তদন্তে অগ্রগতির কথা শোনা যায়, কিন্তু নীলাদ্রি দেশে থেকেই মরে

কাজী রাশেদ
Published : 10 August 2015, 10:52 AM
Updated : 10 August 2015, 10:52 AM

এবার চাপাতির আঘাতে খন্ডবিখন্ড হলেন নীলাদ্রী চট্রোপধায়ায়। পাচ তলার উপরে উঠে স্ত্রী পরিজনের সামনে চাপাতির আঘাতে কুপিয়ে কুপিয়ে খণ্ডবিখণ্ড করা হলো নীলাদ্রিকে। না কেউ এগিয়ে আসেনি, কেউ সাহায্য করেনি। শুধুমাত্র তাকিয়ে তাকিয়ে দেখেছে নিজের স্ত্রী আর স্বজনেরা নিলাদ্রীর খন্ড বিখণ্ড হওয়া। নীলাদ্রি কি হঠাত করেই এই আক্রমনের শিকার হলো? না, তা নয়।

নীলাদ্রি  ৮৭ জন তালিকাভুক্তির একজন ছিলো ঘাতক হেফাজতের। এরপরে আরো একবার ১৭ জনের যে তালিকা প্রকাশ করা হয়েছিলো সেখানেও তিনি ছিলেন। টেলিফোনে প্রতিনিয়ত হুমকির কথা না হয় বাদই দিলাম। নীলাদ্রি এবং তার স্ত্রী এই হুমকিধামকির প্রেক্ষিতে পুলিশের কাছে গিয়েছিলেন। পুলিশ আশ্চর্য জনক হলেও সত্য লেখিকা তসলিমা নাসরিনের মতো বলেছেন দেশ ছেড়ে চলে যান। তাড়াতাড়ি বিদেশ চলে যান।

সত্যি সেলুকাস, কি বিচিত্র এই দেশ!। পুলিশের কাছে নিরাপত্তা চেয়ে সাধারন ডায়েরি করতে যেয়ে শুনতে হবে বিদেশ চলে যাবার উপদেশ। তবে কি সেই কথাটিই সত্য? এই স্বদেশ আমার নয়?

মুক্ত চিন্তা বা মুক্তবুদ্ধির মানুষ বাংলাদেশে থাকবেনা। থাকবে তেতুল হুজুরের নির্দেশনা অনুযায়ী তেতুল পুরুষ এই চিন্তা চেতনা কে ধারন করেন বি এনপি, জামাত এবং জাতীয় পার্টি। অন্যদিকে আমরা মনে করেছিলাম অন্যান্য সবাই এই তেতুল তত্বের বিরুদ্ধে। আমরা এই বিরোধীতায় পেয়েছিলাম সরকারকে। কিন্তু এই সরকারের পুলিশ যখন বলে বিদেশ চলে যান তখন আমাদের মনে কি প্রশ্ন আসতে পারে, সেটা কি ভেবে দেখতে হবে এবার?

প্রতিবার একেকজন ব্লগার চাপাতির আঘাতে কুপিত হোন এবং যথারীতি পত্র পত্রিকা থেকে শুরু করে সকল মহল খুব হই চই করে উঠেন। ক্ষমতা অক্ষমতার প্রতিটা স্তর থেকে একইরকম কথা উচ্চারিত হতে থাকে।

এফবিআই আসে, তদন্ত চলে, তদন্তে অগ্রগতির কথা শোনা যায়। খুনিরা পার পাবে না ধরনের আশ্বাস পাওয়া যায়। ফেসবুক আর টুইটার সহ সকল সামাজিক মাধ্যমগুলোতে নিহতের খণ্ডবিখণ্ড লাশের ছবি ছাপিয়ে হাহাকার করা হয়। সব কিছুই হয়। কিন্তু নিহত যেমন আর ফিরে আসে না। ঠিক তেমনি খুনিরাও বাংলাদেশে ধরা পরে না।

এ যেনো টম আর জেরির মজার খেলা। এ খেলা চলতেই থাকবে। সাথে সাথে তালিকাভুক্তদের লাশের সংখ্যা বাড়তেই থাকবে। প্রতিবার তদন্ত কমিটি গঠন হবে, তাদের সাহায্যের জন্যে আসবে এফ বি আই, অনেক কথা বলা হবে। খুনি যেই হোক তাদের নিস্তার নেই বলে হুঙ্কার শোনা যাবে। তারপর সব কিছু চলে যাবে স্মৃতির মনিকোঠায়। তারপর আরো এক সন্ধ্যায় খবর হবে এক ব্লগারকে চাপাতি দিয়ে খুন করা হয়েছে। সেই ব্লগার হতে পারে যে কেউ।