নেতিবাচক খবর পরিহার করুনঃ দেশের উন্নয়নে সহযোগিতা করুন

কাজী শহীদ শওকত
Published : 9 April 2016, 05:04 AM
Updated : 9 April 2016, 05:04 AM

দুই বছরে কর্মসংস্থান মাত্র ৬ লাখ

দেশে বেকার মানুষের সংখ্যা বেড়েছে। কর্মসংস্থান না বাড়ার কারণেই বেকারত্ব বেড়েছে। বর্তমানে দেশে ২৬ লাখ ৩১ হাজার মানুষ বেকার। বেকারের এই সংখ্যা গত দেড় দশকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। (লিংক দেখুন)

–ছয় লাখকে 'মাত্র' বলার ধৃষ্টতা প্রথম আলোর কী করে হলো? বেকার সমস্যা পৃথিবীর উন্নত দেশেও কম নেই। আমাদের দেশে জনসংখ্যা এমনিতেই অনেক বেশি। তাই স্বাভাবিকভাবেই বেকারত্ব একটু বেশিই হবে। এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। আর বৈদেশিক বিনিয়োগ না বাড়লে এরকম একটি দেশের বেকারত্ব সমাধানে ব্যাপক কোনো আয়োজন চোখে পড়ার আশা নেই। আর যে দেশের সংবাদপত্র ক্রমাগত দেশের নেতিবাচক খবরগুলোকে ফলাও করে বিদেশে দেশের ইমেজ নষ্ট করার প্রয়াস চালাচ্ছে, সে দেশে বিদেশীরা কি বিনিয়োগ করতে আদৌ উৎসাহি হবে?

.

নৌ মন্ত্রণালয়ের নিষেধাজ্ঞা নিজেই ভাঙলেন নৌমন্ত্রী

সুন্দরবনের শ্যালা নদী দিয়ে সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ ঘোষণার দুই দিনের মধ্যেই নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় ২২টি জাহাজ পার করে দিয়েছে। এসব জাহাজ পার হওয়ার এক সপ্তাহের মাথায় পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের অনুমতি চেয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)।  এ বিষয়ে জানতে চাইলে নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান প্রথম আলোকে বলেন, বিশেষ কারণে এ অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তারপরও শ্যালা নদী দিয়ে নৌযান চলাচল বন্ধ থাকবে। অপর প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ওই রুট চালুর সম্ভাবনা নেই।(লিংক দেখুন)

–স্রষ্টা যদি জীবন দিয়ে আবার জীবন নিয়ে নিতে পারেন, তবে মন্ত্রী কেনো নিজের মন্ত্রণালয়ের আইন নিজে ভাঙতে পারবেন না? এটি নিয়ে আবার খবর তৈরি করতে হয়? দেশে কি আর কোনো খবর নেই? 

.

'টাকশালে' বিতর্কিতকে নিয়োগের পাঁয়তারা

বিষ্ণুপদ সাহাকে টাকা ছাপানোর স্পর্শকাতর প্রতিষ্ঠান 'টাকশালে' নিয়োগ দেয়ার পাঁয়তারা চলছে। বিষ্ণু বাবু ১৯৮৪ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দেন। সর্বশেষ ২০১৫ সালের জুলাই মাসে চার জন সিনিয়র কর্মকর্তাকে পেছনে ফেলে সাবেক গভর্নরের আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত বিষ্ণুপদ সাহা পদোন্নতি পেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক হন। তিনি যখন বাংলাদেশ ব্যাংকে যুগ্ম-পরিচালক ছিলেন, তখন কয়েকটি বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে বড় ধরণের উৎকোচ নেয়ার অভিযোগ উঠে তার বিরুদ্ধে।  তৎকালীন দুর্নীতি দমন ব্যুরো (বর্তমানে দুর্নীতি দমন কমিশন) থেকে তার বিরুদ্ধে একটি চিঠির রেফারেন্সও আসে বাংলাদেশ ব্যাংকে। (লিংক দেখুন)

–সৎ মানুষ বেক্কল টাইপের হয়। তাছাড়া প্রবাদ আছে, 'কাঁটা দিয়ে কাঁটা তুলতে হয়।' আতিয়ার সাহেব এটা বুঝেই নিশ্চয়ই বিষ্ণু বাবুর নাম প্রস্তাব করেছিলেন। অর্থমন্ত্রী শুধু শুধু রাগ করলেন। অহেতুক উদ্বেগের কী প্রয়োজন ছিলো?

