শ্রাবণ গিয়েছে চলে– বৃষ্টির তৃষ্ণাটা আছে এখনও

কাজী শহীদ শওকত
Published : 16 August 2016, 01:47 PM
Updated : 16 August 2016, 01:47 PM

সপ্তম শতাব্দীর দ্বিতীয় দশক থেকে শুরু করে পরবর্তী আরও প্রায় চারশো বছর পর্যন্ত চীনে শাসনকার্য পরিচালনা করেছিলো ট্যাং রাজবংশ। সে সময় চীনের চিকিৎসাবিদ্যা এতো উন্নত ছিলো যে, য়্যুরোপিয়ানরা পর্যন্ত তার ধারেকাছে পৌঁছুতে পারেনি। দেশটির বিভিন্ন অঞ্চলে স্থাপন করা হয়েছিলো মেডিক্যাল কলেজ। ট্যাং রাজা জুয়ানজং প্রজা সাধারণের কল্যাণার্থে এক বিশেষ ব্যবস্থা চালু করেছিলেন। রাজ্যের খ্যাতনামা ডাক্তারদের তৈরি প্রেসক্রিপশনের কপি  রাস্তার মোড়ে মোড়ে সাইন বোর্ডে টানিয়ে দেওয়া হতো। তখন আষাঢ়ে-শ্রাবণে যখন ঝুম বৃষ্টি হতো, টানিয়ে রাখা ওসব প্রেসক্রিপশন নিশ্চয়ই ভিজে সব নষ্ট হয়ে যেতো।

শরতের প্রথম দিনে সদ্য বিদায়ী বর্ষাকে মনে পড়ছে। এবার বর্ষায় অনেক ইলিশ ধরা পড়েছে, আকাশেও অনেক মেঘ জমেছে। কিন্তু কী কারণে যেনো এবার মেঘগুলো ঝরলো না তেমন। শ্রাবণের শেষ দিনগুলোতেও আকাশ ছিলো আগুন ভরা। দুদিন আগেও আকাশটা ভীষণ অন্ধকার হয়ে এসেছিলো। অপেক্ষায় বসিয়ে রেখে শেষমেষ মেঘগুলো রঙ বদলে, বৃষ্টির নিকুচি করে আরও উপরে ওঠে গেলো। মেঘ আর মানুষের সম্পর্কে বিশ্বাস বরাবরই কম ছিলো। এবার যেনো সেটা আরও কমেছে। পুরনো বৃষ্টির কথা মনে করে দিন গেলো, রাত গেলো।

মনে পড়ছে, একবার গুঁড়িবৃষ্টির সাথে খুব বাতাস এলো। শ্রাবণের মাঝামাঝি। সন্ধ্যার রাস্তায় তখন শিরশিরে শীত। একটু পরেই তুমুল বৃষ্টি। বাতাস তখনও থামেনি। রবীন্দ্রনাথও নিশ্চয়ই এমন বৃষ্টি অনেক দেখেছেন। তাঁর 'মেঘদূত'-এ সে প্রমাণ মেলে–

"আজি অন্ধকার দিবা বৃষ্টি ঝরঝর,

দুরন্ত পবন অতি,

আক্রমণে তার বিদ্যুৎ দিতেছে উঁকি ছিঁড়ি মেঘ ভার,

খরতর বক্রহাসি শূন্যে বরষিয়া।"

সেদিনের বৃষ্টিতে শুধু শরীর ভেজেনি, মনও ভরেছিলো। মনে হয়, এই সেদিনের কথা। অথচ বছর গড়িয়েছে বেশ কয়েকটা। বর্ষার বৃষ্টিতে ভিজতে গিয়ে আগে মানুষের ডর-ভয় খুব ছিলো না। এখন ভয় বেড়েছে। এবার বর্ষায় খুব বেশি বৃষ্টি হলো না। কিন্তু বজ্রপাতে অনেক মানুষের প্রাণ গেলো। সেকালে বৃষ্টিতে ভিজলে সর্দি লাগার ভয় ছিলো বড়োজোর। সে ভয় জয় করা গেছে সহজেই। কিন্তু এখন ভয়টা আরও ভয়াবহ। পুড়ে যাওয়ার ভয়, মরে যাওয়ার ভয়। অনেকেই বলছেন, পরিবেশ দূষণের ফলস্বরূপ নাকি বজ্রপাত এতো বেড়ে গেছে। সে যা-ই হোক, ফসলের জন্য হলেও এবার আরও কিছু বৃষ্টিপাতের দরকার ছিলো।

বৃষ্টির শব্দে ঘুম ভালো হয়। ইউটিউব থেকে দুই ঘণ্টা বৃষ্টি ডাউনলোড করে নিয়েছি। যখন তখন কানে তার লাগিয়ে চোখ বুঁজে নিলেই চলে। ইফেক্ট মন্দ নয়।  বৃষ্টির এই সিমুলেশনে মন ভরে। নানা রকম ঘ্রাণের স্মৃতি এসে ভীড় করে। প্রিয় ফরগেটফুল, বর্ষা কিংবা কদম ফুল চিরদিন থাকে না। কিন্তু বৃষ্টিরা থাকে, ঘ্রাণেরা থাকে। এখন শরৎকাল। ক'দিন পরেই কাশ ফুটবে নদের ধারে। তখনও নিশ্চয়ই বৃষ্টি হবে মাঝে মাঝে।