ্যাটাকের রোগী বানানো আর সেই খুনীদের দায়মুক্তি দেয়া কোন্ গণতন্ত্রের কাজ ছিল?

কোন্ গণতন্ত্র দেশের সাংবিধানিক প্রশাসনের বিপরীতে হাওয়া ভবনের মগের মুল্লুকীয় খাম্বা শাসনের জন্ম দিয়েছিল? বিদেশে পাচার করা জনগনের টাকা আটকিয়ে, ফেরত পাঠিয়ে সিংগাপুরের মতো সুশাসিত দেশ তারেক-কোকোকে যে লজ্জা দিয়েছিল বা এফবিআই এর তদন্তে যে ঘুষের টাকা ধরা পড়েছিল তা কোন্ গণতন্ত্রের অবদান?

মতিয়া চৌধুরীর মতো ত্যাগী প্রবীণ নেত্রীর মাথা ফাটিয়ে দেয়া, বৃদ্ধ সাংবাদিক জহিরের মুখে পুলিশী ঘুষি মারা, অভি-নীরু-ইলিয়াস-বাবুল-জালালদের মতো হাজারো ঘৃণ্য সন্ত্রাসীর জন্ম দেয়া, দেশের প্রথম সামরিক স্বৈরাচার জিয়ার খুন-গুম সহ সব অপকর্মকে হজম করে নেয়া, আগে পাপ করা আর পরে এর দায়মুক্তি দেয়ার সংস্কৃতি চালু করা – কোন্ গণতন্ত্রে সংঘটিত হয়েছিল?

কোন্ গণতন্ত্র খালেদাকে কালো টাকা উপার্জনের সুযোগ করে দিয়েছিল জরিমানা দিয়ে যা সে সাদা করেছে? ফালু- লালু-দুলু-বুলু-বাবর-পটলরা জনগণের সম্পত্তিকে নিজেদের ক্ষেতের আলু মনে করে লুটে-পুটে খেয়েছিল কোন্ গণতন্ত্রে? হ্যাঁ-না ভোটের প্রহসন, ভোট ডাকাতির মাগুরা নির্বাচন, দলীয় লোককে প্রধান উপদেষ্টা বানানোর জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে বিকৃত করা কোন্ গণতন্ত্রের দেয়া উপহার?

স্বাধীনতার মহানায়ক, স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধু এবং তাঁর পরিবারের নারী ও নিষ্পাপ শিশুদের খুন করা, সেই খুনের বিচার বন্ধ করে রাখা, বঙ্গবন্ধু হত্যার পর তাঁর দলের নেতাদের জেলে নিয়ে গুলি করে মেরে ফেলা, হাজারো আওয়ামীলীগ নেতা-কর্মীকে বছরের পর বছর বিনা বিচারে জেলে আটকে রেখে নির্যাতন করা, চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের পুনর্বাসন করা কোন্ গণতন্ত্রের চর্চা ছিল?

২১শে আগষ্টের জাঙ্গলিক গ্রেনেড হামলায় হাসিনা প্রায় মারাই গিয়েছিলেন। আল্লার ইচ্ছায়, নেতাদের ত্যাগ ও ভালোবাসায় তিনি বেঁচে যান। অশিক্ষিত খালেদা-তারেকের মতো প্রতিশোধপরায়ণ নন বলে হাসিনা এই আক্রমণ ফিরিয়ে দেন নি। তিনি খালেদাকে নির্বিঘ্নে সভা করতে দিয়েছেন বারবার। ছাত্রলীগ খালেদার উপর কোনো গ্রেনেড হামলা করে নি। ফেরারী আসামী, বেয়াদব তারেকের ক্ষমা না চাওয়া পর্যন্ত খালেদার সভা প্রতিরোধের ঘোষনা দিয়েছে মাত্র।

উল্লেখ করা দরকার যে, বালুর ট্রাকের চিপায় খালেদাকে ফেলে রাখা অভিনন্দনযোগ্য কোনো কাজ নয়। কিন্তু অপরাধ সংঘটনে বাঁধা দেয়া, সাধারণ মানুষের জান-মাল রক্ষা করা সরকারের সবচেয়ে বড়ো দায়িত্ব। সেই প্রেক্ষাপটে, খালেদাকে বেরুতে না দেয়া শুধু যুক্তিযুক্তই ছিল না, প্রয়োজনীয়ও ছিল। সরকারের ঐ পদক্ষেপে সংখ্যাগরিষ্ঠ সাধারণ মানুষের যে সমর্থন ছিল খালেদার আকুল আহবান উপেক্ষা করে তারা তা প্রমাণ করেছে।

যে তথাকথিত আন্দোলনের ভিত্তিই হল বোমা মেরে, আগুন লাগিয়ে নিরীহ মানুষ খুন করা, জনগনের সম্পত্তি নষ্ট করা, মানুষকে ভয় দেখিয়ে হরতাল মানতে বাধ্য করা তা কখনো রাজনীতি নয়, অপরাধ। ক্ষমতালোভী খালেদা যাতে বরাবরের মতো সেই অপরাধগুলিতে উস্কানি দিতে না পারে সেই জন্য তাকে আটকে রাখা কোনভাবেই গণতন্ত্র বহির্ভুত নয়।

