পথ দুর্ঘটনা এবং একটি চলচ্চিত্র

কাজী রাশেদ
Published : 7 Jan 2018, 01:02 AM
Updated : 7 Jan 2018, 01:02 AM

ব্রেক ফেল হয়ে গেলে স্কুলে যাওয়ার সময় এক বাচ্চা দুর্ঘটনায় মারা যায়। এই দুর্ঘটনায় প্রচণ্ড শকড্ বাবা-মা, আত্মীয়-স্বজন। শকড্ হওয়াই স্বাভাবিক। বাংলাদেশেও এমন ঘটনা হরহামেশা ঘটছে। এরকম মর্মান্তিক দুর্ঘটনার পরে আমরা কিছুদিন চিল্লাচিল্লি করি, সংবাদ মাধ্যম বড়ো বড়ো হেডলাইনে নিউজ ছাপে, ইলেক্ট্রনিক  মিডিয়া লাইভ দেখায়, সরকার যথাযথ আইনের আওতার আনার আশ্বাস দেয়। সংসদ দুর্ঘটনায় মৃত্যুর  ঘটানোর জন্য দায়ী ড্রাইভারদের সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান রেখে আইন তৈরী করেন, আবার সেই আইনের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামেন পরিবহন শ্রমিকেরা। আন্দোলনের ফসল আইনটি বাতিল বা সংশোধন হয়ে যায়। ফলে আবার কিছু লেখালেখি, টকশো আর চিল্লাচিল্লি। কিন্তু কোন কিছুরই পরিবর্তন নেই, পরিবর্তন হয় না।

এই শুক্রবারের আগের শুক্রবার হঠাত করেই জি বাংলা সিনেমায় চোখ আটকে গেলো। একটি বাংলা চলচ্চিত্রে। ছবির বিষয় সেই এক্সিডেন্ট। স্কুল যাওয়ার পথে বাসের ব্রেক ফেল হওয়ায় স্কুল ছাত্রের মৃত্যু। বাসের ড্রাইভার এই এক্সিডেন্টের পর বাস মালিককে জানায় যে সে এই বাস চালাবে না। এই দুর্ঘটনা নিয়ে  এই বাস টি মোট সাত বার ব্রেক ফেল করে এক্সিডেন্ট করেছে এবং মানুষের মৃত্যুর কারণ হয়েছে। কিন্তু  এবার সে এই বাস চালাতে নারাজ। বাস ড্রাইভার এই দুর্ঘটনায় মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। কিন্তু বাস মালিকের এক কথা তাকে এই বাসই চালাতে হবে। বাস ড্রাইভার বলছে এই গাড়ীর যান্ত্রিক ত্রুটির কারণেই এই  দুর্ঘটনাগুলো ঘটছে। প্রায় একটানা ৫০ কিলো চালানোর পরেই এই গাড়ীর ইঞ্জিন গরম হয়ে যায় এবং যার  ফলে ব্রেক কাজ করে না। এব্যাপারে বাস মালিক তাকে উত্তর দেন, তা্রা বাস তৈরীর কোম্পানীর সংগে এই ব্যাপারে বহুবার কথা বলেছে কিনতু বাস তৈরী কোম্পানীর একই কথা তারা কোন যান্ত্রিক ত্রুটি পায়নি। অথচ অন্য সার্ভিস কোম্পানী এই ত্রুটির ব্যাপারে বেশ কয়েকবার রিপোর্ট দিয়েছে।

চলচ্চিত্রে দেখানো হয় এই রকম ছয়টি বাস সেই কোম্পানী বাংলাদেশে রফতানী করেছিলো কিন্তু পিসি আই রিপোর্ট মান সম্মত না হওয়ায় বাংলাদেশ এই বাস ফেরত পাঠায়। সেই ছয়টি বাস রিপোর্ট সংশোধন করে কম মূল্যে কোলকাতা নগরে চালানোর জন্যে বিক্রয় করে দেওয়া হয়। সেই ছয়টি বাসই এমন দুর্ঘটনার সাথে জড়িত। এই দুর্ঘটনার পরে ড্রাইভার বিভিন্ন জায়গায় ধরণা দিয়েছে। বিভিন্ন মানুষের সহযোগিতা চেয়েছে কিন্ত কেউ এগিয়ে আসেন না। এবার সে সেই বাড়ীতে যেয়ে উপস্থিত হয় যাদের বাচ্চা তার গাড়ির ব্রেক ফেলে নিহত হয়েছিলো। সেই বাসায় অনেক প্রতিকুল ব্যবহার, শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েও বাচ্চাটির বাবাকে সে বোঝাতে সক্ষম হয় এবং সেই বাবাটিই শেষ পর্যন্ত বাস তৈরীর কোম্পানীর সংগে কথা বলতে যায়। কিন্তু বাস তৈরী কোম্পানী তার কোন কথা কানে তুলতেই রাজী নয়।

এরপরে সে বিভিন্ন সার্ভিস কোম্পানীর কাছে থেকে এই বাসের রিপোর্ট সংগ্রহ করে। সেই সব রিপোর্ট নিয়ে সে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের সাথে কথা বলে। শেষ পর্যন্ত ছেলেটির বাবা এবং ড্রাইভার বুঝাতে সক্ষম হয় যে  দুর্ঘটনার জন্য বাস তৈরীর কোম্পানীর যান্ত্রিক ত্রুটিই মূল কারণ। আসলে এটি একটি চলচ্চিত্র কাহিনী।

এই চলচ্চিত্রের মাধ্যমে চলমান ঘটনার এক বীভৎস রূপ তুলে ধরা হয়েছে। আমরা দুর্ঘটনার জন্য সবসময় বাস ড্রাইভার দের দোষারোপ করে থাকি। অবশ্যই ড্রাইভারদের গাফলতি এইসব দুর্ঘটনার জন্যে দায়ী। তারা জেনে হোক বুঝে হোক ত্রুটিযুক্ত যানবাহন নিয়ে রাস্তায় নেমে পরেন। গাড়ীর ব্রেক, ইঞ্জিন বা অন্যান্য ত্রুটি নিয়ে মাথা ঘামান না। যার ফলে অনেক গুরুত্বপূর্ণ মানুষকে অনেক আগেই চলে যেতে হচ্ছে। একটি মানুষের মৃত্যু একটি পরিবারে, সংসারে, একটি সমাজে সারা জীবনের কান্না হয়ে বিরাজ করে।

আসলে পথ যেমন সত্য, দুর্ঘটনাও তেমনি সত্য হয়ে আমাদের জীবনে থাকে। কিন্তু একটু সাবধানতা, একটু খেয়াল রাখা, একটু দায়িত্ব বোধ আমাদের এই সমাজ সংসারে অনেক দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পাওয়া যেতে পারে।