৩৩ লাখ পাউন্ড জরিমানা, কেউ কথা রাখে না– ও কিছু না

কাজী শহীদ শওকত
Published : 13 Oct 2016, 04:42 AM
Updated : 13 Oct 2016, 04:42 AM

যুক্তরাজ্যের আর্থিক খাত তদারককারী কর্তৃপক্ষ (ফিন‌্যানন্সিয়াল কনডাক্ট অথরিটি তথা এফসিএ) বাংলাদেশের সোনালী ব‌্যাংককে জরিমানা করেছে ৩৩ লাখ পাউন্ড। গত ২০১০-এ সোনালী ব্যাংকের ইউকে শাখার মুদ্রা পাচার প্রতিরোধ ব্যবস্থার অপর্যাপ্ততার কথা উল্লেখ করে বাংক কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করে দিয়েছিলো এফসিএ। কিন্তু ব্যাংকের সেই দৈন্যদশার প্রত্যাশিত কোনো উন্নতি হয়নি। তদারককারি কর্তৃপক্ষ তাদের তদন্তে ২০১০ থেকে ২০১৪-পর্যন্ত সময়ে ব্যাংকটির মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ ব্যবস্থায় আশানুরূপ পরিবর্তন পেতে ব্যর্থ হওয়ায় এই জরিমানা। পাশাপাশি সোনালী ব্যাংক ইউকে শাখাকে নতুন গ্রাহকদের কাছ থেকে আমানত গ্রহণের ওপর ছয় মাসের নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।

.

৩৩ বছর কেটে গেলেও কথা না রাখার কষ্টের কথা কবি বলে গিয়েছেন। ইংরেজরা দুইশো বছর কথা রাখেনি এ তল্লাটে এসে। কতোজনে কতোভাবে কেড়ে খেয়েছে আমানত! কতো জাতি শত বছরেও বদলাতে পারেনি খাছলত! আমরা কি সেরকম? না, সেরকম নই। হ্যাঁ, আমরা সাংস্কৃতিকভাবে 'স্লো এ্যন্ড স্ট্যেডি ইউন্‌স দ্য রেইস'-এই বিশ্বাস লালন করি। আমাদের ধৈর্য আন্তর্জাতিক যেকোনো মানদণ্ডে শীর্ষে থাকার যোগ্য বটে। অধৈর্য ইংরেজদের দেশে চার-পাঁচ বছর মহাকাল হতে পারে, সোনালী ব্যাংক যাদের তাদের কাছে নয়। সোনালী ব্যাংক আমাদের। এক সময়ের সোনালী আঁশের স্মৃতিমাখা নাম সোনালী ব্যাংক। এ ব্যাংকের পরিচালন নিয়ে যুক্তরাজ্যের অসন্তুষ্টি যে অশোভন, তা বোঝে ক'জন আর তা কে কাকেই বা বোঝাবে?

.

ইউকেতে সোনালী ব্যাংক ব্যবস্থাপনায় কোনো সমস্যা হলে সে দায় শুধু বাংলাদেশের উপর চাপানোকেও অন্যায় মনে করবার কারণ আছে। কিন্তু এখন আর সেসব বলেই বা কী লাভ? জরিমানা চেয়েছে, দিয়ে দেবো। এর চেয়ে ঢের বেশি টাকার মায়া ছেড়ে দেয়ার সামর্থ্য আমাদের রয়েছে–সে প্রমাণও আমরা দিয়েছি। আমরাও দাতা হই। ব্যাপার নাহ। বাংলাদেশের টাকায় আন্তর্জাতিক শকুনের চোখ পড়েছে বহুদিন হলো। দেশি কাওয়ার দোষ কী?

.

বিবিসিকে ধন্যবাদ, সংবাদটিকে খুব যত্ন করে সুন্দর শিরোনামে  প্রকাশ করেছে। আন্তর্জাতিক মিডিয়াতে এভাবে বাংলাদেশের নাম দেখে নাগরিক হিসেবে লজ্জিত নই; ঈষৎ পুলকিত। আমরা যে নামের বড্ড কাঙাল! আর আমরা জানি, এতো কাকের আহার জোগানো বাংলাদেশের কাছে ওই কয়েকটা টাকা তো একটা চড়ুইয়ের ব্রেকফাস্ট। আমাদের ঐতিহাসিক সোনালী ব্যাংক। যুক্তরাজ্যের অবুঝ সরকার।  ছোটখাটো বিষয় নিয়ে খুঁতখুঁতানি। আরও তো দেশ আছে এই দুনিয়ায়। সরল প্রাণের প্রাচুর্যে ভরা এমন একটি সোনার দেশ, সোনার সরকার– ওরা যদি বুঝতোই, তবে কি আর এভাবে অসভ্যের মতো জরিমানা করে হাসির পাত্র হতো!

.

কোনো কথা হবে না, টাকা চাইছে, টাকা দিয়ে দেয়া হোক। ও কিছু না। সোনার বাংলা, সোনালী ব্যাংক সুন্দর থাকুক!