আসা যাওয়ার পথে ধারে

কাজী রাশেদ
Published : 27 Dec 2015, 07:16 PM
Updated : 27 Dec 2015, 07:16 PM

বলতে গেলে প্রায় প্রতিদিনই ঢাকা শহর একটু একটু করে বাড়ছে। আড়ে বাড়ছে, দীঘে বাড়ছে। বাড়ছে লোক সংখ্যাও। সরকারী হিসাব অনুযায়ী প্রায় ১ কোটি মানুষের বাস এই ঢাকা শহরে। আর বেসরকারী মতে এই জনসংখ্যার হিসাব প্রায় দেড় কোটি ছাড়িয়েছে। বিশ্বের অন্যতম জন ঘনত্বের শহর হিসেবে রেকর্ডের খাতায় নাম লেখা হয়ে গেছে অনেক আগেই। মাত্র মাসখানেক আগেই আরো বেশ কয়েকটি ইউনিয়ন কে ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের দুই অংশের মধ্যে একীভুত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এরফলে ঢাকা শহরের পরিধি যেমন বাড়বে তেমনি লোকসংখ্যাও বেড়ে যাবে বলাই বাহুল্য।

জন ভারাক্রান্ত এই ঢাকা শহরে একটি অন্যতম ব্যস্ত যায়গা ফার্মগেট। উত্তর থেকে দক্ষিন, পূর্ব থেকে পশ্চিম যেখানেই যেতে চান এই ফার্মগেট হয়ে যাওয়াটাই অনেক সহজ। ঢাকা শহরে মধ্যস্থলেই পরিনত হয়েছে এই ফার্মগেট এলাকা। এই ফার্মগেটে একটি পার্ক আছে দীর্ঘ দিন যাবত। আগে এই পার্কটির মধ্যে ছিলো সবুজের সমারোহ। যাওয়া আসার মাঝে অনেক পরিশ্রান্ত পথিক একটু জুড়িয়ে নিতেন তাদের পথচলার ক্লান্তি টুকু। সে পার্ক দিনে নিনে এখন তার সেই সুবজ বাগান হারিয়েছে, সাধারন মানূষ এখন খুব ভয়ে ভয়েই পার হোন এই পার্ক। নেশাখোর, বাস্তুহারা, উচ্ছৃঙ্খল ছেলে পেলে আর আছে আশেপাশের কিছু মহল্লার কিশোর দের খেলাধুলা। সেইসাথে দিনে রাত্রে প্রকাশে মুত্র ত্যাগ করার একটি বিনা পয়াসার ক্ষেত্র। ঢাকা শহরে পায় সব পার্কগুলোরই চেহারা একইরকম। কোনটারই সবুজের ছোঁয়া নেই। স্থানীয় কিশোর কিশোরীরা কিশোরীদের সংখ্যা নিতান্তই হাতেগোনা। আমাদের দেশ এখন হঠাত করেই কিশোরিদের খেলার জন্যে অনিরাপদ হয়ে গেছে। এই প্রক্রিয়াটা শুরু করেছে এদেশের ক্ষমতায় থাকা সামরিক সরকার গুলো এবং সেই সাথে গনতান্ত্রিক সরকারগূলোও এই ক্ষেত্রে কোন অংশেই কম যান নাই। যাহোক এখন কিশোরীরা খেলে না। এখন কিশোরীরা মাথায় স্কার্ফ পরে মায়েদের সাথে বড়োদের মতো পারিবারিক আড্ডায় মেতে উঠে। কিছু ব্যতিক্রম আছে কিন্তু সেইসব কিশোরীরাও মাঠে খেলার সুযোগ পান না। একমাত্র কিছু কিশোর বালকেরাই খেলে থাকা।

