বেগম মুনিয়া মা হবেন ময়মনসিংহের রাজবাড়িতে

কাজী শহীদ শওকত
Published : 18 April 2017, 07:13 AM
Updated : 18 April 2017, 07:13 AM

ভালো একটা বাসা পাওয়া এতো সহজ নয়। মানুষ বাড়ছে, বিল্ডিং বাড়ছে। গাছপালা কমছে। নতুন বিভাগ- সমস্যা সকলেরই। সবুজ যতখানি ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ওগুলোর হয় লোকেশন সবার পছন্দ নয়, কোথাও কোথাও ঘিঞ্জি; তার উপর আবার নিরাপত্তা নিয়ে আশঙ্কা। এই মুহূর্তে বাড়ির জন্য আর কোন যুতসই জায়গা পাওয়া যায়নি হয়তো। শেষমেশ তাই ডিমসম্ভবা মিসেস মুনিয়া মিস্টার মুনিয়াকে নিয়ে প্রজননের এই মৌসুমে এখানেই থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন। মন্দের ভালো আর কী। এখানে মানে এই রাজবাড়ি তথা শশী লজের সামনে, ল্যাম্পপোস্টের আগায়। মুনিয়া, তিলা মুনিয়া

ল্যাম্পপোস্টের সিএফএল বাল্‌বটা তিরিশ কি চল্লিশ ওয়াটের হবে। মাঠে কর্মরতদের কাছ থেকে জানা গেলো, ওটা নষ্ট নয়। রাতের বেলা এখানকার উজ্জ্বলতা এঁদের ঘুমের-প্রেমের জন্য হানিকর হওয়ার কথা। বাতির আলো মুনিয়াদের ডিমে তা দেওয়ার জন্য ভালো হলেও হতে পারে। তবে মানুষের মতো উপযোগিতা যাচাই ছাড়াই বাড়ি বানানোর সিদ্ধান্ত পাখিরাও নেবেন- এতোটা অধঃপতন এদেশের জীবজগতে এখনও নেমে আসেনি বলে বিশ্বাস হয়। ঝড়-বাদলের মৌসুম। গাছপালা কখন ভেঙে পড়ে ঠিক নেই। সে হিসেব মাথায় থাকলে ল্যাম্পপোস্টই আদর্শ। মন্দের ভালো নয়।

ঘরের ভেতরটা বসবাসের যোগ্য করতে যা যা দরকার আশপাশে তার সবই আছে। কিন্তু নিচ থেকে ওগুলোকে আনতে হয়। দুজনে মিলে রোদের মধ্যেও খুব মনযোগের সাথে কাজ করে যাচ্ছেন। ঘাসের, খড়ের লম্বা টুকরোগুলো একজন এনে দেন, আরেকজনে গুছিয়ে পেঁচিয়ে সাইজ করে নেন। ওদিকে গাছের ছায়ায় বুলবুলি, ফিঙে, দোয়েল আর শালিক ডাকাডাকি করছেন। ওঁদের হইচই ভালো লাগে। নিশ্চয়ই বাসা নিয়ে আপাতত টেনশন নেই। আবার অনেকেই হয়তো এ বছর বাচ্চা না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। পার্কের ধারে যে পাখিগুলো দেখা যায়, ওগুলোর চেয়ে এগুলোর স্বাস্থ্য ভালো বলে মনে হয়েছে।

কথা হচ্ছিলো তিলা মুনিয়া দম্পতি নিয়ে। মাঠের এক জায়গা থেকে লম্বা ডাঁটাওয়ালা ঘাস, আরেক জায়গা থেকে স্বল্পদৈর্ঘ্য, ঘন, নর্‌ চওড়া অংশ তুলে আনতে নিচে এসেছেন একজন। আর তাঁর ফেরার অপেক্ষা করছেন উপরের জন। লম্বা ডাঁটাগুলো ছিঁড়তে কখনও কখনও এক মিনিটের বেশি সময় লেগে যায়। তাই বাসা থেকে বেরুলে ফিরতে মাঝে মাঝে দেরি হয়ে যায়। তখন বাসায় অপেক্ষমান মুনিয়ার উৎকণ্ঠা বেড়ে যায়। গলা বাড়িয়ে সঙ্গীকে খুঁজতে থাকেন।

 

এই পাখি দম্পতির জীবন নির্বিঘ্ন হোক। কিন্তু মনে মনে খালি চাইলেই আর খামছালেই তো আর হয় না। নিরীহদের বিপদাপদ এমনিতেই নাকি বেশি বেশি। তাছাড়া আমরা তো জানিই, ভালো একটা বাসা পাওয়া এতো সহজ নয়। মানুষ বাড়ছে। বিল্ডিং বাড়ছে। গাছপালা কমছে। নতুন বিভাগ। সমস্যা সকলেরই।

.

ভিডিওতে দৃশ্যটি দেখতে বেশ লাগে।

https://www.youtube.com/watch?v=s_Q1GBbB4kw