পৃথিবীর আরেক রাত শেষে ভোর এলো। বিদ্যুৎ চলে গেলো। খিড়কি খুলতেই ছটফটে বাতাসের তোড়, নাকে মুখে। ঠাণ্ডা, স্নিগ্ধ, ভীষণ শিরিশিরে। আর খুব খুব ফিকে আলোয় তাকাতেই, আকাশজুড়ে মেঘ। সাদাকালো উড়াল পাহাড় যেনো। বইছে ভীষণ। দ্রুত রঙ বদলে নীলাভ থেকে কুচকুচে কালো। এভাবে এই ঘুমন্ত শহরে, জানলার ধারে বসে, এই আষাঢ়-ভোরে, ভূমিষ্ঠপ্রায় বৃষ্টির মুখ দেখা যায়। এসময় পাখিরা মন খারাপ করে থাকে; আকাশের অধিকার নেই বলে। পিঁপড়েদের আর রেলওয়ে বস্তির লোকেদের মতো অনেকেরই কষ্ট বাড়ে। আমার অবস্থা অনেকের চেয়ে ভালো। তাই সুদূর সমুদ্দুর থেকে ভিজে আসা এই তাজা বাতাসে খালি গায়ে বসে থাকা যায়। অঝোর ধারা এই নামলো বলে।
.
নীল নবঘনে আষাঢ়গগনে তিল ঠাঁই আর নাহি রে।
ওগো, আজ তোরা যাস নে ঘরের বাহিরে॥
বাদলের ধারা ঝরে ঝরো-ঝরো, আউষের ক্ষেত জলে ভরো-ভরো,
কালিমাখা মেঘে ও পারে আঁধার ঘনিয়েছে দেখ্ চাহি রে॥
.
যে ভোরটার কথা বলছি (১৯ জুন ২০১৭) তার থেকে ঠিক একশো সতেরো বছর সতেরো দিন আগে লেখা হয়েছিলো। স্কুলের বইয়ে এই গানটি ছিলো। আমরা তো কবিতা বলেই জানতাম। ওই সময়ে এরকম বৃষ্টির ঘনঘটায় ঘরবন্দি হয়ে রবীন্দ্রনাথকে মনে পড়তো।
.
দুয়ারে দাঁড়ায়ে ওগো দেখ্ দেখি, মাঠে গেছে যারা তারা ফিরিছে কি,
রাখালবালক কী জানি কোথায় সারা দিন আজি খোয়ালে।
.
রাখালবালক যেথা খুশি সেথা যেতে পারতো। কিন্তু কবিতাপড়া ওই শিশুদের যাবার জায়গা খুব ছিলো না। স্কুলে যাওয়া যেতো। পিছল পথে খুব সাবধানে পা ফেলে, বইখাতা আর ছাতা সামলে তিন কিলোমিটার। সে আজ আলোকবর্ষ দূর।
.বাতাস পড়ে গিয়ে বৃষ্টি শুরু। ঘন বিদ্যুৎময় আকাশের কোল থেকে বজ্রহুঙ্কার সব ছাপিয়ে ঝুম বৃষ্টি। ভয়াল আকাশের দিকে চোখ মেলে মেঘ-বৃষ্টির পুরনো সেই দিন-রাত-ভোর-সন্ধ্যা মনে পড়ে। আবার এই বৃষ্টির মাঝেই খুব রোদমাখা সেই দুপুরটার কথা মনে পড়ে। নদের ধারে গাছতলে বসে দেখা। তুলাতুলা মেঘ আর নীল আকশের সুন্দর এখন চাইলেই কি আর পাওয়া যাবে? শরৎ আসতে এখনও বাকি।
https://www.youtube.com/watch?v=etBD5XBGYwI
.বৃষ্টি এলেই ইদানিং এই গানটা খুব মনে পড়ে। খুব প্রিয় আমার। বাপ্পা'র গাওয়া সেরা গান বলে মনে হয়।
,
ছবি– ব্লগার