রোগীদের জীবন নিয়ে খেলা চলে উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে

কাইয়ুম খান
Published : 27 May 2012, 10:37 AM
Updated : 27 May 2012, 10:37 AM

আজ শনিবার উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একজন রোগীকে দেখতে যাই। কিন্তু গিয়ে দেখি প্রত্যেক পদে পদে অনিয়ম আর দুর্নীতি।

প্রথমেই চোখে পড়ে রোগিরা প্রচণ্ড গরমে ঘামছে এবং পুরোপুরি অস্থির হয়ে আছে। ৪টা ব্যাডের জন্য মাত্র একটা ফ্যান। এ গরমে সাধারণ মানুষের যে অবস্থা তাতে রোগীদের অবস্থা কেমন হবে তা এদেশের সাধারণ পাবলিকরা আর ভালো করে বুঝে। এক রুগী তো বলেই ফেলল "আমাকে মেরে ফেলার জন্য এখানে ভর্তি করছে"।

অল্প কিছুক্ষণ পরেই এক বাচ্চা মেয়ের মা এসে পাশের বেডের মহিলাকে বলতে শুরু করল "ডাক্তার আমাকে বসিয়ে রেখে অপারেশন করতে যান। অপারেশন শেষে সে (ডাক্তার) ১০ জন রোগী দেখে সর্বশেষ আমাকে ডাকে এবং কথা বলে তারপর (মেয়েকে) ছাড়পত্র দেন"।কথা গুলো সে ক্ষোভের সাথেই বলেছিল। এর মানে হচ্ছে ছাড় পত্র দিলে তো আর কাছ থেকে টাকা পাওয়া যাবে না। প্রেসক্রিপশন দিলে টাকা পাওয়া যাবে!

দুপুর ২টা ২০মিনিটে খাবার দিতে আসে তখন দেখলাম সব থেকে অবাক করা এককাণ্ড সকল রোগী প্লেট নিয়ে ছুটা- ছুটি করছে। কিছুক্ষনের মধ্যে অনেক চিল্লা-পাল্লাও শুরু হয়ে গেল। আর হবেই না বা কেন! এখন তো তাদের অনেক ক্ষুধা লেগেছে!! কারন তারা সকালে ১টা ডিম ২ পিছ রুটি এবং একটা কলা খেয়েছিল(২/১ জন ছাড়া বাকি সবার ঔষধপত্র কিনতে হসপিটালের বিল দিতে হিমশিম খায় খাবার কিনে খাবে কি করে।)!!! তখন এক জন ডাক্তার আসলে যারা খাবার দিচ্ছিল তারা বলে, "আপনারা ব্যাডে যান আমারা খাবার দিয়ে আসব"।

১৫ মিনিট পর খাবার দিয়ে যখন চলে যাচ্ছিল তখন আমি লক্ষ করলাম আমাদের রুগিকে খাবার না দিয়ে চলে যাচ্ছে। আমি তাকে ডাকলে "সে বলে আপনারা খাবার নেন নাই?" আমি বললাম খাবার দেয়ার দায়িত্ব কার রোগীর না আপনার একটু হতভম্ব হয়ে পরক্ষনই সে প্লেট নেয়ার জন্য ছুতে আসে এবং খাবার দিয়ে যায়। কি দিয়ে গেল সেটা আমার চোখের আড়াল হল না।একটা বাচ্চাও এর থেকে বেশী খাবার গ্রহণ করে। এটা দেখে প্লেটটা হাতে নিয়ে আমি তাকে বললাম চলেন আমার সাথে। সে খুব সাহসের সাথে ওয়ার্ড থেকে বের হয় কিন্তু লিফটের কাছে যখন আমি পৌঁছই তখন সে খুবই বিনয়ের সাথে বলে "ভাইয়া আর কি লাগবে?" আমি বললাম তুমি নিজেই বল? সে বলে "ভাইয়া রাগ করবেন না আমি ভাত মুরগী সবই দিচ্ছি। বেচারার মুখ দেখে মায়া হল তাই আর অভিযোগ করলাম না।

