খালেদা পিছু হটলেন!

কাজী রাশেদ
Published : 26 July 2015, 08:28 AM
Updated : 26 July 2015, 08:28 AM

২০০৮ এর সাধারন নির্বাচনের কিছুদিন পর থেকেই ততকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা যিয়া বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠের মহাজোট সরকারকে কারচুপির মাধ্যমে জয়ী সরকার বলে বক্তৃতা বিবৃতি দিয়ে আসছিলেন। এমনকি জাতীয়তাবাদি দলের সন্মেলনের মুল শ্লোগান ছিল দেশ বাঁচাও, মানুষ বাঁচাও। অথচ সেইসময় মহাজোট সরকার এমন কোন কর্মকাণ্ড করে নাই যে দেশ বাচাতে এবং মানুষ বাচাতে আন্দোলনের ডাক দিতে হবে। ২০০১ সালের নির্বাচনে জামাত সমর্থিত চারদলীয় জোট ক্ষমতায় এসে যে তান্ডোব চালিয়েছিলো ২০০৮ সালে সেইসব কোন ঘটনা কিন্তু ঘটে নাই। এসব পুরানো ঘটনা, ইতিহাস তার সাক্ষী হয়ে আছে।

এরপরে মহাজোট সরকার যখন সংবিধানে সংশোধনী এনে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার বিলুপ্তি আনলো তখন থেকে বেগম সাহেব রাস্তায় নেমে এলেন। অবশ্য এখানেও দুষ্ট লোকেরা বলে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল নয় বরঞ্চ ততোদিনে তাঁর পেয়ারা খাস লোকেরা একে একে জেলখানায় ঢুকে গেছেন এদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকিস্তানী বাহিনীর সাথে কাধে কাঁধ মিলিয়ে এদেশের সাধারন মানুষকে হত্যার অপরাধে। আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল তাদের ঐতিহাসিক বিচারিক কার্যক্রম শুরু করার পর থেকেই মুলত বেগম খালেদা যিয়ার ঘুম হারাম হয়ে যায়। তাঁর স্বপ্নের রাজনৈতিক কুট কৌশল আস্তে আস্তে সাধারনের কাছে পরিস্কার হয়ে উঠতে শুরু করে।

গতকাল ব্রান্মনবাড়িয়া জেলা আইনজীবী সমিতির নেত্রিবিন্দের সাথে মত বিনিময় কালে বেগম খালেদা যিয়া আগামী নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই হতে হবে এমন কোন কথা নেই বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন একটা সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ নিরবাচন হতে যাতে করে সাধারন মানুষ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে।

আহা কি সুন্দর এবং বাস্তব ধর্মী কথা। ২০১৩ সাল থেকে ২০১৫ সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত উনার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবীতে যে ঘেরাও, জ্বালাও পোড়াও এবং মানুষ হত্যা হয়েছে সেইসব মানুষ হত্যার কি হবে। যদি স্বীকার করেই নিতে হয় এইসব হত্যাকান্ডের সঙ্গে তার দল জড়িত ছিলো না তারপরেও কিন্তু এর দায়দায়িত্ব থেকে তিনি রেহাই পাবেন না। তার হুকুমেই কিন্তু প্রতিটি আন্দোলন শুরু হয়েছে। তার নেতৃত্বেই পথে ঘাটে আগুনে বোমা মেরে মানুষ হত্যা এবং ঝলছে দেওয়া হয়েছে। আজও সেইসব স্বজন হারা, আগুনে দগ্ধ হওয়া মানুষগুলোর স্মৃতি থেকে এইসব ঘটনা মুছে যায় নাই।

এদেশের মানুষ নির্বাচনকালিন সময় নিজেদের ক্ষমতার কিছু স্বাধ পায়। যারা নির্বাচিত হতে চান তারা সাধারনের বাড়িতে বাড়ীতে যেয়ে ভোট চেয়ে নিজেদের মাটীর কাছে নামিয়ে আনেন। তাই যে কোন নির্বাচনই এদেশের সাধারন মানুষের কাছে অনেক মুল্যবান। জনগন যে স্বাধীনভাবে ভোট প্রদান করতে পারেন তার প্রমাণ গত পাচ ছয়টি সিটি নির্বাচন। প্রায় সবকটি সিটিতেই বিএনপি জয়লাভ করেছিলো।

সাম্প্রতিককালের ঢাকা উত্তর ,দক্ষিন এবং চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনেও সাধারন মানুষ ভোট দিতে পেরেছে। কিছু অনিয়ম ছাড়া আর কিছু সংবাদ মাধ্যমের উল্টাপাল্টা সংবাদ পরিবেশন ছাড়া নির্বাচন সুষ্ঠ হয়েছে বলা যায়। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের স্থানীয় নির্বাচনে এর চেয়ে অনেক বেশী সহিংসতার ঘটনার সংবাদ আমরা পাই। আসলে বেগম খালেদা যিয়ার মুলত আন্দোলন ছিলো তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন নয়। লক্ষ্য ছিলো যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানো। আজ যখন দেখছেন যুদ্ধাপরাধীদের বাচানোর কোন রাস্তাই খোলা নেই এবং তাদের বাচাতে গিয়ে নিজের দলসহ বিলুপ্তির পথে হাটছেন তখন তিনি তার সুর পালটে সোজা পথে এসেছেন। আমরা তার এই শুভচিন্তাকে সাধুবাদ জানাই। নির্বাচনে জয় পরাজয় থাকবেই। একটা দল কখনোই চিরকাল ক্ষমতায় থাকতে পারেনা। কিন্তু তাই বলে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্যে আমাদের স্বাধীনতা বিরোধীদের সাথে নিয়ে রাজনীতি করতে হবে। এমন রাজনীতির দিন মনে হয় শেষ হয়ে এসেছে।