.

একই কায়দায় এবার ছাত্র খুন

৫ এপ্রিল রাত ৯টা ১০ মিনিটে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে ফেসবুকে লিখেছিলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ছাত্র নাজিম উদ্দিন। এর ২৪ ঘণ্টা না পেরোতেই খুন হলেন তিনি। গত বুধবার পুরান ঢাকায় চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে এবং গুলি করে হত্যা করা হয় তাঁকে। নাজিমের পরিবার ও বন্ধুদের ধারণা, ফেসবুকের বিভিন্ন স্ট্যাটাসে নাজিম জঙ্গিবাদ, ধর্মান্ধতা ও সরকারের সমালোচনা করেছেন। এ ধরনের লেখালেখির কারণে তাঁকে খুন করা হতে পারে। (লিংক দেখুন)

–নিহতের পরিবার ও বন্ধুরা আবেগপ্রবণ হয়ে এর সাথে জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার কথা বলেছেন হয়তো। তাছাড়া ঘটনাটি তনন্তাধীন। তদন্ত শেষ না করে কোনো মন্তব্য করা মোটেই ভালো কাজ নয়।

.

তনু হত্যাকাণ্ড আড়া​ল করতেই নাজিম হত্যা!

কুমিল্লার ভিক্টোরিয়া কলেজের ছাত্রী সোহাগী জাহান তনু হত্যা ও রিজার্ভ চুরির ঘটনাকে আড়াল করতেই মুক্তমনা ব্লগার নাজিমুদ্দিন সামাদকে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার। বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর শাহবাগে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাজিমুদ্দিন সামাদের হত্যার প্রতিবাদে আয়োজিত মশাল মিছিলপূর্ব সমাবেশে এমন দাবি করেন তিনি। (লিংক দেখুন)

—  ইমরান সাহেব অহেতুক স্পেকুলেশন করে জল ঘোলা করতে চাচ্ছেন। একটি ঘটনাকে আরেকটি ঘটনা দিয়ে আড়াল করতে হবে কেনো? ঘটনাবলী নিজেরাই আড়াল হয়ে যায়, যেহেতু প্রতিনিয়ত ঘটনা ঘটে থাকে। তাছাড়া দুটো হত্যাই তদন্তাধীন। এ বিষয়ে এখনই কী করে বলি?

.

১১ দিনেও খোঁজ মেলেনি মিজানুরের

সোহাগী জাহান তনুর ছোট ভাইয়ের বন্ধু মিজানুর রহমানের (সোহাগ) এখনো খোঁজ মেলেনি। ১১ দিন আগে গভীর রাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয় দিয়ে একদল লোক মিজানুরকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে যান। (লিংক দেখুন)

–কেউ হারিয়ে গেলে তার খোঁজ এগারো দিনে কেনো, এগারো বছরেও মিলবে—এমন গ্যারান্টি নেই। আজকাল কতোজনই কতোভাবে গুমটুম হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয় দিয়ে অন্য কেউ এ কাজ করে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করতে চাচ্ছে কি না সেটিও খতিয়ে দেখা উচিৎ। এ বিষয়ে উদ্বিগ্ন না হয়ে আস্থার সাথে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রচেষ্টার সাফল্যের অপেক্ষা করা উচিত।

পত্র-পত্রিকাগুলো দিনদিন কেমন অসভ্য হয়ে যাচ্ছে। খুঁজে খুঁজে খারাপ খবরগুলোকে এনে পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা ভরে রাখছে। ভালো খবর কি দুনিয়ায় নেই? আর ঘটনা না ঘটলেও স্পেকুলেশন দিয়ে ভরিয়ে রাখে। আমরা কি স্যাডিস্ট নাকি? স্পেকুলেশনই যদি হবে, তবে সুখবরের স্পেকুলেশন করাও তো যায়, যায় না? যেমন, শামুকের ভেতর মুক্তা চাষের সম্ভাবনা, ডাস্টবিনের আবর্জনা দিয়ে আন্তর্জাতিক মানের সুগন্ধি তৈরিতে বাংলাদেশের সাফল্য কিংবা স্বজন হারানো বেদনা ভুলতে কম খরচে দারুণ কার্যকর কবিরাজি ওষুধ—এ রকম আরও কতো কিছু আছে!

