দুরন্ত গতির পতঙ্গ এক

কাজী শহীদ শওকত
Published : 28 June 2017, 08:12 AM
Updated : 28 June 2017, 08:12 AM

বর্ষায় বাঁশের খুব বাড় বাড়ে। পাতায় পাতায় স্নিগ্ধ সবুজ চকচকে হয়ে ফুটে ওঠে। বাড়ির উঠোনে দুটি ঝাড়। গত বৈশাখের ঝড়ে বাঁশের মাথাসব এদিক-ওদিক ছড়িয়ে গেছে। এবার দেখি, এক ঝাড়ে ফুল ফুটেছে। শীর্ণ কঞ্চির শরীর থেকে এসব ফুল চারদিকে ছড়িয়ে আছে। এই ফুলে নিশ্চয়ই মধু আছে; নয়তো এদিকে মৌমাছির আনাগোনা হবার কথা নয়। বাঁশঝাড়ের তলে ছায়া মেলে। ইঁদুর ছাড়াও বিভিন্ন পোকামাকড় তাদের আশ্রয় ও খাদ্য খুঁজে পায় এখানে। একটি বাঁশঝাড় একটি শীতল বিশ্রামাগার।

.

মাছিদের আয়েশের জন্য বাঁশঝাড় জরুরি নয়। মানুষের কাছে যা বিশ্রী এবং দুর্গন্ধময়, যেমন এঁদো ডোবা, প্রাণীর গলিত শরীর, বিষাক্ত বর্জ্য, সেখানেই এদের জন্ম। এদের ঘুমের জন্য অতি উষ্ণ নয় এমন যে কোনো একটা জায়গা হলেই হলো। শব্দদূষণ, বায়ুদূষণ, পানিদূষণ এদের কাছে কোনো ব্যাপার না। মাছিদের অনিদ্রা রোগ নেই। সারারাত এদের ঘুমে কাটে। মানুষের মতো কারণে অকারণে রাত জাগাও এদের স্বভাবে নেই। ক্ষণজন্মা এই দুরন্ত পতঙ্গটির আয়ুষ্কাল মাস খানেকের বেশি নয়। তার মানে ঘুমের সময় বাদে জীবনের হুল্লোড়-প্রেম-কাম-প্রজনন সব এরই মাঝে।
.
তখন সূর্য উঠি উঠি। আকাশে অনেকটা মেঘ। বাঁশঝাড়ের মাথায় পাখিদের ছুটাছুটি, হৈচৈ। রাতের বাতাসে ভাসমান জলকণাদের কেউ কেউ ক্লান্ত হয়ে বাঁশফুলের গায়ে বসেছিলো; সকাল হয়েছ অথচ যাবার নাম নেই। একই অবস্থা মাছিটারও। এর নিশ্চয়ই বেলা করে উঠার অভ্যেস। গ্রামে এখন আম-কাঁঠালের ছড়াছড়ি। অতি ভোজনে আলস্যও অমূলক নয়। ওর খুব কাছে গেলেও উড়ে গেলো না। এপাশ-ওপাশ করলো দুইবার। চেহারায় চেনা যায়, এই মাছিটি কাঁঠালপ্রিয়। আপনারা নিশ্চয়ই এদের অনেককে কাঁঠাল খেতে দেখেছেন।


.

কতো দেশে কতো মানুষ মাছি হয়ে মারা পড়ছে কতো কতো নিঠুর হাতে। মাছিরা মানুষ হয়ে কিংবা মানুষের আয়ুষ্কাল পাড়ি দিয়ে মরবার অধিকার রাখে না তবু। গতিময় এই বিরাট জীবন সামান্য খোলস ছেড়ে একদিন পাখাহীন উড়ে যায়। স্বজনেরা তার খবর কেমন করে রাখে!