সেটা ভিন্ন প্রসংগ। এই ফার্মগেট দিয়ে যাওয়া আসার মাঝেই একদিন হঠাত করেই চোখে পড়লো ফার্মগেট প্রধান ফুট ওভার ব্রীজ সংলগ্ন একটি সাদা ছাউনি এবং সেই পার্কটির এক জায়গায় একটু জায়গা নিতে বাঁশের একটি চারদিক খোলা একটি ঘর তৈরী হয়েছে। সাদা ছাউনিতে স্থানীয় কাউন্সিলর সাহেবের সৌজন্যের কথা সংবলিত একটি ব্যানার। "অপরুপ বাংলা"। "অপরুপ বাংলা" র সেই ব্যানারে মাদকমুক্ত সমাজ গঠনের এবং পথশিশুদের সাহায্যার্থে এগিয়ে আসার আহবান। ছাউনিতে পথশিশুদের এবং গরীব শিশুদের বিনা পয়সায় রক্ত পরীক্ষার সুযোগ এবং সামর্থ্যবান্ দের স্বল্পমুল্যে রক্তের বিভিন্ন পরীক্ষা করানো ব্যবস্থা করা হয়েছে। সামর্থ্য বানদের কাছ থেকে সংগ্রহিত অর্থ দিয়ে পার্কে স্থাপিত বাঁশের ছাউনিওয়ালা ঘরে পথশিশুদের শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

আমাদের যাওয়া আসার পথে এইরকম অনেক ব্যক্তি উদ্যোগই চোখে পরে। যাখন আমরা সবাই মিলে এই সমাজটা নষ্ট হয়ে গেছে বলে প্রতিনিয়ত সমালোচনার ঝড় তুলি তখন এরকম একটি উদ্যোগ সত্যি আশার পথ দেখায়। আমাদের দেশে কিছু কিছু এনজিও আছে যারা এধরনের উদ্যোগ গ্রহন করে থাকে। কিন্তু স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের এইরকম উদ্যোগে এগিয়ে আসার উদহারন খুবই কম। স্থানীয় জন প্রতিনিধিরা যদি তাদের নিজেদের এলাকার পথশিশু এবং ছিন্নমুলের বাচ্চাদের শিক্ষার ব্যাপারে, তাদের হাল্কা কাজের সুযোগ তৈরী করার কাজে উদ্যোগ গ্রহন করেন তাহলে সমাজে অবস্থিত মাদকের মরণ ছোবল থেকে এইসব কোমলমতি শিশুদের বাচানো যেতে পারে। শুধু তাই নয় এইসব পথশিশুদের পয়সার লোভ দেখিয়ে জঙ্গী গোষ্ঠী গুলো কাজে লাগাতে পারবে না। আমাদের দেশের কাউন্সিলর থেকে শুরু করে সংসদ সদস্য, মন্ত্রী বাহাদুরেরা ক্ষমতায় আসেন এবং যান, এরমাঝে অনেক কথার, অনেক আশার বাণী শুনিয়ে আশ্বস্ত করেন। স্বপ্ন দেখান দিন বদলের, স্বপ্ন দেখান দেশ বাচানর, মানুষ বাচানোর। কিন্তু কারযকরী পদক্ষেপ নেন না কোনসময়। ফার্মগেটের কাউন্সিলরে এই উদ্যোগ অনেক বড়ো কিছু নয় তবুও আশা জাগায় মানুষের মনে। আবার প্রেরণা হিসেবেও সাহস জোগাবে অনেক মানুষের।

পরিসংখ্যানে দেখা গেছে মহল্লার বিভিন্ন ছোটখাটো অপরাধে, ছিনতাই এবং চুরি-চামারিতে এইসব পথশিশুরাই বেশির ভাগ দায়ী। বড়ো বড়ো অপরাধীরা এইসব পথশিশুদের বিভিন্ন অপরাধে কাজে লাগায়। মাদকের বাহক হিসেবে ব্যবহৃত হতে হতে নিজেরাই মাদকে জড়িয়ে পরে। এইসব ছিন্নমূল এবং পথশিশুদের কে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা যদি শিক্ষাগ্রদানের আওতায় আনতে পারেন, এবং অবসর সময়ে তাদেরকে বিভিন্ন জনহিতকর কাজে লাগাতে পারেন কাজের বিনিময় খাদ্য প্রকল্পের আওতায় তাহলে আশা করা যায় স্থানীয় ভাবে সমস্যাগুলো অনেকটাই সমাধান করা সম্ভব। যে শিশু গূলো ফার্মগেট এলাকায় শিক্ষার আওতায় আনা যাবে তাদের উপড় দায়ীত্ব দেয়া যেতে পারে পড়াশোনার পাশাপাশি এই পার্কের রক্ষনাবেক্ষনের। এতে করে এইসব শিশুদের পেটের ক্ষুধার জন্যে আর অন্যের মুখাপেক্ষী হতে হবে না। এবং এইসব শিশুরা মাদকের মরণ কামড়ে মারা পরবে না।