স্বাধীনতা আমার স্বাধীনতা

কাজী রাশেদ
Published : 25 March 2015, 07:47 AM
Updated : 25 March 2015, 07:47 AM

স্বাধিনতা আর মুক্তিযুদ্ধ। বাংলাদেশের হৃদয় থেকে উচ্চারিত দুইটি নাম। ভালোবাসা আর বিসর্জনের এক মহতী গাঁথাভরা এই স্বাধীনতা আর মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস। কালের আবর্তে দেখতে দেখতে ৪৪ বছর পেরিয়ে ৪৫ বছরে পা দিলো আমাদের বাংলাদেশ। ১৯৭১ সালের রক্তাত্ত জন্মের পর থেকে অনেক বাধা বিপত্তি আর সংগ্রামকে সাথে নিয়ে আজ বাংলাদেশ যৌবনে। ৪৫ বছর একটি দেশের জন্যে কিছুই না। অনেক পাওয়ার মাঝে আছে অনেক হারানোর বিষাদ।

শৈশবে মহান পিতার খামখেয়ালী আর মহানুভবতার দোষে শিশুর স্বাভাবিক গড়নে যে প্রতিবন্ধকতা আসে তার জের বয়ে চলতে হচ্ছে আজো। জন্মলগ্নের ধ্বংসস্তুপের জঞ্জাল পরিস্কার না হতেই শুরু হয়েছিলো এক অশুভ পাঁয়তারা। স্বাধীন দেশের পুনর্গঠনে জনগনের অংশগ্রহন হয়ে উঠেছিলো অনিশ্চিত। লাখো মানূষের স্বজন হারানোর ব্যথায় মানুষ ছিলো দিশেহারা। সেইসাথে ছিল সেইসময়ের সমাজ পরিবর্তনের নেশায় মেতে উঠা এক বিশাল যুবসমাজ। স্বাধীনতার পরে যে যুব সমাজ দেশ পুনর্গঠনের কাজে লাগবার কথা সেই যুবক চলে গেলো রাতের অন্ধকারে সমাজ পরিবর্তনের যুদ্ধে। আর সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে দেশের স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি তাদের পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে হয়ে উঠে মরিয়া । বিভিন্ন জায়গায় আত্মগোপন করে  থাকা ছাত্র সঙ্ঘের রাজাকার আলবদর সদস্যরা রাতারাতি সমাজতান্ত্রিক ভাবাদর্শের সৈনিক হয়ে দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করে। মুক্তিযুদ্ধের হাতিয়ার ব্যবহৃত হতে থাকলো মুক্তিযোদ্ধা নিধনে।

এমনি এক অশুভ লগ্নে মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় সারা বিশ্বে গর্ব করার মতো একজন জাতিয়তাবাদী নেতা, একজন জাতির পিতাকে হারাতে হলো পুরানো প্রেতাত্মাদের হাতে। বাংলাদেশ হয়ে যায় জন্মলগ্নে আযানদান কারী থেকে শুরু করে জন্মের বিরুদ্ধবাদীদের অভায়রণ্য। তথাকথিত স্বাধীনতা হারানো আর তথাকথিত ভারত ভীতির আশংকার ছায়ার সাথে যুদ্ধ করেই কেটে গেছে বাংলাদেশের সোনালী শৈশব। ধ্বংস স্তুপ কে সরিয়ে নিজের পায়ে উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে  চলে গেছে বহ বছর। তোমার গায়ে লাগতে দেওয়া হয়নি মেদ, জমা হতে দেয় নাই কোন শক্তি। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের তলাহীন ঝুড়ির যে উপমা বাংলাদেশ পেয়েছিলো সেই উপমাতেই আটকে ছিলো বাংলাদেশের সকল উন্নয়ন। ঢাক নেই তলোয়ার নেই নিধিরাম সর্দার হয়ে নিজেদের আখের গুছানো।

পাওয়া যায় নি স্বাভাবিক বেড়ে উঠার গ্যারান্টি। অন্যদিকে সাধারন মানুষের পিঠ যেনো দেয়ালে ঠেকে না যায় সেদিকে লক্ষ্য রেখে ডঃ ইউনুসের মতো ব্যক্তি দিয়ে ক্ষুদ্র ঋন ব্যবস্থা চালু করে সমাজে ধার করে ঘি খাওয়ার প্রথা চালু করানো হলো। স্বনির্ভর করার নামে ঋণের জালে আষ্ঠেপিষ্ঠে বেধে ফেলা হলো সাধারন মানুষকে।

বাংলাদেশের মানুষের কাছে সবচেয়ে প্রিয় উচ্চারণ স্বাধীনতা, সেই প্রিয় শব্দটিকে কলংকিত করার চক্রান্তে সামরিক সরকারের উদ্যোগ ছিলো সবচেয়ে চোখে পরার মতো। চীনা পরিব্রাজক হিউয়েন সাং এবং আরবীয় পরিব্রাজক ইবনে বতুতার বর্ণিত এই বাংলার চিত্র ছিলো শুধুই সমৃদ্ধ আর ঐশ্বর্যের। অবশ্য এই সব ধন সম্পদ আর ঐশ্বর্য এদেশের রাজা বাদশাদের বিলাসিতার জৌলুষ কে আরো বাড়িয়ে দিলেও সাধারন মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তনে কোন ভুমিকাই রাখে নি।

