ডাস্টবিনে-ভাগাড়ে রুটি নয়, পড়ুক শস্যদানা কিছু

কাজী শহীদ শওকত
Published : 8 April 2017, 07:25 AM
Updated : 8 April 2017, 07:25 AM

দুঃখিত। আপনার অস্বস্তি আসন্ন। এমনকি আপনি যদি হন সে জন যিনি  নিয়মিতই দেখে থাকেন এমন, আপনার ভেতরও বিশ্রি অনুভূতি আঘাত হানতে পারে। এরকম দৃশ্য সংবাদপত্রের পাতায় সৌন্দর্যহানির কারণ হতে পারে। হ্যাঁ, এই প্রথম ছবিটির কথাই বলছি।

আমরা সুন্দর চাই। প্রাকৃতিক সুন্দর বিপন্ন হচ্ছে হোক। সবুজরক্ষা আর শিল্পায়ন-নগরায়ন যুগপৎ চলে না।  না চলুক। কেউ কেউ এমনিতেও সবুজ নিয়েই বাঁচেন। নগরেও। ছাদে, বারান্দায় সবুজ তাদের বেড়ে ওঠে রোদে-বাতাসে-বৃষ্টির ছাঁটে। কিন্তু সবার তো আর অতোটা করার সুযোগ হয় না। ইচ্ছে হলেও সময় হয় না। অথচ মানুষের ভেতর সুবুজের যে প্রচণ্ড টান বিদ্যমান, তার জন্য সবুজের সংস্থান করা চাই। যতোটা পারা যায়, বইয়ে, টিভিতে, ছবিতে গল্পে প্রাচুর্যময়, পাহাড় সমান করা চাই। প্রচণ্ড খাচ্চর মানুষও রুচিশীলতার ভাণ জানে।

টাকায় সবুজ পোষা যায়। অফিসের ভেতরে-বাইরে। টবের ভেতর। খাচায় পুরা পাখির মতোন সবুজ কিছু এমনটাই। ওদিকে মুড়িকে, চালকে, গুড়কে ফর্সা হতে হবে। স্ট্রবেরির ঘ্রাণ রেগুলার খাওয়াতে হবে। রাস্তা-ঘাট ধনী শহরের রাস্তার মতো দেখাতে হবে—ঝকঝকা-তকতকা। এসব আমরাই চাই। ভালো চাই। মানছি যে, ভালো রাখতে সবার ইচ্ছে হতে না-ই পারে। তাই বলে ভালো থাকবার ইচ্ছেটাও কারও না-ই বা হতে পারে – নাহ্‌, তেমনটি ভাবা যাচ্ছে না।

পাখির চেহারা চোখের-মনের শান্তিধারা। নগরে সবুজ যেমন তৃষ্ণার নাম, পাখিও তেমন বিস্ময়ের নাম। প্রশান্তিময় বিস্ময়। দ্রুত যেভাবে পালটে যাচ্ছে চারপাশ, আজকাল আর তেমন করে চোখের-মনের যত্ন কোথায় পাই? হ্যাঁ, ঘাসের ছবি, পাখির ছবি দেখা যায়। বেশ ঝকঝকে ছবি মেলে হাতের মুঠোয়। ডাস্টবিনেরটা নাক দিয়ে যায়। চোখ এড়িয়ে যায়।

শহরের ময়লার ভাগাড়গুলোতে পাখিদের হৈচৈ। প্রথম ছবিটি ঠিক ওরকম ভাগাড়-টাগাড়ের নয়, শম্ভুগঞ্জ ব্রিজের ধারে যেমন আছে একটা। এই জায়গাটি পার্কের প্রবেশ পথেই, পাঁচিলের পাশ ঘেঁষে। দেখে মনে হবে এই পাখিটার মন খুশি। রুটির টুকরো একটা নিয়েছে মুখে। অনেক বড়ো। বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেও গলায় পুরে দেবার উপযোগি করে ছিঁড়তে পারলো না। খুব কষ্টে গলায় নিয়ে নিলো বড়ো এক টুকরো। ফের চেষ্টা। খিদে বলে কথা।

মনে হবে, এসব উচ্ছিষ্ট রুটির আদর পাখিরা যে পাচ্ছে তা-ই বা কম কী? আমরা রুটি খাই, পাখিরাও রুটি খাক। পাখিদেরকে আমরা ভালোবেসেও তো রুটি খেতে দিই কতোই।

.

সত্যিটা জানা গেলো। রুটির উপকার যতো, তারও চেয়ে ক্ষতি অনেক বেশি। পাখির স্বাস্থ্যহানির কারণ এটি। অকাল মৃত্যুরও কারণ। এসব পাখিদের কাছে রুটি মানে চুয়িংগাম। খেলে খিদে কমে। পুষ্টির প্রশ্নে থতমত। এসব উচ্ছিষ্ট খেতে গিয়ে পাখিরা চরম সমস্যায় পড়ে কারণ আরামে মুখে পুরে দেওয়া যায় না; ছোট করে নিতে হয়—যা মোটেই সহজ নয়। প্রায়শ জোর করে ঠেলেঠুলে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি বড়ো টুকরো মুখে পুরে নেয়। ওটা প্রথমে গিয়ে গলার ঠিক নিচেই একটা থলেতে (ইংরেজিতে ওটাকে ক্রপ বলে) জমা হয়। এখানে থাকা অবস্থায় অনেক সময় ঈস্ট ইনফেকশন হয়ে থাকে। এছাড়াও, ক্রমাগত রুটি দিয়ে খিদে মেটাতে গিয়ে ঘটে নিরবে সর্বনাশ। অন্য সব আবশ্যিক খাদ্যোপাদানের চরম ঘাটতি দেখা দেয় পাখির শরীরে। এতে পাখি দুর্বল হয়ে পড়ে। সহজেই অসুখে আক্রান্ত হয়। শেষে অকাল মৃত্যু।

.

এসব পাখির প্রয়োজন দানাদার খাবার যেমন ধান, গম, ভুট্টা, কলাই কিংবা ফুলের মধু, ফলের শাঁস, বিচি ইত্যাদি। নাগরিক পাখি এসব পাবে কোথায়? মানুষের মতো এরাও নগর ছেড়ে দূরে না যাওয়ায় হয় আসক্ত, নয় অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। তাই রুটি খেয়ে পেট ভরে। কৈশোর পেরিয়ে যৌবনের পুরোটা সময় কিংবা আরও কিছুদিন উড়বার সাধ পাখিদের পূরণ বুঝি পূরণ হবার নয়! বাসি রুটিতে, সিঙ্গারায়, পুড়িতে কাকের হয়তো দিব্যি চলে যায়, সবার কি তেমন নাকি?

.

নদের ধারে, পার্কের গেইটের সামনেই হঠাৎ গজানো এই বর্জ্য বিয়োগখানার বিলুপ্তি যেমন জরুরি, তেমনই ডাস্টবিনে, ভাগাড়ে রুটি ফেলা বন্ধ করা জরুরি। এখানকার জীববৈচিত্র্য নির্মমতার শিকার না হোক। খাদ্য পচিয়ে জ্বালানি বানানোর গুরুত্বপূর্ণ বুঝি আমরা। পাখিদের জন্য ডাস্টবিনে শস্যদানা বিতরণের গুরুত্ব অনুধাবনের অনুপযুক্ত হবার কথা তো নয়।


তথ্যসূত্রঃ http://www.huffingtonpost.ca/the-nature-conservancy-of-canada/feeding-bread-to-birds_b_11259694.html