রাজন হত্যাঃ আমরা কি মানুষ?

কাজী রাশেদ
Published : 13 July 2015, 11:13 AM
Updated : 13 July 2015, 11:13 AM

আমরা কি পশু হয়ে যাচ্ছি। আমাদের স্বাভাবিক কান্ডজ্ঞান পর্যন্ত পশুর স্তরে নেমে যাচ্ছে বলেই ঘটনাচক্রে প্রমানিত হয়ে যাচ্ছে। একজন মানুষের বা কিছু মানুষের পশুত্ব কতটা বৃদ্ধি পেলে একটি শিশুকে পিটিয়ে মেরে ফেলা যায় তা কল্পনাতেই আনা দুস্কর হয়ে উঠে। অথচ কিছুদিন ধরেই সংবাদ মাধ্যমের পাতা খবর আসছে শিশুকে শ্বাস রোধ করে মারা, চাকু দিয়ে হত্যা করা, বা পানিতে ডুবিয়ে মেরে ফেলা বা গতদিনের মতো শিশুকে পিটিয়ে মেরে ফেলার। দিন দিন আমরা যত এগিয়ে যাচ্ছি ততোই যেনো নিজেরা একেকজন নির্বিকার পশু হয়ে উঠছি।

সিলেটের সদর উপজেলার কান্দিরগাও ইউনিয়নের বদেয়ালী গ্রামের সামিউল আলম রাজন কে প্রকাশ্য দিবালোকে কয়েকজন যুবক চোর অপবাদ দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেছে। সেই হত্যা দৃশ্য মোবাইল ফোনে ভিডিও করে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়ে পৈশাচিক উল্লাসে মেতে উঠেছে। বাচ্চাটি যখন যন্ত্রনায় বাচাও বাচাও বলে সাহায্য চেয়েছে তখনো কেউ এগিয়ে আসে নি। বরঞ্চ মজা করে মোবাইলে ফোনে ভিডিও করে অনলাইনে ছেড়ে দিবে বলে পিটানোর মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে। রাজন ৪রথ শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশুনা করেছিলো। অভাবের তাড়নায় অন্যান্য অনেক শিশুর মতি স্কুল থেকে ঝরে পরে বাজারে সব্জি বিক্রির কাজে নেমেছিলো। ভিডিও টি দেখে সংবাদ কর্মী রা আঁতকে উঠেন এবং সাথে সাথে সংবাদ পত্র সহ অন্যান্য মিডিয়ায় প্রকাশ করে।

খুঁটির সাথে বেঁধে শিশু রাজনকে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে মারা হয় এবং প্রতিটি খোঁচানোর সাথে চলে নির্যাতনকারীদের আনন্দ উল্লাস। নির্যাতনের মধ্যে তাকে হাটানো হয়েছে, হাটানোর পরে যখন রাজনকে হাটতে দেখেছে তখন তারা তাকে আবার মেরেছে। মাথা, ঘাড়ে, হাতে পায়ে সহ শড়িরের সমস্ত জায়গায় তারা রোলার দিয়ে আগাতে আঘাতে ছিন্নভিন্ন করেছে। যতক্ষন পর্যন্ত তার জীবন ছিলো ততক্ষন পর্যন্ত এই নির্যাতন থামে নাই। ভিডিওতে দেখা গেছে হাত এবং পায়ের হাঁটুতে বারবার আঘাত করা হয়েছে। রাজন যতবার বলেছে আর মারিয়েন না, ততোই তাদের পৈশাচিক উল্লাস বেড়েছে। একপর্যায়ে রাজনের জিহবাও কেটে ফেলার কথা বলে নির্যাতনকারীরা। বাচ্চাটি অত্যাচারে দিশেহারা হয়ে পানি চাইলে তাকে "পানি নাই ঘাম খা" বলেও উল্লাস করতে দেখা গেছে। নির্যাতনে নির্যাতনে রাজন যখন মারা যায় তখন সেইসব পাষন্ড তার লাশ টি গুম করতে চেয়েছিলো। সেইসময় ধরা পরে পুলিশের হাতে। এই হত্যাকান্ডে যওগ দেয় মুহিত আলম, কামরুল, আলী হায়দার এবং ময়না চৌকিদার।

রাজন সেদিন সংসারের চাহিদা মেটাতে বের হয়েছিলো সবজি বিক্রি করতে। সন্ধ্যা পার হয়ে গেলেও বাড়িতে না ফেরায় মা খুজতে খুজতে থানায় এসে পান ছেলের মৃত লাশ।

একদিন পরেই ঢাকার লালবাগে এক শিশুকে পিটিয়ে হত্যা করেছে তারি মামাতো ভাই। তার দুইদিন আগে মোহাম্মদপুরে এক পাষন্ড পিতা ঘুমের মধ্যে তার ছয় বছরের শিশুকে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা করেছে। আজকাল পত্রিকার পাতা খুললেই শিশু হত্যার খবর থাকছেই।

দেশ যখন নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ হয়েছে, এবং সবাই যখন মধ্যম আয়ের দেশ হওয়ার স্বপ্নে বিভোর তখন আমাদের দেশের ভিতরের সামাজিক অবস্থার চিত্র এমন। মানুষ যেনো প্রতিদিন একটু একটু করে পশুর চেয়েও অধম হয়ে যাচ্ছে। এখানে মত প্রকাশের স্বাধীনতা থাকছে না, এখানে নারীর স্বাধীওনতা খর্ব করার অভিপ্রায়ে চলছে ধর্ষণের প্রতিযোগিতা, শিশু হত্যা করে শিশুর বেড়ে উঠার পথকে করা হচ্ছে প্রতিবন্ধক। বিজ্ঞানের আবিস্কার আজ আমাদের সমাজে আশীর্বাদ না হয়ে এসে অভিশাপ হয়ে আসন গেড়ে বসতে চাইছে। এহত্যাকান্ড গুলো কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এইগুলি ধারাবাহিকভাবে ঘটছে। আমাদের রাষ্ট্র কে একটি অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিনত ক্রার সগভীর চক্রান্তের অংশ হচ্ছে এই হত্যা, ধর্ষণ আর গুম খুনের ঘটনা। ক্ষমা করো নাথ, ক্ষমা করো। এ পাপের যে অভিসম্পাত,

হোক বিধাতার হাতে নিদারুণতর।
তুমি ক্ষমা করো, তুমি ক্ষমা করো।