ট্যানারী শিল্পে অন্ধকার, সামনে ক্ষুধার রাজ্য

কাজী রাশেদ
Published : 9 April 2017, 11:58 AM
Updated : 9 April 2017, 11:58 AM

গত কয়েকদিন আগে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত পরিবেশ বাদীদের করা মামলায় রায় দিয়ে বাংলাদেশ লেদার শিল্পের মৃত্যুদন্ড ঘোষনা করেই রায় কার্যকরে নেমে পড়েছেন।

গত শনিবার সকাল থেকেই একাধিক দল হাজারীবাগের ২৩৫ টি ট্যানারীর বিদ্যুৎ লাইন, গ্যাস লাইন এবং পানির লাইন কেটে দিয়ে চলে গেছেন। শুধুমাত্র এই ২৩৫টি ট্যানারী নয়, হাজারীবাগে অবস্থিত আরো ৫ শতাধিক এজেন্ট, দালালী অফিস, বায়িং অফিস, ছোট খাটো পাদুকা শিল্প, চামড়াজাত দ্রব্যের কারখানা সহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এর বিদ্যুৎ, পানি এবং গ্যাস সংযোগ কেটে দিয়ে চলে গেছে।

বেকার হয়ে গেছেন দুই লক্ষাধিক শ্রমিক। কোটি কোটি টাকার প্রক্রিয়া জাত চামড়া ড্রামে পচছে। মাঝপথে আটকে আছে কোটি টাকার রফতানীযোগ্য লেদার।

পরিবেশ রক্ষার জন্য চামড়া শিল্প হেমায়তপুরে স্থানান্তর একটি চলমান প্রক্রিয়া। প্রায় ষাট বছরের পুরানো এই শিল্প কোন রকম প্রস্ততি ছাড়াই স্থানান্তর হয়ে যাবে এই আশা করা বাতুলতা মাত্র।
ট্যানারী মালিকদের তথ্য অনুযায়ী প্রতিটি ট্যানারী স্থানান্তরে প্রায় সাড়ে চার হাজার কোটি টাকার প্রয়োজন। সরকার এই পর্যন্ত মাত্র ২৫০ কোটি থেকে ৩৫০কোটি টাকা সহায়তা করেছে। দুই হাজার আট সালের মধ্যে যেখানে এই শিল্প স্থানান্তরের কথা, সেই শিল্প আজো নতুন জায়গায় স্থানান্তরের কোন সুবিধাই প্রস্তুত করে উঠতে পারে নাই।

কখনো জরিমানার ভয় দেখিয়ে, কখনো কাচা চামড়া ঢুকতে না দিয়ে বিভিন্ন ভাবে এই হাজারীবাগ থেকে সরানোর চেষ্টা চালানো হয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো এখনো এই শিল্প স্থানান্তরের মতো সুবিধা নতুন জায়গায় গড়ে উঠে নি।

এতো বড়ো এক শিল্প এলাকা সন্ধ্যের পরেই হয়ে যায় ভুতুরে পল্লী। সারাদিন রাত যেখানে কর্মযোজ্ঞ চলতো সেখানে আজ কবরের নিস্তব্ধতা। প্রতিটি মানুষ অনিশ্চয়তায় দিন কাটাচ্ছে। প্রায় সকলের মুখে একই কথা, নিশ্চয় কারো স্বার্থ হাসিল করার মিশনে নেমেছে পরিবেশ বাদীরা।যখন মাননীয় প্রধান মন্ত্রী লেদার সেক্টরকে ইয়ার অব দ্য প্রোডাক্ট ঘোষনা করেছেন সেই বছর প্রস্তুতি ছাড়াই লেদার শিল্প বন্ধ হয়ে যাওয়া সেই ষড়যন্ত্র এরই ফসল ছাড়া অন্য কিছু হতে পারে না।

মাত্র দুইমাস পরে ঈদ রোজা। সারাবছর কাজ করে এই মাসের অপেক্ষায়। সন্তান সন্ততি নিয়ে এই লাখো লাখো পরিবার কিভাবে বাঁ, কিভাবে ঈদ করবে সেই চিন্তাও করার প্রয়োজন কারো পরে নি।