কিন্তু ফিরে আসার পর একেক জন একেকটা অভিযোগ করছিল সবগুলো মনে নাই তার মাঝে একটা আপনাদের জন্য তুলেধরছি। এক বৃদ্ধ মহিলা বয়স ৬৫+ হবে ব্যাড থেকে উঠতে পারে না বললেই চলে সে বল্লঃ "আমারে কাল রাইতের খাবার দেয় নাই। আমি ঘুমাইয়া আছিলাম বইলা খাবার না দিয়া চইলা গেছে। আমি রাইতের খাওন খাই নাই"। সে আর বলে "আমারে ছোট পলাপানের হোমান খাওন দেয়। আমার পেট ভরে না!" আমি তাকে জিজ্ঞাসা করি অভিযোগ করেন নাই? সে বলে "কার কাছে কইমু বাবা গরীবের কথা কেও শুনে শুধু শুধু মুখেক কথা নষ্ট হইত কোন লাভই হইত না। তুমি পোলা বইলা আনবার পারছ"।কেউ কেউ বলল ওরা খাবার বাচিয়ে তা বাহিরে বিক্রি করে। হয়ত মনে করছেন এতে অবাক হবার কি আছে এটা তো বাংলাদেশ!!!

এবার হল তাদের কথা যাদের জন্য এ হাসপাতালে মানুষ সুচিকিৎসা নিতে আসে। এ বিশ্বাস নিয়ে যে, তারা বড় হাসপাতালের বড় বড় ডাক্তারদের কাছে চিকিৎসা করালে ভালো হয়ে যাবে। যার জন্য তার (রোগীরা) এত টাকা খরচ করে ঢাকার উত্তরার বড় হসপিটালে চিকিৎসা করাতে এসেছে দেশের বিভিন্ন প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে।

এখানে ডাক্তাররা রোগী দেখে না বরং রোগীরাই ডাক্তারকে দেখতে যায়। সিস্টার এসে বলে যায় "এ ব্যাড এবং ঐ বেডের রুগী ডাক্তারের রুমে যান"।ডাক্তারের রুমের বাহিরে অসুস্থ শরীল নিয়ে বেশ কিছুক্ষণ দাড়িয়ে থাকার পর অনুমতি মিলে তাঁদের রুমে যাওয়ার।আমি নিজেও রোগীর সাথে যাই।

তারপর অবাক করা এক প্রশ্নের সম্মুখীন হই! ডাক্তার রুগীকে জিজ্ঞাসা করছে "আপনাকে কেন ভর্তি করা হয়েছে?" এ প্রশ্ন শুনে আমিত বোকা হয়ে গেলাম কি করে বা কি কারনে তারা রোগী ভর্তি করে তা তারা নিজেরাও জানে না! তাহলে এটাকেই কি আমরা বড় এবং আধুনিক হসপিটাল ভাবতাম!! এবং চিকিৎসাও করাতাম নির্দ্বিধায়!!!

আমি রোগীর কাছ থেকে জানতে পারি সে নিজেও জানে না তাকে এখানে ডাক্তাররা কী কারনে ভর্তি করা হল। সে বললঃ "আমি আজ এসেছি আমার অপারেশনের সেলাই খুলতে, কিন্তু সেলাই না খুলে ভর্তি করে নিল। তার মুখে বেদনার ছাপ স্পষ্ট ভাবে দেখা যাচ্ছিল। সে বাসা থেকে ভর্তি হওয়ার জন্য কোন পরিকল্পনা করে আসেনি। তাঁদের কাছে টাকাও কম ছিল, বিছানার চাদর, খাবার প্লেট, কাপড়-চোপড় এবং পানি কিছুই তারা নিয়ে আসেনি তাই আমি হসপিটালে আসি। এবং এসে

হসপিটালের অনিয়ম দুর্নীতি নিজ চোখে দেখে আপনাদের কাছে তার কিছু অংশ তুলে ধরার চেষ্টা করলাম। বাকিটা (চাঞ্চল্যকর) পরের পোস্টে তুলে ধরার চেষ্টা করব।

একটি আবেদনঃ ব্লগার ভাইদের মধ্যে কেউ যদি সাংবাদিক থাকেন তাহলে দয়াকরে আমাকে সহযোগিতা করবেন। যাতে লেখাটা সারা দেশে ছড়িয়ে দেয়া যায়।
আমার ইমেইল আইডি দিলাম এই লিঙ্কে।আসা করি আপনাদের সহযোগিতা পাব।