মালালাকে নিয়ে আমাদের তোলা প্রশ্নই প্রমাণ করে আমরা জাতি হিসেবে কতটা নীচ…!!!

কাইয়ুম খান
Published : 18 Oct 2012, 04:14 AM
Updated : 18 Oct 2012, 04:14 AM

আজ প্রশ্ন তোলা হয়েছে যে, মালালা ব্লগ লিখেছে ২০০৯ সাল থেকে। ১২ সালে এসে সে আলোচনায় আসল কি করে?
-আমি ২০১১ সাল থেকে মালালাকে চিনি। তাকে ঐ বছর 'জাতীয় শান্তি পদক' প্রদান করা হয়।

"মালালা ইউসুফজাই"! গত কয়েকদিনে প্রেস এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় সর্বাপেক্ষা আলোচিত নাম। আমি ব্যক্তিগতভাবে মালালা'কে সম্মান করি, কারণ অসত্যের বিপক্ষে আমার অবস্থান সুদৃঢ়। কিন্তু, শুধু পাকিস্তানী বলে এমন একটা নিষ্পাপ মেয়ের বিপক্ষে আজ অবস্থান নিয়েছেন আমাদের দেশের ব্লগার-সমাজ, যার লিখনীর জোরে বারংবার কেঁপে উঠেছে অন্ধত্ব-মৌলবাদের দেয়াল। যার কী-বোর্ড কথা বলেছে স্টেনগানের মত, যার বিদ্যাস্পৃহা নজর কেড়েছে বিশ্ববাসীর। কিন্তু, আমাদের দুর্ভাগ্য যে সস্তা জনপ্রিয়তার লোভ আমাদের এতখানি নিচে নামিয়ে দিয়েছে যে আমরা তাকে পর্যন্ত সম্মান দেখাতে কুণ্ঠাবোধ করছি। আমাদের ভাষাজ্ঞান ও ভাষা-শহীদদের প্রতি ভালবাসা এতটাই বেড়ে গেছে যে আমারা সত্য বলার অপরাধে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে এমন একজনকে নিয়ে লিখতে চ-বর্গীয় ভাষা ব্যবহার করি!

সমালোচকদের আরেক অংশ বলছেন, নিয়মিত স্কুল যেতে না পারা মালালা ব্লগিং শিখল কিভাবে!
-আমি ব্লগিং শিখলাম কিভাবে? আমার স্কুলেতো ব্লগিং শেখানো হত না। ফেসবুকে এক বড় ভাইয়ের লেখার লিংক দেখে আমি নিক খুলতে আগ্রহী হই। এমন হতেই পারে সে তার কোন বড় ভাই অথবা বোনকে দেখে শিখেছে।

আরেকদল ছাগল বলছেন, ঠিকমত লেখাপড়া না জানা মালালা এত ভাল লেখা শিখল কিভাবে?
-ওরে বরাহছানার দল….! রবীন্দ্রনাথ কোথা থেকে ডিগ্রী নিয়েছিলেন? নজরুল কোন ভার্সিটিতে পড়েছিলেন? শরৎচন্দ্র কোন বিষয়ে ডক্টরেট করেছিলেন?

এসবের জবাব কারো কাছে থাকলে দেবেন। আসলে, ব্লগিং করতে ডিগ্রী লাগে না, মানুষকে সত্য জানাতে আইজুদ্দিনের মত নোংরাভাষী হওয়া লাগে না।
১৮৮০ সালে "মালালা আন্না" নামে এক তরুণী প্রাণ দেন আফগান স্বাধীণতার জন্য। আজ এই মালালা নিজের প্রাণ বাজি রেখে দেখালেন মহৎপ্রাণেরা আত্মদানেই বিশ্বাসী। আর আমরা যে নিচে সে নিচেই থেকে গেলাম।

আমাদের চৈতন্য হোক। মালালার সাথে আমাদের জাতিগত ও ভাষাগত পার্থক্য থাকতে পারে। হতে পারে সে বয়সে ছোট। তবুও মহত্ত্বের বিচারে, আমরা নস্যি বললে অত্যুক্তি হবে বলে আমার মনে হয় না……!