২১শে আগস্টের খুনিরা আজো অপেক্ষায়

কাজী রাশেদ
Published : 20 August 2017, 08:17 PM
Updated : 20 August 2017, 08:17 PM

পঁচাত্তরের কালো রাত্রিতে খুনি আর বিশ্বাসঘাতকদের হাতে জাতির জনকের সপরিবারে হত্যা খুনিদের খুনের উদ্দেশ্য পুরণে ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। জাতির কাছে থেকে বঙ্গবন্ধুর নাম নিশানা মুছে ফেলার মিশন নিয়ে নামলেও বেঁচে যান বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা এবং শেখ রেহানা। সেইসাথে বাংলার মানুষের হৃদয়ে বেঁচে থাকেন বাংলার অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিব। আক্ষরিক অর্থেই এক মুজিব লোকান্তরে গেলেও লাখো লাখো মুজিব সৈনিক বাংলার হাটে ঘাটে মাঠে ঘরে ঘরে তৈরী হয়। মৃত বঙ্গবন্ধু জীবিত বঙ্গবন্ধুর চাইতে আরো শক্তিশালী হয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সমাজে এবং সার্বিকভাবে দৈনন্দিন জীবনে ক্রমশ বিস্তার লাভ করেন। সেইসাথে বঙ্গবন্ধু কন্যাদ্বয় নিজেদের রাজনৈতিক প্রজ্ঞা আর দেশপ্রেমের দ্বারা পিতার আদর্শকে ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হোন।

নানা চক্রান্ত, নানা হত্যা চক্রান্তকে মোকাবেলা করে বাংলাদেশের রাজনীতিতে আবারো পিতার হাতে তৈরী দলকে জনগনের কাছে নিয়ে যেতে সফল হোন। বার বার ক্ষমতার কাছাকাছি যেয়েও ক্ষমতায় যেতে পারেন নি কিন্তু হাল ছাড়েন নাই। ছিয়ানব্বইয়ে আগ পর্যন্ত সকল অশুভ শক্তি শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে বহু চক্রান্ত, বহু ষড়যন্ত্র সংঘটিত হয়েছে। এই ষড়যন্ত্রে ততকালীন ক্ষমতাশীন ও ক্ষমতা বহির্ভুত দল যুক্ত হয়েছে।

রাজনৈতিকভাবে মতাদর্শগত পার্থক্য থাকতেই পারে কিন্তু সেই পার্থক্য থাকার জন্য একটি দলকে, একটি রাজনৈতিক দলের নেতা কর্মীকে হত্যা করতে হবে এ কিছুতেই সভ্য কোন রাজনীতি হতে পারে না। অথচ আওয়ামী লীগকে এদেশের রাজনীতি থেকে উচ্ছেদ করতে বার বার চক্রান্ত হয়েছে। বার বার হত্যা করা হয়েছে একেবারে শীর্ষ পর্যায়ের নেতা থেকে শুরু করে মাঠ পর্যায়ের নেতা কর্মীদের।

এই সব প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের পেছনে পঁচাত্তর এবং একাত্তরের শত্রুরা জড়িত ছিলো। নির্মম হলেও সত্যি এই শত্রুদের সাথে আগাগোড়াই আওয়ামী ঘরানার নেতাকর্মীরাও বা সুবিধাভোগীরা জড়িত ছিলো এবং আছে। আজো বঙ্গবন্ধুর প্রত্যক্ষ খুনিদের আত্মীয় স্বজনেরা আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতাদের সাথে সম্পর্ক তৈরী করে সামরিক বেসামরিক ব্যবসা বানিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে। এইসব আত্মীয়স্বজন সুযোগ পেলেই আবার আঘাত হানার প্রচেষ্ঠায় প্রত্যক্ষ পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করবে।

২১শে আগস্টের শেখ হাসিনা হত্যা প্রচেষ্ঠা সে রকমই এক পরিকল্পনা। মাননীয় প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা যথার্থই বলেছেন। ১৫ই আগষ্টের হত্যাকাণ্ডের সঠিক তদন্ত হলে আওয়ামী লীগের অনেক রাঘব বোয়ালের নাম বেড়িয়ে আসতো। সেইসাথে ২১শে আগষ্টের হত্যাকাণ্ডে শুধু বিএনপি-জামাতের সংশ্লিষ্ঠতা খুঁজলেই চলবে না। এখানেও ফাঁক-ফোকর অবশ্যই আছে। যারা ১৫ই আগস্টের খুনিদের আত্মীয়-স্বজন এখনো আওয়ামী লীগের প্রভাব প্রতিপত্ত খাটিয়ে চুটিয়ে ব্যবসা বানিজ্য চালাচ্ছে তাদের ব্যাপারে নজরদারী বাড়ানো দরকার।

পঁচাত্তরের পরবর্তী থেকে ছিয়ানব্বই পর্যন্ত চুটিয়ে ব্যবসা করে, ব্যাংকের টাকা ঋণ নিয়ে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। এবং ছিয়ানব্বইয়ের পর থেকে এদেশের শিল্প সাহিত্যের কর্নধার হয়ে জাতে উঠার চেষ্টা করছেন তাদের দিকেও নজরদারি বাড়ানো দরকার। নচেত আরো বড়ো হত্যাকাণ্ড আরো বড়ো ম্যাসাকার এর জন্য আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনেক ব্যর্থতা, অনেক সমালোচনা থাকতে পারে কিন্তু তাঁর কিছু হলে বাংলাদেশকে অন্ধকার জগতে প্রবেশ করতে হবে। আজকে যারা প্রগ্রতিশীলতার কথা বলে গলা ফাটাচ্ছেন তাদের কারো রেহাই থাকবে না।