ব্রাহ্মনবাড়িয়াঃ এড়িয়ে যাওয়ার পথ নেই?

কাজী রাশেদ
Published : 17 Jan 2016, 11:03 AM
Updated : 17 Jan 2016, 11:03 AM

ব্রাহ্মনবাড়িয়ায় ঘটে যাওয়া মাদ্রাসা ছাত্রের মৃত্যু এবং তাকে কেন্দ্র করে যে নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞ মাদ্রাস ছাত্ররা চালিয়েছে তার নজীর খুব কম। বিশেষ করে উপমহাদেশের প্রখ্যাত ওস্তাদ আলাউদ্দিন খানের স্মৃতি বিজড়িত সংগীত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আগুন দিয়ে ভস্মীভূত করার ঘটনা মানুষকে চিন্তিত করে তুলেছে।

সংবাদের মাধ্যমে যে খবর আমাদের কাছে এসেছে তা হলো একজন মাদ্রাসা ছাত্রের সাথে পরিবহন শ্রমিকের কথা কাটাকাটি অথবা মোবাইল ফোন কিনতে যেয়ে মাদ্রাসা ছাত্রের সাথে দোকাণির কাথা কাটাকাটিকে কেন্দ্র করে যে গন্ডগোলের সুচনা, তারই জের ধরে ব্রাহ্মনবাড়িয়ার এই নারকীয় তান্ডব। হাজার হাজার মাদ্রাসা ছাত্র ব্রাহ্মনবাড়িয়ার রেল স্টেশন থেকে শুরু করে শহরের দোকানপাঠ, সাংস্কৃতিক সংঘঠনের অফিস, উস্তাদ আলাউদ্দিন খানের স্মৃতি বিজড়িত সংগীত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কিছুই বাদ যায় নাই তাদের ধ্বংস তান্ডবের হাত হতে।

এই ধ্বংস তান্ডবের পর পরই সরকার কর্তৃক সেখানকার এ,এস,পি এবং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করা হয়েছে এবং হাযার খানেক অজ্ঞাতনামার নামে মামলা করা হয়েছে। একটি তদন্ত কমিটি ঘঠন করা হয়েছিল এবং শেষ খবরানুযায়ী তারা তাদের তদন্তের কাজ সম্পন্ন করেছে।

ব্রাহ্মনবাড়িয়ার এই ধ্বংস তান্ডব শুধুমাত্র এক মাদ্রাসা ছাত্রের সাথে পরিবহন শ্রমিকের কথা কাটাকাটি বা মোবাইল কিনতে যেয়ে দোকানীর সাথে ঝগড়ার বিষয় নয়।

হাজার হাজার মাদ্রাসা ছাত্রের একসঙ্গে শহরের বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা, লূঠপাট এবং অগ্নিসংযোগ করার পিছনে অবশ্যি এক দুরভিসন্ধি কাজ করছে। এই দুরভিসন্ধি প্রকাশ পেয়েছে মাদ্রাসার প্রিন্সিপালের সংবাদ সন্মেলনের মধ্য দিয়ে। মাদ্রাসা অধ্যক্ষ মোবারক উল্লাহ সংবাদ সন্মেলনে এই হামলার জন্য ধর্মের সেন্টিমেন্ট কে দায়ী করেছেন। তিনি বলেছেন কথা কাটাকাটি বা ভাড়া নিয়ে বচসা নয়। বরঞ্চ মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রী কর্তৃক একটি মাদ্রাসা ও একটি মসজিদ বন্দের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে এই ক্ষোভ মাদাসা ছাত্র ও জনগন দেখিয়েছে। অথচ এটি একটি সম্পন্ন মিথ্যা তথ্য। মন্ত্রী সায়েদুল হক দ্বারা কোন মসজিদ বা মাদ্রাসা বন্ধের সিদ্ধান্ত আসে নাই। এই মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন খবর টিকে এই চিহ্নিত মাদ্রাসা অধ্যক্ষ পরিকল্পিতভাবে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে প্রচার করছেন। অন্যদিকে আমাদের দেশের রাজনৈতিক দল গূলো, সুশীল সমাজ এবং যারা ছাত্রলীগ বা ছাত্র দলের যেকোন বাড়াবাড়িতে দেশ রসাতলে যাচ্ছে বলে ত্রাহি ত্রাহি রব তোলেন তারা ভয়ঙ্কর ভাবে চুপ করে আছেন।

প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে আমাদের দেশের মন্ত্রী সাংসদ, বিএনপির চেয়ারপারসন থেকে সর্বস্তরের নেতাকর্মী এবং বিভিন্ন বাম সংঘঠনের নেতারা তারস্বরে দেশ গেলো দেশ গেলো বলে চিৎকার করে উঠছেন না। অথচ ব্রাহ্মনবাড়ীয়ার ঘটনা দিয়ে কিন্তু এই চিহ্নিত শক্তি বাংলাদেশের মানুষকে তাদের পরিকল্পনার কথা পরিস্কার ভাবে বুঝিয়ে দিয়ে গেলো।

চাঁদে সাইদীর মুখ দেখা আর ব্রাহ্মনবাড়িয়ার ধ্বংসযজ্ঞের মধ্যে কিন্তুই কোন ফারাক নেই। ৫ই মে হেফাজতের তান্ডব কিন্তু একই ধারার পরিকল্পনার অংশ। ব্রাহ্মনবাড়িয়া আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে তাদের শক্তি এবং পরিকল্পনার কথা জানিয়ে দিয়ে গেছে। এখন আমাদের সিদ্ধান্ত আমরা এই অপ্সশক্তিকে বাড়তে দিবো নাকি যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন করে দেশ এবং রাষ্ট্রকে বাঁচাবো। এবং এখনি আমাদের পথ বেছে নিতে হবে, নচেত সিদ্ধান্ত গ্রহনের সময় দ্রুত শেষ হয়ে যাচ্ছে।

পাকিস্তান আমলের মতো এবং স্বাধীনতা পরবর্তী সামরিক সরকারগুলো এদশের সহজ সরল মানুষগুলোকে ধর্মের দোহাই দিয়ে অনেক অপকর্ম করেছে, সেইসব অপকর্মে আমাদের দেশের অনেক প্রগ্রতিশীল রাজনইতিক শক্তিও শরীক হয়েছেন। এখনো কিছু কিছু রাজনইতিক শক্তি যারা নিজেদের প্রগ্রতিশীল রাজনীতির ধারক বাহক হিসেবে সোল এজেন্ট মনে করেন তারাও এইসব শক্তি বা তাদের দোশর দের সাথে গলা মিলিয়ে তাল দিয়ে যাচ্ছে। এবং এই তালের হাওয়াতেই ধর্মের নামে যারা ফায়দা লূঠতে চায় তাদের ইন্ধনে পরিনত হচ্ছে।