শব্দগুলো সুন্দরঃ পিটানো, পোড়ানো, কোপানো, খুন, ধর্ষণ, জবাই, গুম, শ্বাসরোধ, হত্যা, নৃশংস, নির্যাতন…..। এসব আবার প্রেম, সুখ, স্বস্তি, শান্তি কিংবা সুস্থ্য, সুন্দর, হাসি, অভিমান—এমন আর দশটা শব্দের সাথেও কেমন মানিয়েই যায় যেনো। শিশুর বর্ণমালার জ্ঞানে আলো ছড়াচ্ছে এসব বিবিধ শব্দের বানান এবং মানে।
আমাদের সময়কে আমরা ভালোবাসি। তাই দুঃসময় বলতে ঘৃণা করি। আমরা দেখে দেখে বড় হই গলা কাটা লাশ; আকাশ কাঁপানো চিৎকার–রাজনের, রাকিবের। কেউ কেউ হিসেব করি কয়টা ব্লগার, কয়টা সাংবাদিক, কয়টা শিক্ষক, কিশোরী-কিশোর…। দুঃসপ্নের কোনো অভিজ্ঞতা আমাদের মনে পড়েনা এখন। আমরা অনেক আধুনিক মানুষ। আবেগের ছলছল চোখ আমাদের মানায়না এখন। কোনো নৃশংস হত্যা বা নির্যাতন এখন আর আমাদের নির্লিপ্তি ভাঙার জন্য যথেষ্ঠ নয়। আমরা রোদ-বৃষ্টির মতো চারপাশের সবকিছুকে স্বাভাবিকভাবে নিতে শিখছি। আমাদের কাজ, অবসর, ঘুম, বিনোদন থেমে নেই কিছুই। আমাদের যাপনের জীবনকে উপদ্রপহীন রাখার প্রয়োজন আমাদের কাছে ছোট নয় কিছুতেই। কোনো সন্দেহ নেই, আমরা সভ্য সমাজে বাস করি। টিভির খবরে কচুকাটা লাশের ছবি ঘোলা করে দেখিয়ে আমরা আমাদের সভ্যতার ফুটানি দেখাই। আমরা বিবৃতি দেই। কেউ কেউ ক্ষেপে যাই। আশ্বাস আমাদেরকে আপ্লুত করে। আমাদের স্বভাব সুন্দর। আমাদের রাষ্ট্রীয় প্রভুরা তা জানেন। বড়জোর দু-তিনদিন যায়। আমাদের সয়ে যায়। মেনে নিয়ে কী চমৎকার মানিয়ে যাই সময়ের সাথে, খুচরা যন্ত্রাংশের মতো! সত্যিই আমরা ভুলে যাই খুব দ্রুত। কারণ আমরা যে ভালো থাকা শিখে গেছি। কেনো শিখবোনা?
পুরনো আর নতুন কায়দায় হত্যার সব খবর আমরা লাঞ্চে ডিনারের সময় অনায়াসে দেখে যাই খেতে খেতে। ভীতুরাই ভয়ঙ্কর বলে শুধু শুধু। আমরা ভয়কাতুরে নই। আমরা বড়জোর উৎসুক হই কখনও কখনও এই ভেবে, এর পরের শিকার কে?