তবে নববর্ষ উদ্‌যাপন উপলক্ষ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর বক্তব্য অসাধারণ আনন্দদায়ক বলে মনে হয়েছে।

.

পয়লা বৈশাখে মুখোশ পরা ও ভুভুজেলা নিষিদ্ধ

দেশে প্রকাশ্য স্থানে পয়লা বৈশাখের অনুষ্ঠান বিকেল পাঁচটার মধ্যে শেষ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে ভুভুজেলা নামে পরিচিত উচ্চ শব্দের বাঁশি বাজানো নিষিদ্ধ এবং মুখোশ দিয়ে মুখ ঢাকা নিয়ন্ত্রণ করা হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। সাধারণত পয়লা বৈশাখ সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ থেকে বের হওয়া মঙ্গল শোভাযাত্রায় অনেকে রংবেরঙের মুখোশ পরে বা মুখোশ হাতে নিয়ে অংশ নেন। (লিংক দেখুন)

–ভীষণ ভালো উদ্যোগ। ভুভুজেলা বড্ড কর্কশ। চরম শব্দদূষণ ঘটায়। আর মুখোশ থাকলে দুষ্কৃতকারীকে চেনা যায় না। গত বছর টিএসসির ঘটনা থেকে আমরা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারি, 'মুখোশই সকল নষ্টের গোড়া।' তাছাড়া আমরা তো এমনিতেই মুখোশধারী। নতুন করে আবার কেনো মুখোশ? 

আমরা অবশ্যই শিশুদেরকে দেশীয় সংস্কৃতির প্রতি দরদি করে গড়ে তুলবো। এজন্য ঘরে ঘরে শিশুদেরকে বাংলা নববর্ষ কীভাবে পেলাম আমরা তা জানানো অতি জরুরি। 

নাম— প্রথমে ছিলো 'ফসলি সন'; পরবর্তিতে 'বঙ্গাব্দ'

প্রবর্তক— সম্রাট আকবর

গণনা শুরু— ১৫৮৪ খ্রিস্টাব্দ

আধুনিক উদযাপন শুরু— ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে

ব্যাপক জনপ্রিয় করে তোলে— ছায়ানট (১৯৬৭ থেকে)

প্রতি বছর এদিনে অনেক আনন্দ হয়। আমরা অনেক আনন্দ করি। আমরা দুঃখকে ঘৃণা করি।

নতুন বাংলা বছরের প্রাক্কালে আমাদের সকলের উচিৎ ভালো ভালো চিন্তা করা, অসুন্দরের স্মৃতিকে ভুলে সুন্দরের স্বপ্ন নিয়ে লক্ষীছানা সুনাগরিক হয়ে বাঁচার সংকল্প করা। চুরি-ডাকাতি, দুর্নীতি, ধর্ষণ, খুন, সরকারি ক্রয়ের নামে লুটপাট ইত্যাদি আকাম কোথায় নেই বলুন তো? তার চেয়ে আসুন বৈশাখি উৎসব নিয়ে ভাবি। দোকানে দোকানে কী সুন্দর সব শাড়ি, পাঞ্জাবি! ইলিশ মাছ কেনা হয়েছে? ছোট বাচ্চাদেরকে সংস্কৃতিবান করে গড়ে তুলতে অবশ্যই বৈশাখি মেলায় নিয়ে যাওয়া উচিৎ। আসুন, আসন্ন বৈশাখের কথা ভেবে আনন্দে আসমানে ওড়ি—বাকবাকুম করি।