কাছ থেকে দেখলে টের পাওয়া যায়, চাঁদটাও কেমন দ্রুত সরে যায়। এক দুই সেকেন্ডেই ফ্রেম ছেড়ে চলে যাচ্ছে। আর চাঁদের ক্লোজআপ শটে আমি সুন্দর দেখি না এতোটুকুও। ওর গায়ের ওসব কালশিটে দেখি। পৃথিবীর প্রতিটি সুন্দর কালশিটেময়। এমনকি নীল সরোবর, সবুজ বনানীও। তাই বুঝি গুণীজন বলেন, সুন্দরকে এতো কাছ থেকে দেখতে নেই। কাছ থেকে দেখতে গেলেই হয় সে পালিয়ে যায়, নয়তো দর্শকের মোহভঙ্গ হয়।
চাঁদের কালশিটে দেখি; আবার তার গোলাকার সুন্দর দেখি একটু দূর থেকে। একই অবয়বের এই দুই রূপ (সুন্দর আর অসুন্দর) বারবার দেখেটেখে সর্বোপরি চাঁদটাকে ভালোবাসি–এই সত্যে অটল থাকা যায়। এখানে ইম্পোজিশন নেই। মোহভঙ্গের ব্যাপারস্যাপার নেই।
স্রষ্ঠা নিশ্চয়ই খুব গোলকপ্রিয়। দিনের শুরুতে, পূর্ণিমা রাতে, ফুলে এবং ফলে কিংবা পাতায়, জীবের জন্মের সূচনায় বৃত্তের ব্যবহার দেখতে পাই। জন্মের পর ওই যে চুম্বনের প্রথম রোপন– গোলাকার। মাটির ওই যে বাড়ন্ত কোষের সম্ভার জোড়ায় জোড়ায়, জনে জনে–গোলাকার। জীবের শ্রবণ ও দর্শনের, খাদ্য গ্রহণের ও বর্জ্য নিষ্কাশনের অঙ্গেও শুধু গোলেরই বাহার। সাপের গর্ত, গাছের কোটর, মানুষের মাথা আর পৃথিবীটাও তো গোলই।
ছুঁয়ে দেখা, চেখে দেখার সবজি ও ফল যেমন আলু, টমেটো, বেল, নারকেল, চালতা, বাতাবি লেবু, তরমুজ, কলাই, সরিষা, তিল কিংবা তালের মতো গোলগুলোর কিছু কিছু মৌসুমি, বাকিরা নিত্যদিনের। গোল ছাড়া জীবন গোলমেলে, অসহায়।
সুন্দরকে এতো কাছ থেকে দেখতে নেই। তবু আমরা দেখি–ছুঁয়ে দেখি, চেখে দেখি। তবু ভালোই বাসি। মোহভঙ্গ ঘটবার জন্য মোহটা আবশ্যিক। ওটা না থাকার নাম ঘৃণা বা অবজ্ঞা না হলে অবশ্যই ভালোবাসা।
———
ছবিঃ গতরাতের আকাশ থেকে নেওয়া।