দেখতে দেখতে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের তারিখ এসে গেলো। ঢাকা উত্তর, দক্ষিন এবং চট্রগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন আগামী ২৮শে এপ্রিল। ঢাকা উত্তর এবং দক্ষিনের মেয়র পদে প্রতিধন্ধিতা করছেন প্রায় অর্ধশতাধিক প্রার্থী। সংবিধান এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচন আইন অনুযায়ি অরাজনৈতিক ভাবে এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপটে আইনে থাকলেও সকল রাজনৈতিক দল এবং জোট তাদের সমর্থিত প্রার্থীদের নিয়ে নির্বাচনের মাঠে নেমে পড়েছেন জোরেশোরে। এমনকি কোন কোন দলের শীর্ষ নেত্রী পর্যন্ত নির্বাচনের প্রচারনায় নেমে মাঠকে ইতিমধ্যেই গরম করে ফেলেছেন। নির্বাচনী আইনানুযায়ী গাড়ী শোভাযাত্রা নিষিদ্ধ থাকলেও সেই ব্যাপারে কারো ভ্রূক্ষেপ থাকছে না বললেই চলে। এব্যাপারে প্রত্যেকেই নিজের বেলায় আইনের শিথিলতা কে যায়েজ করতেই যুক্তি দিয়ে চলেন।
এবার তিন সিটি নির্বাচনের সকল প্রার্থীই উন্নয়নের প্রতিশ্রুতিতে ভোটারদের মন জয় করার চেষ্টায় নিজের সামর্থ্য অসামর্থ্য যা আছে সবই উজাড় করে দিচ্ছেন। নির্বাচিত হবার পরে কে কতটুকু তাদের নির্বাচনী ওয়াদা পুরন করতে পারবেন বা পুরন করার ক্ষমতা রাখেন সেই হিসাব করার এখন সময় তাদের নেই।
নির্বাচন আসলেই বাংলাদেশের সকল প্রার্থী ভোটারদের প্রতিশ্রুতির জোয়ারে ভাসিয়ে দিয়ে যান। আর নির্বাচনে জয়লাভ করে ভুলে তাঁর প্রতিশ্রুত উন্নয়নের অঙ্গীকার। এবারো যে একই ব্যাপার ঘটবে সে কথা বলাই বাহুল্য। তারপরেও মানুষ বুক বাধে, ভোট দেয় এবং নিজেদের সমস্যাগুলো সমাধানের আশায় দিন গুনতে থাকে। ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন প্রায় একযুগ পরে হতে চলেছে। গত নির্বাচনের সময় ছিলো একটি সিটি কর্পোরেশন। এবার সেই একটি সিটি কর্পোরেশন ভাগ দুভাগে ভাগ হয়ে গেছে। সিটি মেয়রও হবেন দুইজন। তাই মানুষের প্রত্যাশার পারদও যেনো একটু উপরের দিকে ছুটছে।
আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশের কর্পোরেশন বা পৌরসভার গুলোর সমস্যা অনেক। কোনটা ছেড়ে কোনটা আগে সমাধান করা দরকার সেই সিদ্ধান্ত নিতেই পার হয়ে যায় অনেকটা সময়। তারপরে যখন সমস্যার অগ্রাধিকার নির্ধারণ করা হয় তখন অর্থ যোগানের ব্যস্ততা এসে পরে। এই অর্থ যোগান অনেকটা নির্ভর করে আবার সরকারী বরাদ্দ আর ভোটারদের উপর নতুন নতুন করারোপরের মধ্য দিয়ে। অতএব উন্নয়নের প্রতিশ্রতি বাস্তবায়ন সেই ভোটারদের গলা কাটার উপর দিয়েই বাস্তবায়িত হয়।
এবার সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ঢাকা উত্তর এবং দক্ষিন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের মেয়র প্রার্থীদের কাছে উন্নয়নের অনেক বেশী প্রতিশ্রুতি ভোটার চায় না। চায় না কারণ যেসব প্রতিশ্রুতির জোয়ারে ভোটারদের ভাসিয়ে নিয়ে যেতে চাচ্ছেন মেয়র প্রার্থীরা সেসব যে আদৌ সম্ভব নয় সেটা বলাই বাহুল্য।
এবার ঢাকা সিটির উত্তর ও দক্ষিন অঞ্চলের ভোটার এবং জনগনের প্রত্যাশা মাত্র গুটিকয়েক। এবং আমাদের মনে হয় একজন মেয়র যদি সত্যি উন্নয়নের ব্যাপারে বা ঢাকা দুই সিটির জনগনের ভালো করতে চান তাহলে নীচের কয়েকটি ব্যাপারে আন্তরিক হলেই ঢাকাবাসী মেয়রদের কাছে চির কৃতজ্ঞ থাকবে।.
১। ঢাকা নগরের প্রতি দশ হাজার লোকের জন্য মিনিমাম একটি করে পাবলিক টয়লেট।
২। ঢাকা নগরের প্রতিটা অঞ্চলে নিরাপদ খাওয়ার পানির ব্যবস্থা করা।
৩। ঢাকা নগরীর প্রতিটি ওয়ার্ডে নুন্যতম শিশুদের খেলার মাঠের ব্যবস্থা করা।
৪। নগরীর ফুটপাতগুলো জনগনের নিরাপদে চলাচলের উপযুক্ত করে তোলা এবং হকার এবং মোটর সাইকেল মুক্ত করা।
৫। সর্বশেষ ঢাকা মহানগরীর বাড়ীওয়ালাদের স্বেচ্ছাচারের হাত থেকে মুক্ত করার ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহন করা।
৬। এবং সর্বশেষ নগরের রাস্তাঘাট গুলোকে যান চলাচলের উপযুক্ত করে মেরামত করার মধ্য দিয়েই ঢাকা মহানগরীর মানুষদের আশা আকাংখার বাস্তবায়ন করতে পারেন।
নির্বাচনে জয়লাভ করার জন্যে যেসব উন্নয়নের জোয়ারে আমাদের ভাসিয়ে নিয়ে চলেছেন সেই জোয়ারে আমরা ভাস্তে চাই না। আমাদের মনে হয় উপরের গুটিকয়েক সমস্যার সমাধানে কোন মেয়র আন্তরিক হলেই জনগন তাকে অনেকদিন মনে রাখবে।
সেইসাথে চট্রগ্রামের মেয়রের কাছে উপরের সমস্যাগুলোর সাথে শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনে পদক্ষেপ নিলেই জনগনের কাছে অনেকদিন আদরনীয় হয়ে থাকতে পারবেন একজন মেয়র।
কথার আর প্রতিশ্রুতির ফুলছড়ি না ছড়িয়ে বাস্তব সম্মতভাবে নগরের মানুষের কাজে লাগুন তাহলেই মানুষ আপনাকে বা আপনাদের অনেকদিন স্মরনে রাখবে। আর দশজনের মতো কথার কথা বলে ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়ে মানুষের নিন্দার পাত্র না হয়ে মানুষের প্রিয় পাত্র হয়ে উঠুন অল্প এবং বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা মাফিক কাজের মধ্য দিয়ে।