মূল্য, আকাশ সমতূল্য

খালিদ
Published : 26 June 2012, 10:35 AM
Updated : 26 June 2012, 10:35 AM

দ্রব্যমূল্য নিয়ে অনেকেই অনেক কথা বলছেন, তাই আমি ভেবেছিলাম নতুন করে আর কিছু বলবো না। কিন্তু বর্তমান যে পরিস্থিতি তাতে করে দু'ছত্র না লিখে পারলাম না।

বিদ্যুতের দাম সম্ভবত এবার আকাশ ছাড়াচ্ছে। ৫৭% বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে তার মানে এর চেয়ে ভালো কিছু ধরে নেওয়ার কোন কারন নেই। এর ফলাফল কি হতে পারে আমরা কি একটু চিন্তা করে দেখছি? কলকারখানায় উৎপাদন খরচ বাড়বে, বাড়বে উক্ত উৎপাদিত পণ্যের বাজার মূল্য। এই বাড়তি খরচ বহন করার পরও কি গার্মেন্টস মালিকরা শ্রমিকদের দাবি মেনে নিয়ে তাদের বেতন বাড়াতে রাজি হবে? অপর দিকে প্রতিদিন হাড়ভাঙা খাটুনির পর মাস শেষে মাত্র তিন-সাড়ে তিন হাজার টাকা পেলে শ্রমিকরা কী ভাবে বাঁচবে? এই পরিস্থিতিতে তারা যদি বেতন বৃদ্ধির দাবিতে রাস্তায় নামে আমরা তাদের দোষইবা দেই কীভাবে? আরো একটি শ্রমিক সংঘাতের গন্ধ কি একটুও পাওয়া যাচ্ছে না?

সারা দেশে প্রচুর বিদ্যুত চালিত গাড়ি চলাচল করে। বিদ্যুতের দাম বাড়ার ফলে বাড়বে এসব গাড়ি ভাড়া, তার সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়বে বাড়ি ভাড়া। এই বাড়ি ভাড়া নিয়ে পত্র পত্রিকায় অনেক লেখা লেখি হয়ে থাকলেও সেটি উপরের দিকে উঠছে তার আপন গতিতে। এক্ষেত্রে বাড়ির মালিকদেরও একেবারে ঢালাও ভাবে দোষি সাব্যস্ত করা যায় না। আশেপাশের সবকিছুর মূল্যই যখন বাড়ছে তখন বাড়ির ভাড়াটি আবার থেমে থাকবে কোন যুক্তিতে। কিন্তু সবকিছুর ভেতর দিয়ে মানুষ কীভাবে বেঁচে থাকবে সেটাও একটা বড় প্রশ্ন।

একটা হিসাব দেই আপনাদের। বুয়েট থেকে পাশ করার পর একজন ছাত্র বিসিএস পরীক্ষাতেও কৃতকার্য হল। তাকে আপনারা বাংলাদেশের সবচেয়ে সফল মানুষদের একজন হিসেবেই ধরবেন। আপনাদের এই সফল মানুষটির বেতন প্রতি মাসে ৩০ হাজার টাকা। এটা আয়। এবার ব্যয়ের একটা হিসেব দেই। বেতন পাওয়ার পর তাকে বাড়িওলার হাতে দিতে হয় ১৫ হাজার টাকা (কম করে ধরলাম)। মাসের খাওয়া দাওয়া ৫ থেকে সাত হাজার টাকা। বাকি থাকে আট দশ হাজার টাকার মত। সন্তানের পড়ালেখার খরচ কম পক্ষে ৫ হাজার টাকা। একজন বিসিএস ক্যাডারের অন্যান্য খরচ মিলিয়ে আরো ৫-৬ হাজার টাকা অন্তত যাবেই। আর বিপদে-আপদে, অসুখে-বিসুখে হাত পাততেই হয় আপনাদের এই সফল মানুষটির। তাহলে দেশের অন্য সব মানুষ কীভাবে বেঁচে আছে? কীভাবে দিন চলে তিন হাজার টাকা মাসিক বেতন পাওয়া গার্মেন্টস শ্রমিকের?

আমাদের দেশে এটি এখন একটি প্রবাদ বাক্যই হয়ে দাড়িয়েছে যে শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রী কথা বললেই দাম বাড়ে। যেদিনই তিনি বললেন 'এবারের রমজানে দ্রব্যমূল্যের দাম যাতে স্থিতিশীল থাকে সে ব্যাপারে সরকার কঠোর পদক্ষেপ নেবে।' পরের দিনই কোন এক সংবাদ পত্রের রিপোর্টার রাজধানীর কোন এক কাঁচাবাজারের সামনে দাঁড়িয়ে হাসিমুখে আমাদের সুসংবাদ(!) দিচ্ছেন "চালের দাম প্রতি কেজিতে তিন টাকা, আটা কেজিতে দু'টাকা, তেল লিটারে পাঁচ টাকা, সব ধরনের মাংস কেজিতে চার থেকে পাঁচ টাকা করে বেড়েছে। এছাড়া শাকসবজির দামও বাড়তির দিকে।" তখন সরকারের সেই 'কঠোর পদক্ষেপে'র ফলাফল আমরা হাড়ে হাড়ে টের পাই।

অর্থনীতি শাস্ত্রটি বলে যে মূল্যস্ফীতির পরিমান দশ শতাংশ অতিক্রম করলে তা মোটেও ভালো কিছু নির্দেশ করে না। আমরা তো অনেকদিন যাবত এর উপরের দিকেই আছি। সর্বসাধারনের অতি সাধারন খাবার ডিম এখন বিলাস জাতীয় খাদ্য দ্রব্যের তালিকায়। যে ডিম অল্প ক'দিন আগেই কিনেছি দশ টাকা হালি দরে সেই একই দামে এখন দোকানদার আপনাকে একটি ডিম দিতেও গড়িমসি করবে। এই যখন অবস্থা তখন আবার একজন বলে বসলেন "মুল্যস্ফীতি কমাতে গেলে প্রবৃদ্ধি কমে যাবে।" এর অর্থ আমাদের সামনে এখন দু'টি পথ রয়েছে। হয় প্রবৃদ্ধির চিন্তা বাদ দিয়ে মূল্যের রাশ টেনে ধরতে হবে নাহয় মূল্যস্ফীতির সাথে বন্ধুত্ব করে প্রবৃদ্ধির উত্তরোত্তর বৃদ্ধি সাধন করতে হবে। কোনটা করবো সম্ভবত আমাদের অর্থনীতিবিদগনই ভালো বলতে পারবেন।