আর মাত্র তিনদিন বাকি

কাজী রাশেদ
Published : 9 Feb 2015, 06:29 PM
Updated : 9 Feb 2015, 06:29 PM

মেজর হাফিজ সাহেব কিছুদিন আগে বলেছেন ১৩ই ফেব্রুয়ারী ২০১৫ এই আওয়ামী লীগ সরকারের শেষদিন। অবশ্য এই ডেডলাইন তিনি একাই দেন নাই, বাংলাদেশ আইনজীবী সমিতির নেতা জাতীয়তাবাদী আইনজীবীদের উদ্দেশ্যে একই বক্তব্য   দিয়েছেন প্রায় একইসময়। দুয়েকদিন আগে এবং পরে। এর অর্থ হলো উনারা প্রায় নিশ্চিত যে আগামী তেরো তারিখের মধ্যে বা তেরো তারিখের সন্ধ্যের মধ্যেই বর্তমান সরকারের পতন অনিবায্য।

এই সেই মেজর হাফিজ যিনি ২০০৭ এর পট পরিবর্তনে সংস্কারপন্থী হিসেবে চলে গিয়েছিলেন বিএনপি থেকে। বেশ কিছুদিন বিএনপি, খালেদা জিয়া, এবং তাঁর ছেলেদের নামে বিভিন্ন কথা শুনিয়েছেন দেশের বিভিন্ন চ্যানেলের টক শো গুলোতে। উদ্দীন সাহেবদের সুনজরেও ছিলেন এই অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তা। বাংলাদেশে এই রাজনীতিবিদের একটা জনপ্রিয় পরিচিত ছিলো প্রায় সকল মহলের মানুষের কাছে। ছিলেন অসম্ভব জনপ্রিয়। বাংলাদেশের ফুটবল জগতে মেজর হাফিজের জাদুকরী খেলা প্রায় সকল ফুটবল প্রেমিদের মাতিয়ে রেখেছিল দীর্ঘদিন।

এক্ষেত্রে যদি উনাদের কথা যদি সত্যি বলে ধরে নেওয়া যায় তাহলে আগামী তেরো তারিখের পর থেকে আর অবরোধ হরতাল থাকছে না। গত মাস খানেকের বেশী সময় ধরে মানুষের আগুনে পুড়ে মরে যাওয়ার ঘটনা থাকবে না। প্রতিদিনের সংবাদ মাধ্যমগুলোর খবরে থাকবে না নৃশংসতার কোন খবর।

আহা কি আনন্দ আকাশে বাতাসে!

বিএনপির এই দুই নেতা কোন শক্তির উপর নির্ভর করে ১৩ তারিখ শেষ দিন হিসাবে নির্ধারণ করেছেন সে একমাত্র তারাই জানেন। সাধারন মানুষের কাছে এর কোন প্রভাব পড়েছে বলে মনে হচ্ছে না। এমন কোন রাজনৈতিক কর্মসূচী বা আন্দোলন বিএনপি এবং তার ২০ দলীয় জোট এখনো গড়ে তুলতে পারে নি যে মাত্র দু একদিনের মধ্যেই সরকারের পতন অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠবে। ২০১১ সাল থেকেই বিএনপি প্রতিনিয়ত বলে আসছে এই সরকারের পতন অবশ্যম্ভাবী। ২০১৩ সালে তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবীতে আন্দোলন গড়ে তুলেন এবং তাদের সহযোগী সংঘঠনের নেতারা যখন যুদ্ধাপরাধের মামলায় একে একে ফেসে যাচ্ছিলেন তখন তাদের বাচাতে বিএনপি দেশে বিদেশে বিভিন্নভাবে প্রচেষ্টা চালিয়ে এসেছে। জনগনকে সাথে নিয়ে জনগনের দাবী দাওয়া নিয়ে আন্দোলন গড়ে তোলার মতো অনেক ইস্যূ বিদ্যমান থাকার পরেও বিএনপি এবং তার জোট কার্যকরী আন্দোলন গড়ে তুলতে পারে নি। এবং তাদের ইস্যুতে জনগনকে সম্পৃক্ত করতে পারে নাই। সারা দেশ যখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে দাবীতে ঐক্যবদ্ধ তখন বিএনপি নেতৃত্ব জনগনের আকাঙ্ক্ষার বিপরীতে দাঁড়িয়ে রাজনীতি করে গেছেন। বিশেষ করে বেগম খালেদা জিয়া এবং তার পুত্র তারেক জিয়া।

পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির কথিত অভিযোগে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন না করে চলে যাওয়ারর মতো এতোবড়ো ইস্যুকেও বিএনপি কাজে লাগাতে পারে নি একটা আন্দোলন গড়ে তুলতে। আন্দোলন গড়ে তুলতে না পেরে এবং যুদ্ধাপরাধের বিচারের দাবীতে জনগন যখন ঐক্যবদ্ধ, তখন বিএনপি তার গনতান্ত্রিক আন্দোলনের পথ থেকে সরে জামাত শিবিরের ঘাড়ে এসে সওয়ার হয়ে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের দ্বারা আন্দোলনের সফল পরিনতি আশা করতে থাকে। আর এখানেই বিএনপি জনগনের কাছ থেকে ক্রমশই দূরে সরে যেতে থাকে। এরই মধ্যে সরকার তার নির্বাচনী ওয়াদা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কাজ অনেকটাই এগিয়ে নিয়ে যায়। এই যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় কে কেন্দ্র করে জামাত শিবির যে তান্ডব বাংলাদেশে চালিয়েছিলো তা আজো মানুষের মনে দাগ কেটে আছে। বিএনপি যখন সব দিক দিয়ে অন্ধকার দেখছে ঠিক তখনই ৫ই জানুয়ারী নির্বাচনের বার্ষিকী কে সামনে রেখে আন্দোলন শুরু করার প্রস্ততি শুরু করে। বিভিন্ন বিভাগীয় শহরে বড়ো বড়ো জনসভা করে জনমত গড়ার কাজ করে আসছিলেন বিএনপি নেত্রী।

গাজিপুরে তিনি যেকোন মুল্যে জনসভা করার ঘোষনা দিয়েছিলেন। ছাত্রলীগের নেতারাও তারেক জিয়ার এক বক্তব্যকে কেন্দ্র করে একই জায়গায় জনসভা আহবান করে এবং তারেক জিয়া ক্ষমা না চাওয়া পর্যন্ত কোথাও কোন জনসভা করতে দেওয়া হবে না বলে ঘোষনা দিয়ে ছিলো।

খালেদে জিয়া সেদিন কিন্তু জনসভা করার চুড়ান্ত ঘোষনা দেওয়ার পরও বাসা থেকেই বের হোন নাই। জনগনের প্রত্যাশা ছিলো যত বাধাই আসুক খালেদা জিয়া গাজিপুরের জনসভা করবেনই। কিন্তু তিনি সেটা করেন নাই। এরপরের ইতিহাস সবার জানা। আবারো সন্ত্রাসের পথ বেছে নিয়ে তিনি তার গনতন্ত্র উদ্ধারের  আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রতিদিন আগুনে বোমার আঘাতে মারা যাচ্ছে শতশত মানুষ কিন্তু সেব্যাপারে তার বা তার অনুসারীদের কোন অনুশোচন নেই, বেদনাবোধ নেই। বরঞ্চ এই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাওয়ার জন্যে প্রতিদিন বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন।

এমনই এক দুঃসহ সময়ে মেজর হাফিজ এবং এডভোকেট জয়নুল আবেদীন সাহেব ১৩ই ফেব্রুয়ারী এই সরকারের শেষদিন বলে প্রকাশ্যে ঘোষনা দিয়েছেন। এই শেষদিন কিভাবে আসবে তা উনারা ব্যাখ্যা করেন নাই। জনগণের মধ্যেও তেমন কোন সাড়া দেখা যাচ্ছে না যে এই সরকারকে বিদায় দেওয়ার জন্যে লাখে লাখে রাস্তায় নেমে আসবে।

তবে কি আরো একটি পনেরো আগস্ট ঘটানোর পরিকল্পনায় ব্যস্ত আছেন তারা।