গুলশান ট্রাজেডি কী বার্তা দিয়ে গেল?

কাজী রাশেদ
Published : 2 July 2016, 03:32 PM
Updated : 2 July 2016, 03:32 PM

ঝরে গেলো দুজন পুলিশ অফিসার সহ আরো পঁচিশ ছাব্বিশজন দেশি-বিদেশি প্রাণ। বিশজন বিদেশিও আছে এই প্রাণহানির মর্মান্তিক দুর্ঘটনায়। শুরু হয়েছিলো কবি সামসুর রহমান, হুমায়ন আজাদ কে হামলার মধ্য দিয়ে। এরপরে একে একে প্রান দিয়েছে ৪৭ জন। এরমধ্যে বিদেশী নাগরিক সহ লেখক, ব্লগার, প্রকাশক থেকে শুরু করে নিরীহ সেবায়েত। হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ খৃষ্টান আস্তিক নাস্তিক পীর মাওলানা কেউ রেহাই পায় নি হত্যাকান্ডের হাত থেকে।

সচেতন নাগরিকসহ সর্বস্তরের মানুষ এই অসুভ শক্তির বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি বার বার আহবান জানিয়েছে। একেবারে অংকুরেই এদের বিনাসে মানুষ তাগিদ দিয়েছে প্রত্যেক হত্যাকান্ডের অব্যহতি পরেই। কিন্তু কখনো ব্লগারদের শাসিয়ে, কখনো নাস্তিকদের শাসিয়ে, কখনো বিছিন্ন ঘটনা অথবা পুরোপুরি বিরোধী দলের চক্রান্ত বলে খুনী চক্রকে এড়িয়ে চলার চেষ্টা চালানো হয়েছে। মাঝে দু একজনকে জনগনের সাহায্যে খুনীদের কাউকে কাউকে ধরা সম্ভব হলেও আইনের মারপ্যাচে জামিনে মুক্ত হয়ে আবার খুন করেছে।

একশ্রেণীর উম্মাদ এদেশের স্বাদীনতা বিরোধি শক্তির পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় বাংলাদেশ কে একটি সন্ত্রাসী ও অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিনত করার গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। এদের কাছে মানবতার কোন মুল্য নেই। এরা ধর্মের শান্তিকে জলাঞ্জলী দিয়ে অশান্তি কায়েম করতে চায়। এখানে জড়িত আছে দেশী বিদেশী, আঞ্চলিক আন্তর্জাতিক এবং সাম্রাজুবাদী গোষ্টীর বহু হিসাবের ফলাফল ।

যেসব বিদেশি নাগরিক প্রাণ দিলান, প্রাণ দিলেন আমাদের পুলিশ বিভাগের সাহসী অফিসার। প্রাণ দিলো কিছু নিরাপরাধ মানুষ তার সংগে হারালাম দেশের ভাবমুর্তি। ইউরোপ আমেরিকা অষ্ট্রেলিয়া সহ বিভিন্ন দেশ আমাদের দেশের নিরাপত্তাহীনতার অভিযোগে বিভিন্ন সফরসূচী বাতিল করেছিলো এই হত্যাকান্ডের মধ্য দিয়ে তাদের আশংকা সঠিক বলে প্রমানিত হয়ে গেলো। কিছু সংখ্যক বিপথগামী তরুনদের উগ্র কার্যকলাপকে প্ররোক্ষভাবে এড়াতে গিয়ে আজ স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব হুমকীর মুখে। আজ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারত যদি জংগী বাহিনীর মোকাবেলার জন্য তথাকথিত শান্তি বাহিনী মোতায়েনের প্রস্তাব দেয় তবে কি তা এড়িয়ে যাবার পথ পাবে সরকার?

বেশি কথন, জঙ্গি গোষ্ঠীর উত্থানকে পাত্তা না দিয়ে ব্লেইম গেম খেলার যে মারাত্মক মরণ খেলা শুরু করেছিলো তারই বহির্পকাশ আজকের এই ট্রাজেডি।  গতরাতের ট্রাজেডির করুণ সমাপ্তি হয়েছে। কয়েকজন ভাগ্যক্রমে বেঁচে গেলেও আমরা বিশজন বিদেশিকে বাঁচাতে ব্যর্থ হয়েছি। আমাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েও নতুন করে ভাবতে হবে। এতো তল্লাশি হবার পরেও কি করে কুটনৈতিক পাড়ায় অবস্থিত একটি রেস্তোরায় এতো বিপুল সংখ্যক অস্ত্রসস্ত্র সহ জঙ্গিরা সংঘঠিত হতে পারলো তা খতিয়ে দেখতে হবে। আবারো বলছি এই জঙ্গি গোষ্ঠীকে দেশের ভিতরে অবস্থিত যুদ্ধাপরাধীদের বিপুল বিত্ত সম্পদ সহায়তা করছে। অধ্যাপক আবুল বারাকাত বহুদিন থেকে বলে আসছে হাজার হাজার কোটি টাকা এখন এই গোষ্ঠীর বার্ষিক আয়। বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্টান গুলো,  অর্থকরী প্রতিষ্ঠানগুলো অবাধে ব্যবসা করে আসছে। এরমধ্যে কিছু সংস্থা সরকারের বিভিন্ন কর্মকান্ডে আর্থিক সহায়তা করে নিজেদের আখের গুছিয়েই চলেছেন। দেশ এবং জাতির স্বার্থে এখনি এসব প্রতিষ্ঠানে তাদের কার্যকলাপ বন্ধ করে দিয়ে সরকারি নিয়ন্ত্রন প্রতিষ্ঠা করতে হবে।  দেশের বিভিন্ন পত্রিকা এবং ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় এই গোষ্ঠী ঢুকে পরেছে। বিভিন্ন মিডিয়ার নিউজ পরিবেশনায় তা স্পষ্ট হয়ে ফুটে উঠছে। এরা দেশ এবং জাতিকে দেশে এবং বিদেশে ঋণাত্মকভাবে তুলে ধরার মিশনে পরিকল্পিতভাবে কাজ করে যাচ্ছে। গতকালে ঘটনা, রানা প্লাজা ঘটনা  প্রচারের মাধ্যমে  তাই প্রমাণিত হচ্ছে। এই গোষ্ঠী সুকৌশলে ক্ষমতাশীন দলের মুল এবং অঙ্গ সংঘঠনগুলোতে ঢুকে পরেছে। বিভিন্ন অংগ সংঘঠনের কার্যকরী কমিটিতে ঢুকে পরে ক্ষমতার ভাগিদার হিসেবে নানা অপকর্ম করে বেড়াচ্ছে। এরাই ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ বিভিন্ন সংঘঠনের নামে খুন-ধর্ষণ লুটপাঠ করে ভাবমুর্তি বিনষ্ট করছে। এ যেন '৭৫ এর আগের বাংলাদেশ। সরকার, দেশ এবং জাতিকে পুরোপুরি ব্যর্থ করে দেওয়ার গভীর চক্রান্তের নীলনকশায় মেতে উঠেছে পরাজিত  হিংস্র পুরানো শকুন।

গুলশানের এই ট্রাজেডি সরকার এবং বাংলাদেশের মানুষ এক বার্তা দিয়ে গেলো। জনগন এবং সরকার কী তা বুঝতে পেরেছে?