যুগে যুগে তীতুমীরের বাঁশের কেল্লা, বারো ভুঁইয়াদের স্বাধীনচেতনা ইতিহাস এদেশের স্বাধীন থাকার দুর্মর আকাঙ্ক্ষারই বহিরপ্রকাশ।

জন্মের ৪৪  বছরে নানা ধরনের বেজন্মা বেশাতি নিয়েই অধিকাংশ দিন কাটিয়েছে আমার বাংলাদেশ। উঠে দাঁড়ানোর শক্তিটুকু বাংলাদেশকে দেওয়া হয় নাই অনেকদিন। খামখেয়ালী আর স্বেচ্ছাচারের মূল্য দিতে দিতে নিঃশেষ হওয়ার শেষ প্রান্তে চলে গিয়েছিলো আমাদের বাংলাদেশ।

বাংলাদেশ ভালোবাসায় জড়ানো আমার জন্মভূমি, আজ আবার পুরানো শকুন আকাশে ঘুরপাক খাচ্ছে মৃতের মহোৎসবের আশায়। প্রতিদিন ক্ষমতা দখল আর টিকে থাকার লড়াইয়ে প্রাণ যাচ্ছে শত মানুষের। অনেক কস্টে অর্জিত গড়ে উঠা আমাদের অর্থনীতিকে ধ্বংস করার পায়তারায় যুক্ত হয়েছে দেশীবিদেশী ষড়যন্ত্রকারী। নুর হোসেন, মিলন, জেহাদ সহ অসংখ্য শহীদের রক্তের বিনিময়ে যে গনতন্ত্র এসেছিলো, সেই গনতন্ত্র শুধুই দলবদলের, বোতলের লেবেল  পাল্টানোর গনতন্ত্র।

লাখো শহীদের উত্তরসূরিদের চোখের জল আর রক্তাক্ত্ব স্মৃতিকে মুছে দিয়ে এখন আবার যৌবনের রক্তে আগুন ধরাতে হবে।  স্বাধীনতা বিরোধীদের বুকের উপর পা রেখে দাড়াতে হবে। শহীদের সন্তানদের অভিশাপ থেকে রক্ষা করতে হবে এই দেশকে। আমাদের সাহসী প্রজন্ম আজ হতাশা ঝেরে ফেলে দাঁড়িয়ে উঠবে এই প্রত্যাশা সবার। স্বাধীনতার আসল ইতিহাস জানা আজ সবচেয়ে জুরুরী। হিসেব করতে হবে গত হয়ে যাওয়া ৪৪ টি বছরের প্রত্যেকটি হওয়া না হওয়ার ঘটনা পরম্পরা।

এখন ঘুরে দাঁড়ানোর সময়। এই দেশ আবার খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে উঠে দাড়িয়েছে। বেজন্মা স্বাধীনতা বিরোধী নেতারা আজ ফাঁসির কাঠগড়ায়। একে একে তাদের ফাঁসি কায্যকর করে দেশকে ৪৪ বছরের কলংক মুক্তের পথে নিয়ে যেতে হবে। স্বাধীনতা বিরোধিরা আবার আঘাত হানার সকল চেষ্ঠা চালিয়ে যাচ্ছে। পাকিস্তানের মতো একটি অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিনত করার আন্তর্জাতিক দেশী বিদেশি চক্রান্ত এখন আর কোন গোপন মিশন নয়। দেশব্যাপী লাগাতার হরতাল, অবরোধ আর সন্ত্রাসী হামলায় মানুষকে মেরে ফেলার কর্মসূচি আর যায় হোক গনতন্ত্র উদ্ধারের আন্দোলন হতে পারে না। বিভিন্ন যায়গায় বিপুল পরিমান অস্ত্র সস্ত্র উদ্ধার নিশ্চয় গনতন্ত্র নিরঙ্কুশ করার কাজে লাগানোর উদ্দেশ্যে আনা হয়েছিলো না। সারা দেশ ব্যাপি এক নারকীয় সন্ত্রাস চালিয়ে দেশকে অস্থিশীল করে তোলার পাঁয়তারা শুরু হয়েছে। আর এই সুযোগে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ এদেশে তাদের ঘাটি করার চক্রান্ত সফল করে তুলতে পারবে। সবাইকে সজাগ থেকে সকল ষড়যন্ত্রকে সাহসের সাথে মোকাবেলার শপথ নিতে হবে আমাদের এই স্বাধীনতা দিবসের প্রথম প্রহরে। যে কালো রাত্রিতে কাপুরুষের মতো হামলা চালিয়ে বাঙ্গালীকে ধ্বংসের নীলনকশা সুরু করেছিলো পাকিস্তান বাহিনীর কুত্তারা, সেই কালো সময়কে আমাদের বেছে নিতে হবে শপথের সময় হিসেবে। সকল অন্ধকারকে ছিন্ন করে আমাদের এগিয়ে চলা কেউ রুখতে পারবে না, পারে নাই।