শান্তিনগর মুসলিম জাতীয় এতিমখানা এবং কিছু গোপন কাহিনী

কারজন কামাল
Published : 5 April 2011, 05:45 PM
Updated : 5 April 2011, 05:45 PM

বাংলাদেশে মসজিদ মাদ্রাসা কেন্দ্রিক যেসব প্রতারণা হয় তার প্রায় সবটুকুই থেকে যায় আমাদের অজানা।আজ এমন কিছু তথ্য নিয়ে এখানে লিখতে বসেছি যা শুনে অনেকেই অবাক হবেন।একেবারে কাছ থেকে শুরু করি।ঢাকার শান্তিনগর বাজার মুসলিম জাতীয় এতিমখানা এবং বাজার মসজিদ অনেকেই চেনেন।অনেকেই এখানে হাত খুলে দান করেন মসজিদ-মাদ্রাসার উন্নয়ন এবং মাদ্রাসার এতিম ছাত্রদের ভরণ-পোষণের জন্য।তবে বাস্তবে সেই টাকা আসলে কোন খাতে ব্যায় হয় এবং সত্যিকার অর্থেই তার সুফল এতিমরা পান কিনা সেই খবর রাখেন না কেউই।রক্ষক যদি ভক্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হোন তাহলে সেই খবর কারো না জানারি কথা।এই মাদ্রাসাটি পরিচালনার দায়িত্বে যারা আছেন খোঁজ নিয়ে জানা গেছে তাদের অধিকাংশেরই ব্যাকগ্রাউন্ড ভাল নয়।অতীতে এই কমিটির অনেকেই হকারি পেশায় নিয়োজিত ছিলেন।কালের আবর্তে আজ তারা কোটি টাকার মালিক।তবে কিভাবে তারা এতো টাকার মালিক হলেন সেই তথ্য আজো কেউ জানেন না।তবে কথিত আছে যে,এদের অনেকেই মসজিদ মাদ্রাসার দানের টাকা দিয়ে ব্যাবসা করে কোটিপতি হয়েছেন।কেউ কেউ রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ বনেছেন।এদের কারোরই শিক্ষার দৌড় উল্লেখ করার মতো নয়।অধিকাংশই মোটামুটি অক্ষরজ্ঞান সম্পন্ন।ধর্ম সম্পর্কে নেই তাদের কোন ধারণা।অনেকেই শুদ্ধ বাংলায় কথা বলতে পারেন না।তবুও কি করে তারা মসজিদ-মাদ্রাসার মতো এমন একটি পবিত্র প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বে আছেন তার কোন সদুত্তর কেউ দিতে পারেন নি।মাদ্রাসার ছাত্র সংখ্যা মাত্র ৭০/৮০জন হলেও এই মসজিদ মাদ্রাসার ইনকাম প্রতিমাসে প্রায় ২/৩ লক্ষ টাকা।তার বাইরে আছে বেহিসেবি দান খয়রাত।এত কিছুর পরেও মাদ্রাসার আবাসিক ছাত্রদের ভাগ্যে বেশিরভাগ সময়ই আলু ভর্তা-ডাল অথবা আলু ভাজি-ডাল জোটে।তার বিনিময়েও অনেকের কাছ থেকে আদায় করা হয় ৮০০-১২০০ টাকা পর্যন্ত।মসজিদের ৪র্থ তলা থেকে ৬ষ্ঠ তলা পর্যন্ত প্রায় ৭০/৮০ টি রুম করে ব্যাচেলর ভাড়া দেয়া রয়েছে।সেখান থেকে মাসিক আয় আনুমানিক প্রায় ১ লক্ষ বিশ থেকে দেড় লক্ষ টাকা।তবে অভিযোগ আছে এই বাসাগুলোর প্রায় সবগুলোই কমিটির লোকদের দখলে।সেখানে নামমাত্র মূল্যে তারা ভাড়া দিলেও সরকারের গ্যাস পানি নষ্ট করে মসজিদের নাম হাঁকিয়ে মুলত তাদের ব্যাবসায়িক কাজই করে থাকেন।মসজিদ কমিটির সেক্রেটারি্র শান্তিনগর বাজারে কিংস বেকারী নামে ২টা বেকারী আছে।জানা গেছে এই বেকারির সকল প্রডাক্ট মসজিদের ৪র্থ এবং ৫ম তলায় তৈরি করা হয়।সূত্র মতে,এই গ্যাস লাইনটি মাদ্রাসার ছাত্রদের রান্নার কথা বলে নেয়া হয়েছিল।সরকারি গ্যাস খরচ করে কমার্শিয়াল কাজ করলেও তিনি ভাড়া দেন আবাসিক হিসেবে।