বিদ্যুৎ বিল বৃদ্ধি এবং ‘স্পেস’ হারিয়ে ফেলা জনগণ!

কাজী রাশেদ
Published : 25 Nov 2017, 05:58 AM
Updated : 25 Nov 2017, 05:58 AM

গত বৃহস্পতিবার সরকার আবারো বিদ্যুতের দাম বাড়ালো। এবার সরকারের কথা মতো খুব সামান্যই  বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে। এবং প্রধানমন্ত্রীর মাননীয় জ্বালানী উপদেষ্টা বলেছেন এই বিদ্যুৎ বিলের দাম  বাড়ার কারণে জনজীবনে এবং দ্রব্য মুল্যে সামান্যই প্রভাব ফেলবে। এর আগে অবশ্য যখনই বিদ্যুৎ বা জ্বালানির দাম বেড়েছে তখন মন্ত্রী বা উপদেষ্টা মহোদয়রা দ্রব্যমূল্য বাড়া বা জনজীবনে কোন প্রভাব পড়বে না বলেই প্রেসক্রিপশন দিয়ে দিতেন। এবার তা না করে উনারা সদয় হয়েছেন এবং বলেছেন এতে করে দ্রব্যমুল্য সামান্যই বাড়তে পারে। ধন্যবাদ মন্ত্রী এবং উপদেষ্টা মহোদয়কে।

বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার দুই হাজার নয় সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে বিদ্যুৎ এর লোড সেডিংকে যাদুঘরে পাঠাবার বিষয়ে অঙ্গীকার করেছিলেন এবং সেই মোতাবেক কাজ শুরু করেছিলেন। আজ দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতায় এসেও লোড শেডিংকে জাদুঘরে পাঠাতে পেরেছেন কিনা তা জনগনই সাক্ষী। তবে কাজ চলছে, বিদ্যুৎ ঘাটতি মোকাবেলায় জোরেশোরে কাজ চলছে তা প্রতিনিয়ত আমরা সরকারের বিভিন্ন পর্যায় থেকে শুনে আসছি। শুধু তাই নয় দেশের পরিবেশ এবং পৃথিবীর বৃহৎ ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনের পরিবেশের উপর বিরুপ প্রভাব পড়েবে কিনা সে বিষয়ের তোয়াক্কা না করেই বিদ্যুৎ ঘাটতি মোকাবেলায় কাজ করছে সরকার। রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুত প্রকল্পের কাজো শুরু হয়েছে।এখানেও পরিবেশ এবং নিরাপত্তার বিষয়টি কতোটুকু গুরুত্ব দেয়া হয়েছে তা নিয়েও প্রশ্ন রয়ে গেছে। তারপরেও বিদ্যুৎ চাহিদা মেটানোর জন্য এক দক্ষযজ্ঞ শুরু হয়েছে তা বোঝা যায়, কিন্তু যে হারে বিদ্যুতের দাম বাড়ছে তাতে জনগন আদৌ সেই বিদ্যুৎ কিনতে পারবে কিনা তা ভবিষ্যতই বলতে পারবে?

আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ২০১০ সালের ১ মার্চ থেকে এ পর্যন্ত আটবার বাড়ানো হলো বিদ্যুতের দাম। সর্বশেষ ২০১৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর বিদ্যুতের দাম গড়ে ২ দশমিক ৯৩ শতাংশ বাড়িয়েছিল সরকার। তাতে মাসে ৭৫ ইউনিট পর্যন্ত ব্যবহারকারীদের খরচ বাড়ে ২০ টাকা; ৬০০ ইউনিটের বেশি ব্যবহারে খরচ বাড়ে কমপক্ষে ৩০ টাকা। এবার সরকার বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে ৫ দশমিক তিন অর্থাৎ ইউনিট প্রতি প্রায় পয়ত্রিশ পয়সা। সরকারের ভাষ্যমতে এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন সবদিক বিবেচনা করেই এই দাম বাড়িয়েছেন। বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হলেও সরকারকে চার হাজার কোটি টাকার মতো ভর্তুকি দেওয়া লাগবে।

এদিকে সারা দেশে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিষপত্রের দ্রব্যমুল্য মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাহিরে চলে যাচ্ছে। পেঁয়াজের মূল্য নাগালের বাহিরে, চালের মুল্য অত্যধিক। দশ বিশ টাকা তো স্বপ্নের ব্যাপার মোটা চালের দামও আজ চল্লিশ পঁয়তাল্লিশের নীচে নেই। তাও সেই চালও খাওয়ার অযোগ্য। এ ব্যাপারে কথা বললেই সরকারের উচ্চ পর্যায় পর্যন্ত বলেন মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বেড়েছে। একশ্রেণীর মানুষের ক্রয় ক্ষমতাই শুধু নয় অনেক কিছুই বেড়েছে কিন্তু সাধারনের নাভিশ্বাস উঠছে। এরই মধ্যে সরকার বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে মানুষকে কোন জায়গায় নিয়ে যাচ্ছে তা আজ চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

মানুষ উন্নয়ন চায়, একথা সত্য কিন্তু তাই বলে পেটে পাথর বাঁধতে রাজি নয়। পেটে সইলে পিঠে সয় এমন এক গ্রাম্য প্রবাদকে স্মরণে রেখেই সরকারকে চলতে হবে। দফায় দফায় বিদ্যুৎ, গ্যাস, জ্বালানির দাম বাড়িয়ে মানুষকে কোনঠাসা করার নাম উন্নয়ন হতে পারে না। মানুষকে নি:শ্বাস নেবার 'স্পেস' দিতে হবে। দু'বেলা মোটা ভাত আর ডালের ব্যবস্থা করতে হবে। মানুষের মুখে হাসি ফিরিয়ে আনতে হবে। সেইসাথে মনে রাখতে হবে বাংলাদেশের মানুষ অনেক সময় নেগেটিভ ভোট দিয়ে বসে। সুতারাং মানুষকে শুধু উন্নয়নের বুলি শোনালে হবে না, মানুষের মনে স্বস্তি আর স্বাচ্ছন্দ্য আনতে হবে।