ইয়াহিয়া খানের পোড়ামাটি নীতি কি অবরোধের মূলনীতি?

কাজী রাশেদ
Published : 22 Jan 2015, 04:46 PM
Updated : 22 Jan 2015, 04:46 PM

তবে কি বাংলাদেশ হেরে যাচ্ছে? ত্রিশ লাখ শহীদের আর লাখো বোনের আত্মত্যাগে পাওয়া এই প্রিয় জন্মভূমি কি আবার হেরে যাবে সেই পুরানো পরাজিত শক্তির কাছে? গত তেতাল্লিশ বছর ধরে যে শক্তিটা প্রতিদিন প্রতি মুহূর্তে এই দেশটাকে ধ্বংস করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে, পয়সা দিয়ে, হুমকি দিয়ে, হত্যা করে এবং স্বাধীনতার পক্ষ বিপক্ষকে ক্ষমতার ভাগ বাটোয়ারায় সাথে থেকে স্বাধীনতা বিরোধীশক্তি অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে। ২০০১ থেকে ২০০৬ সালের ক্ষমতা এই স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি তাদের অসম্পূর্ণ শক্তিকে পূর্ণতা করেছে। ক্ষমতায় থাকার জন্যে বিএনপি এবং তার ভিতরে থাকা স্বাধীনতার সমর্থকদেরকেও সেই ক্ষমতার অংশিদার হয়ে তারা তাদেরকে কিনে নিয়েছে।

চিরায়ত বাংলাদেশ এখন বোমা, বাসে আগুন, ট্রাক লুঠ, শিশু ও নারীসহ মানুষকে পড়িয়ে মারার অবাধ বিচরন ক্ষেত্রে পরিনত হয়েছে। দক্ষিন এশিয়ার বাংলাদেশ এবং ভুটান ছাড়া প্রায় সব কয়টি দেশেই সশস্ত্র হামলা, আত্মঘাতি হামলা, মানুষের মৃত্যু স্বাভাবিকের পর্যায়েই চলে এসেছে। ব্যতিক্রম ছিলো এই দুটি দেশ। আমাদের দেশনেত্রী তার ক্ষমতায় যাওয়ার অন্ধমোহে এতোই বিভোর যে দেশের অস্তিত্ব  মানুষের মৃত্যু আর জানমালের ক্ষয়ক্ষতি উনার কাছে কোন ঘটনাই নয়।

পাকিস্তানী জল্লাদ ইয়াহিয়া খানে চিন্তার সাথে উনার ভীষন ভাবে দেখতে পাচ্ছি। ইয়াহিয়া বলেছিল মানুষ চাই না বাংলার পোড়া মাটি চাই। সেই পোড়া মাটী নীতি নিয়েই ১৯৭১ এর ২৫ মার্চ চুড়ান্তভাবে গনহত্যায় নেমেছিলো পাকিস্তানী বাহিনী। ঠিক ৪৩ বছর পরে বেগম খালেদা জিয়াও গনতন্ত্র উদ্ধারের নামে বাংলার মানুষকে পুড়িয়ে মারছেন নির্বিচারে কোনরকম দ্বিধাদ্বন্ধ ছাড়াই। তিনি অবরোধমুক্ত হওয়ার পরে দেশের সাধারন মানুষ মনে করেছিলেন এবার তিনি অবরোধ তুলে নেবেন, মানুষ হত্যা খেলার সমাপ্তি টানবেন, বাস ট্রাক, ট্রেন এ বোমা মারা, স্লিপার খুলে নাশকতার কথা তিনি বন্ধ করতে বলবেন।

কিন্তু সমস্ত আশা ভরসার মুখে তিনি পানি ঢেলে দিয়ে অবরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষনা দিয়ে প্রত্যক্ষভাবে মানুষ হত্যা, আগুন দিয়ে ঝলছে দেওয়া, বাস ট্রাক ও ট্রেনে আগুন দিয়ে জাতীয় সম্পদের ক্ষতি সাধনের জন্যে নিজের দলের এবং জোটের নেতা কর্মী দেরকে নতুন করে ধ্বংসের আহবান জানিয়ে দেশকে পুরো অচল করে দেওয়ার উৎসাহ যোগালেন। তিনি ছেড়ে যাওয়া নির্বাচনী ট্রেনটাকে আবার ফিরিয়ে আনার দাবী জানালেন, তিনি ট্রেনটি আবার ফিরে না আসা পর্যন্ত ধ্বংসাত্মক হত্যার রাজনীতি চালিয়ে যাবার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করলেন।

২০০৭ সালের দুই নেত্রীর মাইনাস ফর্মুলা বেগম সাহেব ভুলে গেছেন। ভুলে গেছেন কিভাবে এক অবৈধ সরকার দুই নেত্রীকেই প্রায় দু'বছর অন্তরীন রেখে এই দেশ থেকে বিতারিত করতে চেয়েছিলেন। সেদিন জনগনের চাপের মধ্যে সেই অবৈধ সরকার তাদের ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছিল। সেদিনের ঘটনা এবং তারপরের ইতিহাস সবারই জানা। কিভাবে তার সন্তানদ্বয়কে মুচলেকার মাধ্যমে দেশের বাহিরে পাঠাতে বাধ্য হয়েছিলেন সেটাও আজোও মনে রেখেছে এদেশের জনগন। আমাদের দেশের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ মনে করেন সময়ের কালে জনগন সব ভুলে যায়। কিন্তু ধারনাটা আসলেই ভুল। রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ভুলে গেলেও জনগন মনে রাখে সবকিছু।

সেই মনে রাখার জন্যেই বেগম সাহেব এতোদিন ধরে জনগনকে মাঠে নেমে আসার আহবান জানিয়ে আসলেও জনগণ মাঠে নামে না। টাই বলে বর্তমান সরকারের আমলে সুখের নহর বইছে তা কিন্তু নয়। জনগন আর আওয়ামী লীগের বিকল্প বিএনপি জামাত জোটকে কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না।

জনগন যেমন তাদের আমলের দুর্নীতি, লুঠপাট, পুত্রদ্বয়ের অবাধ সম্পদের পাহাড় গরার কাহিণী ভুলে নাই তেমনি ভুলে নাই বাংলা ভাই, ৬৩ জেলার বোমা হামলার কথা, ভুলেনি দশ ট্রাক অস্ত্রের চালানের কথা, ভুলে যায় নি রমনা বটমূলের বোমা হামলা, উদীচীর বোমা হামলা সহ শত শত মানুষের মৃত্যুর ইতিহাস।

আহসানউল্লাহ মাস্টার, শাহ এস এম কিবরিয়া সহ আদালতে বোমা হামলা চালিয়ে বিচারক সহ সাধারন মানুষদের হত্যার কথা।

তাই আজ যখন বেগম সাহেব আন্দোলনের নামে আবার বোমা হামলা, বাস-ট্রাক আর ট্রেনের উপর হামলা চালিয়ে অবরোধ সফলের আত্মতৃপ্তির ঢেকুর তুলছেন তখন সাধারন মানুষের মনে সেইসব দিনের ফিরে আসার আলামত পরিস্কার হচ্ছে।