কাশফুল চুল তার– নাম জানা নেই

কাজী শহীদ শওকত
Published : 1 Sept 2016, 03:30 AM
Updated : 1 Sept 2016, 03:30 AM

ময়মনসিংহে জয়নুল আবেদীন পার্ক থেকে নদ বেয়ে ওপারে যেতে তিন-চার মিনিট লাগে মাত্র। লোক সমাগম আগের থেকে অনেক বেড়েছে। বিকেলে এখন চরের গাছগাছালির তলে, ঘাসের উপর অবসর যাপনে ব্যস্ত জটলা, জুটির অভাব হয় না। আগের চেয়ে যাত্রী পারাপারের নৌকার সংখ্যাও বেড়েছে। ওপারে গেলে এপার থেকে পানাহারের প্রয়োজনীয় যা যা তা নিয়ে যেতে হয় কারণ ওখানে দোকানপাট নেই। এখানে ওখানে এক আধটা বাড়ি আর বিস্তীর্ণ চরের জমি।

ওখানে বাতাস খুব স্বাস্থ্যকর। সামর্থ্য থাকলে প্রতিদিন এরকম খোলা মাঠের নির্মলতা সেবন করা উচিত। তবে কোথাও গেলে এবং না গেলে অক্সিজেনের পাশাপাশি ধূম্রপানের বৈচিত্র অনর্থক নয় যাদের, তাদের ভুলোমনা হওয়া অনুচিত। কিন্তু তেমন হয়ে গেলে যা হবার তাই হয়েছিলো সেদিন। অনুসন্ধানে জানা গেলো, ইসকনের মন্দিরের কাছে এক বাড়িতে চানাচুর, চিপ্‌স, বিড়ি-সিগারেট বিক্রি হয়।

দেউরির পাশ থেকে 'কেউ আছেন বাড়িতে…?' জিজ্ঞেস করে জবাব মেলেনি। বাড়ির উঠোনে দাঁড়িয়ে দেখা গেলো, ঘরের দরজার পাশে বেড়ার গায়ে দেওয়ান মোক্তার ভান্ডারের চাটনি। চানাচুর, চিপ্‌স ঝুলে আছে কয়েকটা। পেছন দিক দিয়ে বাড়িতে প্রবেশ করায় দরজার সামনে দিয়ে যে লম্বা পথটা বয়ে গেছে সেটা প্রথমে চোখে পড়েনি। বার  কয়েক ডাকাডাকি করেও কারও সাড়া পাওয়া গেলো না।

কিছুক্ষণ পরে দরজার পাশে কাশ-রঙা চুলের একজনকে দেখা গেলো। বেশ বয়স হয়েছে, বোঝা যায়। সম্ভবত শুনতে পান কম। কিন্তু আশ্চর্য ব্যাপার, এই পৌঢ়ার মুখটা দেখে দিদির কথা মনে পড়লো। মুখের আদলটা ঠিক মিলে যায়। দাদিকে দিদি ডাকার অভ্যেস ছিলো, কিন্তু এই নারীকে সেদিন চাচী সম্বোধনের যৌক্তিকতা কী ছিলো জানা নেই। তিনি ক্ষীণ কণ্ঠে জানালেন, শেখ-পাইলট ছাড়া অন্য কিছু নেই। আর কে কে থাকে বাড়িতে, জানা গেলো না। তার নাম জানতে চাইলে বললেন, বয়স হয়েছে তাই নামের দিশা নেই। বিশ্বাস হলো না। দিদির নাম ছিলো নূর বানু। দিদি অবশ্য নিজের নাম জানতেন শেষ বয়সেও। দিদির তুলনায় এই বয়ষ্ক মানুষটা বেশ ফর্সা।  ছবি নিতে চাইলে কিছু বললেন না; তাকিয়ে থাকলেন। দিদি হলে অনীহা দেখাতেন।

অনেক দিন হয়ে গেছে। চরের ওই ছোট্ট বাড়িতে সেই সংগ্রামী নারী এখন কেমন আছেন জানা নেই। অনেকদিন ওপারে যাওয়া হয় না। সামনে কোরবানির ঈদ। ঈদের ছুটিতে নগরবাসীদের অনেকেই তো ওপারে বেড়াতে যাবেন। এই নিভৃতচারী পৌঢ় মানুষটিকে তার হারিয়ে ফেলা সময়গুলো ফিরিয়ে দেওয়ার সাধ্য কারও নেই। তবে তার দোকানে শেখ-পাইলট আর চাটনি-চানাচুর ছাড়াও এপারের দোকানগুলোর চালু পণ্যের বেশ কয়েকটির সরবরাহ নিশ্চিত করা নিশ্চয়ই অসম্ভব নয়।