কেন আন্দোলনের নামে ভন্ডদের এই কাপুরুষোচিত সন্ত্রাস? দুর্নীতিবাজ, বেপর্দা, বিলাসী খালেদা ও তার চোর, বখাটে পুত্রদের ক্ষমতায় বসানোর জন্য, যুদ্ধাপরাধী রাজাকারদের বাঁচানোর জন্য।
মুখে তারা যে নির্দলীয় সরকারের কথা বলে কে সেই ব্যবস্থাকে দলীয়করণ করে নষ্ট করেছিল? কে ইয়েসুদ্দিনকে প্রধান উপদেষ্টা বানিয়েছিল? এই খালেদা।

তারপরও দাবী যাই হোক, আন্দোলন করতে হলে নিজেরা করবে, রাস্তায় শুয়ে অনশন করে নিজেদের জীবন দিবে। যেসব মানুষ তাদের দাবীর পক্ষে নেই, যারা হরতালে গাড়ি নিয়ে বের হয়, দোকান খুলে তাদের উপর কেন আক্রমণ করা হয়? কোন্ গণতান্ত্রিক অধিকারে তাদের খুন করা হয়? কেন অনিক ও হৃদয় নামের দুটি কিশোরকে বোমায় পুড়তে হল?

ভোটাররা যাতে ভোট দিতে না পারে সেই জন্য খালেদা-নিজামীর কাপুরুষ সন্ত্রাসীরা গত নির্বাচনকালে ভোটারদের ভয় দেখিয়েছে, নির্বাচনী কর্মকর্তা ও পুলিশ সহ ২৬ জনকে খুন করেছে, ৫৪৬ টি ভোটকেন্দ্র পুড়িয়েছে, এমনকি ভোট দিয়ে আসা ভোটারকে পিটিয়েছে। কোন্ গণতন্ত্র এটা করতে বলেছিল? এখন আবার এই সন্ত্রাসীরাই বলছে, নির্বাচনে জনমতের প্রতিফলন কম ছিল। ভন্ডামি আর কাকে বলে!

নির্বাচনে ভোট দিতে বাঁধা দেয়া কি অগণতান্ত্রিক কাজ নয়? তেমনি কাউকে ভোট দিতে বাধ্যও করা যায় না। একইভাবে নির্বাচনে প্রার্থী হতে কাউকে যেমন বাঁধা দেয়া যায় না তেমনি কাউকে প্রার্থী হতে বাধ্যও করা যায় না। নির্বাচনে ভোট দেয়া না দেয়া, প্রার্থী হওয়া না হওয়া সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও দলের একান্তই নিজের ইচ্ছা ও অধিকার। সরকার কাউকে নির্বাচনে অংশ নিতে বাঁধা দেয় নি বরং অংশ নিতে ডেকেছে। তাই যারা অংশ নেয় নি তারা শুধু নিজেদেরই দায়ী করতে পারে।

কে অংশ নিলো না বা কয়টা ভোট পড়লো তার উপর নির্বাচনের বৈধতা মোটেও নির্ভরশীল নয়। পশ্চিমা বিশ্বের অধিকাংশ নির্বাচনে ২৫% থেকে ৪০% ভোট পড়ে। নির্বাচন হয় সাংবিধানিক আইন অনুযায়ী। কোনো প্রার্থী যদি মাত্র ১০০০ ভোটও পায় আর তা অন্য সব প্রার্থীর একক ভোটের চেয়ে বেশি হয় তবে সে হবে বৈধ বিজয়ী। আবার কোনো আসনে যদি একজনের বেশি প্রার্থী না থাকে তবে ঐ একক প্রার্থীই নির্বাচিত হবে। কাউকে জোর করে ধরে এনে প্রার্থী বানানোর কোনো আইন তো নেই। কিছু আঁতেল বালিকাদের মতো অভিমানাহত হয়ে দুঃখ প্রকাশ করে ভোট দিতে পারে নি বলে। তারা কি বলতে চাইছে, যেখানে একক প্রার্থী ছিল সেখানে জোর করে আরো কিছু লোককে প্রার্থী বানানো উচিত ছিল? তাহলে তারা নিজেরাই কেন প্রার্থী হয় নি?

বলার অপেক্ষা রাখে না যে, ৫ই জানুয়ারীর নির্বাচন ছিল পুরোপুরি বৈধ। এর ম্যাধ্যমে ঘটিত সরকারও পুরোপুরি বৈধ ও গণতান্ত্রিক। পুরো মেয়াদ পুরন করার সম্পূর্ণ অধিকার রয়েছে তাদের। সরকারের বিরুদ্ধে অপতৎপরতা চালানো দুর্নীতিবাজ ও যুদ্ধাপরাধীদের প্রতিহত করা তাই জরুরী, উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখার জন্য।