আগস্ট মাসে আমরা বঙ্গবন্ধুকে হারিয়েছি। তাই এ মাস অনেককে সেই বেদনাবিধুর ঘটনার পূর্বাপর নিয়ে ভাবার, কথা বলার অনুপ্রেরণা দিতেই পারে। একে অপ্রাসঙ্গিক মনে করা মানে সত্যকে লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করা।
আওয়ামীলীগের এক নেতা বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রেক্ষাপট তৈরীর জন্য জাসদের তৎকালীন হঠকারিতা, সন্ত্রাস, রাহাজানি ও লুটপাটকে দায়ী করে বক্তব্য দিয়েছেন। পরদিন সুযোগ বুঝে বিএনপি নামের দলটির মুখপাত্র আওয়ামীলীগের ঐ নেতার সুরে সুর মিলিয়ে কথা বলেছেন।
জাসদ জানতে চেয়েছে, আওয়ামীলীগ নেতা ও বিএনপির মুখপাত্রের অভিন্ন ভাষায় কথা বলার যোগসূত্র কী। বক্তব্যের বিষয় নয়, বক্তব্যে কেনো মিল থাকলো সেটা ইস্যু হয়ে গেলো! আওয়ামীলীগ ও বিএনপি যদি একসাথে বলে যে, সূর্য পূর্বদিকে উঠে তাহলে কি সূর্যের পূর্বদিকে উঠার ব্যাপারটা মিথ্যা হয়ে যাবে?
কোনো সন্দেহ নেই যে, বিএনপি উল্লেখিত বিষয়ে আওয়ামীলীগ নেতার সাথে কণ্ঠ মিলিয়েছে নিজেদের পিঠ বাঁচাতে, বঙ্গবন্ধুর মূল খুনি জিয়াকে আড়াল করতে। কিন্তু বিএনপি যে কারণেই বলে থাকুক, তাতে জাসদের ঐ কলঙ্কিত কর্মকান্ড শুদ্ধ হয়ে যাবে না। সত্য যেই বলুক, তা সত্য, এমনকি শত্রু বললেও।
জাসদ যে সদ্য স্বাধীন যুদ্ধবিধস্ত বাংলাদেশকে খেলার পুতুলে পরিণত করে মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তির হাতে তুলে দিয়েছিল সেই সত্য ইতিহাস চিরদিনই ধরে রাখবে। আওয়ামীলীগ জোটসঙ্গী করেছে বলে কি জাসদের অপকর্ম ভুলে যেতে হবে? তা নিয়ে কথা বলা যাবে না? মামাবাড়ির আবদার!
স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বড় ক্ষতি ছিল বঙ্গবন্ধুকে হারানো। এতে করে আমরা শুধু ব্যক্তি বঙ্গবন্ধুকে হারাই নি, আমাদের সব অর্জনকে হারিয়েছিলাম।
বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছে অবশ্যই রাজাকার ও তাদের প্রভুরা। ভুলে যাচ্ছি না যে, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরিকল্পনার কথা খুনি ফারুক আগেই জিয়াকে জানায়। জিয়া তাকে সমর্থন করে। ফারুক ১৯৭৫ এ বিবিসির সাথে সাক্ষাৎকারে নিজেই এটা বলেছে।
কিন্তু খুনিদের এ কাজ করার সাহস হয়েছিল জাসদ নামের অভিশপ্ত দলের সীমাহীন রাহাজানি আর সন্ত্রাসের কারণে। যুদ্ধ পরবর্তী সময়ের ভয়াবহ বিপর্যয় ও নানা আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে বঙ্গবন্ধু যখন গরীব বাংলাদেশকে নিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে চেষ্টা করছিলেন তখন কতিপয় সন্ত্রাসী জাসদ নামের দল ও গণবাহিনী নামের সন্ত্রাসী গ্রুপ তৈরী করে জেনে-শুনে দেশ ও বঙ্গবন্ধুকে বিপদে ফেলেছিল। সেই পথ ধরেই স্বাধীনতাবিরোধীরা বঙ্গবন্ধুকে খুন করে।
আজ কোথায় জাসদ? বিএনপি? জামাত? এমনকি আওয়ামীলীগও যদি বঙ্গবন্ধুকে ভুলে যায় তবুও বঙ্গবন্ধু নামের উজ্জ্বলতম নক্ষত্রের আলো কখনো ম্লান হবে না।
বঙ্গবন্ধুকে খুন করার পথ তৈরী করে দিয়ে জাসদ যে ভুল করেছে অন্য কোনো কিছুই তা ঢেকে দিতে পারবে না। সরকারের বিরোধিতা করা মানে কি ঈদের জামাতে গুলি করে এমপিকে খুন করা? সরকারী গুদাম লুট করা?
সত্যি হলো – ইনু, জলিল, রব, সিরাজদের ভন্ডামি ও সন্ত্রাসের ফলে সৃষ্ট বিপর্যয় আমাদের জাতীয় জীবনে যে ক্ষত তৈরী করেছিল তা আজো শুকায় নি। জাসদকে তাই এর যথোচিত দায়ভার বহন করে যেতে হবে।