তাছাড়া সেখানে তার বেকারির কর্মচারীরা রাতে থাকেন।মসজিদ কমিটির ক্যাশিয়ারের দায়িত্বে আছেন রফিক মিয়া নামে একজন।জানা গেছে পূর্বে তিনি হকারি করে ডাব বিক্রি করতেন।বাজারের ব্যাবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে,তার কথা কাজ এখনো হকারের মতই রয়ে গেছে।কিছুদিন আগে তিনি অবৈধভাবে একজনের দোকান দখল করতে গিয়ে গণধোলাই খেয়েছেন। মসজিদের ৬ষ্ঠ তলায় তিনি দখল করে আছেন ৩টি রুম।এই রুম গুলোতে তার দোকানের কর্মচারীরা থাকেন।সূত্র মতে কিছুদিন আগে সেখানের আরো একটি রুম দখল করতে চেষ্টা চালান রফিক মিয়া।কিন্তু সেখানে তিনি সুবিধা করতে পারেন নি।তার কয়দিন পরেই রহস্যজনকভাবে আগুন লাগে সেই রুমে।রুমে থাকা কোরবান আলী নামে একটি অসহায় ছেলের প্রায় ৫০হাজার টাকার মালামাল পুড়ে ছাই হয়ে যায়।অবশেষে এই অভিযোগে তাকে সেখান থেকে সরিয়ে সেই রুমটির দখল নেন রফিক মিয়া। মুসলিম জাতীয় এতিম খানার মোহতামেম মসজিদ কমিটির সেক্রেটারির জামাতা।তিনি-ই আবার মসজিদের ঈমাম। গোপন সূত্রে জানা গেছে ঈমাম সাহেবের স্ত্রী কিছুদিন পরকীয়ায় আক্রান্ত ছিলেন।দীর্ঘদিন পর যখন বিষয়টি প্রকাশ হয় তখন ঈমাম সাহেব বাসা শিফট করে এই যাত্রায় তাকে পালিয়ে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করেন।স্থানীয় সাংসদ ও ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন হাসিনা সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের প্রযুক্তি শিক্ষার উদ্দেশ্যে মুসলিম জাতীয় এতিম খানার জন্য একটি কম্পিউটার প্রদান করেন। জানা গেছে সেই কম্পিউটার এখন সেক্রেটারি নুরুল ইসলামের এক ছেলে এবং তার নাতি ও মাদ্রাসার মোহতামেমের সন্তানের গেইম খেলার কাজে ব্যাবহার হয়।এমনকি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের জন্য দেয়া হলেও মাদ্রাসার কোন শিক্ষার্থীর ঐ কম্পিউটার স্পর্শ করার অনুমতি নেই।এই মাদ্রাসার শিক্ষকদের বিরুদ্ধে জোরপূর্বক ছাত্রদের বলৎকারের ঢের অভিয়োগ আছে।মসজিদ ও মাদ্রাসা কমিটির সাথে সংশ্লিষ্ট অনেকের এসব জানা থাকলেও প্রতিষ্ঠান টিকিয়ে রাখার স্বার্থে এসব চেপে জান তারা।মসজিদ ও মাদ্রাসা একই কমিটি দিয়ে পরিচালিত হলেও আজ অবধি কোন খাতে কয় আয় এবং কত ব্যায় হয় তার কোন সঠিক হিসেব নেই সংশ্লিষ্ট কারো কাছে।মাঝে মাঝে টাকা লুটপাটের অভিযোগ উঠলেও প্রভাবশালীদের কারনে সেটা খুব বেশিদূর এগুতে পারেনা। ফলে ভালো মানুষের মুখোশ পরে থাকা খারাপ মানুষগুলো রয়ে যাচ্ছে ধরা-ছোঁয়ার বাইরে

*************
লেখাটি যদি আমাদের আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কারো দৃষ্টিগোচর হয় তবে খুশি হব।এই লেখাটি সংরক্ষিত আছে থিঙ্ক টিউন এ। এই সংক্রান্ত আরো তথ্য নিয়ে আবার হাজির হবো খুব শীগ্রই। আমাদের সাথেই থাকুন।

বিস্তারিত পড়ুনঃ