আর কতো ধর্মানুভূতির আগুনে জ্বলবে বাংলাদেশ?

কাজী রাশেদ
Published : 13 Nov 2017, 05:34 AM
Updated : 13 Nov 2017, 05:34 AM

টিটু রায়। গত সাত বছর ধরে গাপলা বা রংপুরে নেই। সেই টিটু রায়ের নামে ফেসবুকে এক পোষ্ট নিয়ে জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে গেলো রংপুরের পাগলা পীর এলাকার হিন্দু অধ্যুষিত গ্রামের পর গ্রাম। নিরীহ হিন্দু গ্রাম বাসীর উপর ধর্মের নামে নারকীয় অত্যাচার চালালো একদল মুসলমান নামের স্বার্থান্বেষী মহল। সর্বশেষ খবরে শোনা যাচ্ছে জামাত শিবিরের লোকেরা পরিকল্পিত ভাবে সাত বছর ধরে এলাকা ছাড়া টিটুর নামে এফ বি একাউন্ট খুলে এই মিথ্যাচার তৈরী করেছে এবং পরিকল্পিত ভাবেই হিন্দু অধ্যষিত গ্রামে আগুন দিয়েছে।

পুলিশ গ্রামে অগ্নি সংযোগকারীদের মধ্য থেকে দুইজনকে প্রেফতার করেছে। পুলিশ হামলাকারীদের ঠেকাতে লাঠিচার্জসহ গুলি চালাতেও বাধ্য হয়েছে। কিন্তু ততোক্ষনে পুড়ে গেছে হাজার মানুষের শেষ সম্বল। চোখের সামনে পুরে যেতে দেখেছে তাদের সকল সহায় সম্বল। পুলিশ এসে হামলা কারীদের ছত্র ভংগ করতে প্রথমে লাঠি চার্জ করেও যখন কন্ট্রোল করতে পারেনি তখন গুলি চালিয়েছে। গুলিতে দুইজন হামলাকারী নিহত  এবং  পুলিশ সহ প্রায় পঞ্চাশজন আহত। পুলিশের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় হামলাকারীদের ঠেকানো গেলেও সর্বশ্রান্ত হয়ে গেছে পাগলাপীরের সেই হিন্দু অধ্যুষিত গ্রাম।

রংপুরে হিন্দু গ্রামে আগুন দিয়ে সর্বশান্ত করার ঘটনা বাংলাদশে প্রথম ঘটনা নয়। বগুড়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর, ফরিদপুরসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় ধর্মের নামে, ধর্মানুভূতিতে আঘাত দেওয়ার নামে গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটেই চলেছে। প্রশাসন ঘটনা ঘটার পর বিচার, তদন্ত আর সাহায্য সহযোগিতার কথা বলে গেলেও এইসব অপ্রীতিকর ঘটনা বন্ধ করতে পারছে না। বিভিন্ন জায়গায় জামাত  শিবিরের লোকেরা এইসব ঘটনার পিছনে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভবে ইন্ধন এবং অংশ গ্রহণ করলেও স্থানীয় ক্ষমতাসীন দলের লোকেরাও এদের সাথে যোগ দিচ্ছে। বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় এইসব ঘটনার রিপোর্টও প্রকাশ হয়েছে।

রংপুরের এই ঘটনা এবং অতীতের নাসিরনগরসহ বিভিন্ন ঘটনায় আজ হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতা ব্যাপকতা পেয়েছে। বাংলাদেশে তাদের আর থাকার মতো পরিবেশ আছে কিনা তা চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সামাজিক মাধ্যমসহ বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় উঠে আসছে সারা দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের  নিরাপত্তাহীনতার খবর। মরুভূমির ঝড়ে উট পাখির মতো মুখ গুঁজে থাকলে ঝড় থেমে যাবে না এই বাস্তবতা সরকারকে উপলব্ধিতে আনতে হবে।

কিছুদিন আগে এক পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয়েছে বিভিন্ন জেলার হিন্দু অধ্যুষিত এলাকা গুলো মানুষশুন্য হয়ে পড়ছে। রাতারাতি গ্রামকে গ্রাম জনশুন্য হয়ে যাচ্ছে। ধর্মের নামে এমন অত্যাচার বাংলাদেশের ইতিহাসে নিকট অতীতে দেখা যায়নি। ২০০১ সালে বিএনপি জামাত ক্ষমতায় এসে যে তাণ্ডব শুরু করেছিলো হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর তার জের আজো চলছে। আজ গত নয় বছর ধরে চৌদ্দ দলের সরকার ক্ষমতায় থাকলেও   হিন্দুদের উপর অত্যাচার নির্যাতন একটূও কমেনি। আমরা মেনে নিচ্ছি এইসব অগ্নিসংযোগ বা অত্যাচার নির্যাতনের জন্য জামাত শিবির দায়ী। কিন্তু সরকার কী করছে? সরকার যদি এদের নিরাপত্তাই দিতে না পারে তাহলে অসাম্প্রদায়িক সরকারের তকমা ঝেড়ে ফেলে ধর্মানুভূতির সরকার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করলেই সব ল্যাটা চুকে যায়। আমরা যারা এই সরকারের উপর ভরসা রেখেছিলাম তারাও নতুন করে ভাবতে শুরু করি।