দেশকে অকার্যকর করার চক্রান্ত থেমে নাই

কাজী রাশেদ
Published : 1 Dec 2017, 09:59 PM
Updated : 1 Dec 2017, 09:59 PM

কিছুক্ষন আগে একটি বহুল প্রচারিত পত্রিকায় তামান্না ইসলামের এক লেখা পড়ে মনটা বিষন্নতায় ভরে গেলো। তবে প্রথমেই বলে রাখি আমি আজকাল এই পত্রিকাটি পড়তেই চাই না। এই পত্রিকাটি দীর্ঘদিন ধরেই বাংলাদেশকে বিরাজনীতিকরণের প্রক্রিয়ার সাথে যুক্ত করতে চায়। এই প্রক্রিয়ায় তারা বেশ কয়েকবার ব্যর্থ  হলেও সেই চেষ্টা থেকে দূরে সরে যায়নি। বরঞ্চ প্রতিদিনই তাদের লক্ষ্যে পৌছানোর জন্য বিভিন্ন কৌশল গ্রহণ করেছে এবং সেই চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। প্রবাস জীবনে থাকা এই লেখিকা বিভিন্ন ঘটনার উদহারণ দিয়ে বাংলাদেশকে মূলত একটি অকার্যকর রাষ্ট্র হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক এবং শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে বিভিন্ন অনিয়মের কথা তুলে ধরেছেন, যার মধ্যে অবশ্যই কিছুর সত্যতা পাওয়া যায়। অবশ্যই বিভিন্ন ক্ষেত্রে অন্যায় ভাবে দেশের আপামর জনগন কে অব্যবস্থার শিকার হতে হচ্ছে, মানুষকে বিভিন্ন ধোঁকার সমুক্ষীন হয়ে জীবন পর্যন্ত দিতে হচ্ছে। কিন্তু উনি যেভাবে বর্ণনা করেছেন তাতে করে সেই বহুল প্রচারিত পত্রিকার উদ্দেশ্যের সাথে মিল খুজে পাওয়া যায়। মনে হয় যেন চীনের সাংস্কৃতিক বিপ্লবের সময় লু স্যনের ছোট গল্প লেখানো হয়েছিলো তেমন কিছু।

বাংলাদেশ একটি উন্নয়ন ধারায় যুক্ত হওয়া দেশ। পা পা হাঁটি হাঁটি করে সে তার অর্থনৈতিক ভিতকে শক্ত  মাটির উপর দাঁড় করাচ্ছে। এই দাঁড় করানোর পিছনে স্বাধীনতার পর হতে যেসব দল এবং সামরিক বেসামরিক সরকার ছিলো তাদেরো অবদানকে অস্বীকার করার উপায় নেই। একটি দেশের উন্নয়ন অবশ্যই এক ধারাবাহিকতার ফসল। তবে একথা ভুললে চলবে না, স্বাধীনতার সাড়ে তিন বছরের মাথায় জাতির  পিতা কে হত্যার মধ্য দিয়ে এক পিছনে হাঁটার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিলো তাতে করে দেশ কে বহু বছর রাজনৈতিক, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিকভাবে পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। উলটো পথে দেশ কে নিয়ে যাবার এক  অশুভ প্রক্রিয়ায় ক্ষমতাশীন দলগুলো এবং তাদের দোশররা প্রাণপণে চেষ্টা চালিয়েছে। এতে করে দেশ থেকে মূল্যবোধ, ত্যাগ স্বীকারের মহিমা, বাঙ্গালীর কষ্ট সহিষ্ণুতা চরিত্রে ব্যাপক পরিবর্তন এনে দেয়। শুরু হয় এক লাগামহীন লুটপাটের রাজত্ব। রাজনীতি, সমাজনীতি হয়ে উঠে লুঠে পুটে খাওয়ার সহজ উপায়। সেই ধারা  থেকে পজিটিভ ধারায় ফিরতে বাংলাদেশের মানুষকে বহু মুল্য দিতে হচ্ছে, হয়েছে কিন্তু তারপরেও পুরোপুরি ফেরা যায়নি। আজো বাংলাদেশ কে পাকিস্থানের সংস্কৃতিতে ফিরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চলছে। দেশকে পাকিস্তানের মতো অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করার ষড়যন্ত্র কিছুতেই থামছে না।

