উত্তরবঙ্গের গ্রামাঞ্চলে একটি প্রবাদ খুব চালু। জিদের ভাত বলে কুকুরে খায়। ২০০৬ সালের ক্ষমতা না ছেড়ে জনগনের সাথে প্রতারনা করে ক্ষমতা কে কুক্ষিগত করার যে জিদ বেগম খালেদা জিয়া করেছিলেন সেই জিদের প্রথম আঘাত তিনি অনেক আগেই পেয়েছিলেন। যখন রাজনীতি না করার মুচলেকা দিয়ে নিজের সন্তানকে বিদেশে পাঠিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছিলেন। তারও আগে উনার পছন্দের মানুষদের দ্বারাই জেলখানায় কাটিয়েছিলেন দু'বছর। গত ছয় সাত বছর ধরে তিনি এবং তাঁর দু'সন্তান একসাথে হতে পারেননি। সেই দুঃখবোধ মনের মধ্যে রেখেই আজ চিরবিদায় জানাতে হলো ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোকে। জীবিত অবস্থায় তিনি তার ছোট ছেলে কে শেষ দেখা দেখতে পারেন নাই। একজন মা হয়ে এর চেয়ে বড়ো দুঃখ পৃথিবীতে আসে কিনা আমাদের জানা নাই।
পৃথিবীতে বাবার কাঁধে সন্তানের লাশ হচ্ছে সবচেয়ে ভারী বস্তু। আর যে মা দশ মাস গর্ভধারন করে জন্ম দিয়েছিলেন তার ব্যথা শুধুমাত্র আরেকজন মা শুধু উপলব্ধি করতে পারেন। আমরা জানিনা ম্যাডাম তাঁর বড়ো ছেলেকে কবে নিজ দেশে কাছে পাবেন। বড়ো ছেলের যত কীর্তি কলাপ তাতে দেশে ফেরার সম্ভাবনা খুবই কম। আমরা সবাই বেগম খালেদা জিয়ার এই শোকাহত দিনে তাঁকে সহনাভুতি জানাই। কিন্তু সেইসাথে আমরা তাঁর বিবেকবোধের উপর কোন ভরসা রাখার রাস্তা খুজে পাচ্ছি না।
আজ খবরে প্রকাশ নীলফামারী জেলার সদর উপজেলার লক্ষীচাপ ইউনিয়নের জাতীয়তাবাদী মৎস্য জীবি দলের সভাপতি আব্দুল মতিন তার বাবাকে হারিয়েছেন তারই দলের ডাকা অবরোধে সময় তারই দলের কর্মীদের ছোড়া আগুনে। গত ২১ জানুয়ারি বিশ্ব ইজতেমা শেষে একটি ট্রাকে বাড়ি ফেরার পথে সন্ধ্যায় দিনাজপুরের কাহরোল উপজেলায় অবরোধকারীদের ছোড়া পেট্রোল বোমায় দগ্ধ হন আব্দুল মালেক।
গত ছয় দিন রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন থেকে গত সোমবার বেলা আড়াইটায় মারা যান তিনি।(সুত্রঃ বিডিনিউজ ২৪)
বাবাকে হারানোর পর আব্দুল মতিন বলেন, "আমি আর বিএনপির রাজনীতি করব না, যে দল করি সেই দলের ডাকা অবরোধ আমার বাবার প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। এমন সহিংসতার রাজনীতি আমি চাই না। যারা এমন সহিংসতা করে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।" নিহতের বড় মেয়ে মাজেদা খাতুন (২৮) বলেন, "আমার বাবাকে হারিয়েছি। আরও অনেকে বাবা, ভাই, বোন, সন্তান হারাচ্ছে, হারাবে। আমরা এমন রাজনীতি দেখতে চাই না।"
নিহত আব্দুল মালেকের স্ত্রী মমতা বেগম বলেন, "তিন ছেলে দুই মেয়ে নিয়ে সুখের সংসার ছিল আমাদের। হঠাৎ এমন মৃতুতে ভেঙে চুরমার হয়েছে সকল স্বপ্ন।" তিনি জানান, সামান্য স্বর্ণকারের ব্যবসা আর আর তিন বিঘা জমি চাষাবাদ করে চলত তাদের সংসার।
একইদিনে খবর বেরিয়েছে যে, বাসায় স্ত্রীর সাথে রাগকরে এক স্বামী বাসা থেকে বের হতে আর ফিরে আসেননি। পরবর্তীতে সেই স্বামীকে খুজে পয়া গেলো হাস্পাতালের মর্গে। তিনিও অবরোধকারীদের ছোড়া আগুনে পুড়ে নিহত হয়ে জায়গা পান হাস্পাতালের মর্গে। এমনিভাবে প্রতিদিন লাশের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। আর আমাদের বিরোধীদলীয় নেত্রী দাবী আদায় না হওয়া পর্যন্ত অবরোধ চালিয়ে যেতে বলেছেন। অর্থাৎ তিনি আগুনে ঝলছে দিয়ে মানুষ মারার জন্যে উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছেন তার দলের ও তার জামাতি ভাইদের। এযেনো রূপকথায় পড়া রক্ত পিপাসিত কোন এক চরিত্র যার রক্ত না হলে জীবন আবার সুন্দর হয়ে উঠবে না। দোহাই ম্যাডাম আপনি থামুন। জনগন বলাবলি করছে যে তিনি তাঁর সন্তান হারানোর ব্যথা দিয়ে কি মানুষের স্বজন হারানোর ব্যাথা উপলব্ধি করতে পারছেন না!