সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ৫ই মে যখন ঢাকা শহরকে নারকীয় করে তুলেছিলো হেফাজত নামের কিছু মানুষ তখন তিনি ডাক দিলেন ঢাকা সকল মানুষ কে রাস্তায় নেমে আসার জন্যে। ততক্ষনে বায়তুল মোকাররমের ছোট ছোট দোকানদারদের কপাল পুড়ে গেছে হেফাজতি তান্ডবে। তিনি বললেন ছাত্রদলের নেতা কর্মীদের পানি খাদ্য হাতে রাস্তায় নেমে আসতে। হেফাজতি দের পাশে দাড়িয়ে হাসিনা সরকারের পতন সম্পন্ন করার জন্যে নির্দেশ পাঠালেন তার হাই কম্যান্ড কে। কিন্তু হলো না, হাসিনা সরকার অত্যন্ত সফল্ভাবে, সাহসিকতার সাথে হেফাজতিদের বাড়ী পাঠিয়ে দিয়ে ঢাকা শহর পরিস্কার করে ফেললেন। সেই সুযোগে অবশ্য আমাদের এরশাদ সাহেবও হেফাজতিদের পাশে দাঁড়িয়ে পানি খাওয়ানোর আশ্বাস দিয়েছিলেন।
এরপরে বেগম খালেদা জিয়া আবার সারা দেশের মানুষকে পথে নেমে আসতে বলেছিলেন ৫ই জানুয়ারী নির্বাচন ঠেকানোর জন্যে। তিনি যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে রাস্তায় নেমে আসতে বললেন এই হাসিনা সরকারের অধীনে কোন নির্বাচনে অংশগ্রহন না করার ঘোষনা দিয়ে। মানুষ যে কেনো তার ডাক শুনতে পেলো না জানা যায় নি। তবে সাধারন মানুষ তো দুরের কথা কোথাও কোথাও দুয়েকটা শিবিরীয় বোমা আর আগুন দিয়ে মানুষ মারা ছাড়া নিজের দলের অকুতোভয় সৈনিকরাও মাঠে নেমে আসে নি সেদিনের সেই ডাকে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে যে কোন আন্দোলনের জন্যে প্রয়োজন সংঘঠিত রাজনৈতিক শক্তি এবং দলের কাঠামো। ২০০৭ সালের পর সেই বিশেষ সরকারের আমলে যখন খালেদা জিয়া সহ দলের অনেক নেতাই জেলখানায় তখনো কোন আন্দোলন বা প্রতিবাদ চোখে পড়ে নি বললেই চলে। অপরদিকে আওয়ামী লীগের হাজার হাজার নেতা কর্মী ষড়যন্ত্র আর জেল নির্যাতন সহ্য করেও দিনের দিনের পর রাস্তায় থেকেছে তাদের নেত্রীর মুক্তির দাবীতে। বরঞ্চ টেলিভিশনের পর্দায় টকশো র নামে ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত নিজেদের দলের নামে, নেত্রীর নামে, তারেক এবং কোকোর বিরুদ্ধে কুৎসা গেয়েছেন অবলীলায়। সেইসব কুৎসাকারীরাই এখন আবার নেত্রীর আশেপাশে এসে দলের হাল ধরেছেন। জনগনের ধারনা আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মারা এবং দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করে ক্ষমতায় যাওয়ার যে ফর্মুলা বিএনপি শুরু করেছে সেই ফর্মুলায় ক্ষমতায় যাওয়া দুরের কথা নিজেদের রক্ষা করতে পারবেন কিনা সেটাই আজ প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে।
সন্ত্রাস আর মানূষ হত্যা করে ক্ষমতায় যাওয়া যাবে না বা কোন রাজনৈতিক আন্দোলন গড়ে তোলা যাবে না এই সহজ সমিকরনটি বেগম খালেদা জিয়াকে বুঝতে হবে বলে মনে করেন সাধারন মানুষ।
২০১৪ সাল গেলো। তিনি কয়েকবার সময় বেধে দিলেন এই সরকারের শেষ সময় হিসেবে। বেশ কিছু জনসভাতে ভাষন দিলেন এবং যথারীতি আবারো দেশের মানুষকে গনতন্ত্র উদ্ধারের জন্যে রাস্তায় নেমে আসতে বললেন। এবার সাধারন মানুষের আশা ছিলো বেগম খালেদা জিয়া শান্তিপূর্ণ উপায়ে আন্দোলন করে ২০১৩/২০১৪ সালের তার দল ও জোটের নারকীয় ধ্বংসাত্মক রাজনীতি থেকে বের হয়ে এসে নিজের এবং দলের ভাবমূর্তিকে উদ্ধার করবেন। কিন্তু সেই আশায় গুড় বালী দিয়ে আমাদের দেশনেত্রী আরো ভয়াবহ রূপে আবির্ভূত হলেন জনগনের সামনে বছরের শুরুর দিনেই। এরই মধ্যে আগনে ঝলছে গেছে পুরো পরিবার। দুধের শিশু থেকে ৮০ বছরের বৃদ্ধ কেউ রেহাই পাননি তার দলের কর্মীদের নারকীয় উল্লাস থেকে। মারা একই পরিবারে সাতজন, মারা গেছে বাবা মেয়ে, মারা গেছে শিশু আর মা, মারা ট্রাকের ড্রাইভার হেলপার এবং মারা গেছে নিজ দলের ইউনিয়ন সভাপতির বৃদ্ধ পিতা। কিন্তু থামে নি আগুন, থামে নি মানুষের মৃত্যু।
সারা দেশের মানুষ যখন এই মৃত্যুর বিভীষিকা থেকে বের হয়ে আসার আহবান জানাচ্ছে তখনো দেশের দেশনেত্রী প্রতিদিন মানুষের মৃত্যুর সংখ্যা বাড়িয়েই চলেছেন। এ যেনো এক মরণপণ প্রতিজ্ঞা, সারা দেশ যদি আগুনে পুড়ে কয়লা হয়ে যায় তবুও কোন ক্লান্তি নেই। বাংলাদেশের সাধারন মানুষ তাদের প্রিয় দেশনেত্রীর বোধদয় হোক এই প্রত্যাশায় প্রতিদিন অপেক্ষা করছেন।
অবশ্য এরি মধ্যে আবারো একটি নতুন দিন তারিখ নির্ধারিত করেছেন ২০ দলীয় জোটের নেতৃবৃন্দ। আগামী ১৩ই ফেব্রুয়ারী ২০১৫ তারিখের পরে আর এই সরকার ক্ষমতায় থাকবে না। আমরা প্রতিক্ষায় রইলাম এই তারিখের জন্যে। আমরা শুধু চাই এই মৃত্যুর মিছিল বন্ধ হোক। বন্ধ হোক মানুষ মারার এই মহানারকীয় যজ্ঞ।