কিন্তু অনেক খারাপ খবরের মধ্যেও, অনেক ঋণাত্মক ব্যবস্থার মধ্য দিয়েও বাংলাদেশে কিছু পজিটিভ কাজ করছে। আমরা কিন্তু পুরো পরিবহন ব্যবস্থায় ডিজিটাইজেশন যুগে প্রবেশ করেছি তার কথা কিন্তু কেউ  বলিনা। অব্যবস্থা আজো বিদ্যমান। ঘুষ দুর্নীতি আজো আছে এই খাতে। শুধু আছে না ব্যাপকভাবে আছে কিন্তু যে কাজ হয়েছে সেটাকে ভিত্তি করে অনেক দূর এগিয়ে যাওয়া যাবে। কাজ হচ্ছে ভূমি মন্ত্রনালয়কে  নিয়ে। আমরা কিছুদিনের মধ্যে ভূমি সংক্রান্ত কাজগুলো অন লাইনে করতে পারবো। যা কিনা সার্কভুক্ত দেশসমূহে আজো কল্পনার বিষয়। বিকাশ বা মোবাইল ব্যাংকিং -এ আজ আমরা কল্পনারো অতীত সময়ের মধ্যে এক জায়গা  থেকে আরেক জায়গায় নগদ অর্থ প্রেরণ করতে পারছি। যা কিনা একসময় আমরা চিন্তাই  করতে পারতাম।

তামান্না ইসলাম যেসব অনিয়ম, অত্যাচার, অব্যবস্থা, দুর্নীতি, ঘুষ, নারী নির্যাতন আর ভয়াবহ মুল্যবোধের অবক্ষয়ের যে চিত্র তাঁর লেখায় তুলে ধরেছেন তার বিরুদ্ধে বলার কিছু নেই। কোন প্রতিবাদও করতে চাই না, আমরা জানি একটি উন্নয়নের পথে হাঁটা দেশ বা সমাজের মধ্যে অনেক উপসর্গই আমদানি হয়। আবার যদি সেই দেশের রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের ক্ষমতা ফিরে পাবার জন্য সমাজে বিভিন্ন অন্যায়-অনাচার করে চলেন বা উৎসাহ দিয়ে থাকেন তাহলে এর পরিনতি এমনই তো হওয়ার কথা। রাজনীতি করতে হলে যে সমাজে টাকা হচ্ছে মূল যোগ্যতা সেখানে টাকা উপার্জনের কোন নিয়মনীতি না থাকাই স্বাভাবিক। ক্ষমতার শীর্ষে থাকা ব্যক্তি বা তার ঘনিষ্ঠরা যখন নিজেরাই টাকা উপার্জনে ব্যস্ত হয়ে পরেন তখন সমাজে – রাষ্ট্রে এর প্রভাব পরবেই। নেতারা বা তাদের পরিজনরা যখন যে পথে হাঁটেন দলের সকল অনুসারীরা সেই পথই অনুসরন করে এটাই স্বাভাবিক।

রাষ্ট্রে বা সমাজে বা একটা গণতান্ত্রিক বিনির্মাণে এমন বদ উপসর্গ আসাটাই স্বাভাবিক। এবং গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা চালু থাকলে এইসব উপসর্গ আস্তে আস্তে বিলীন হয়ে আসে। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে ধ্বংসের চক্রান্ত করে আবার সামরিক সরকার বা কোন সিভিল সোসাইটির সরকার দ্বারা দেশ পরিচালনার চিন্তাকে উৎসাহ দেওয়া কখনোই সমর্থন যোগ্য হতে পারে না।