একটি বাগান এবং একজন ইউএনওর গল্প

মোঃ আব্দুল মোমেন
Published : 4 May 2018, 04:10 AM
Updated : 4 May 2018, 04:10 AM

খুব বেশিদিন আগের ঘটনা নয়, কয়েক মাস আগের মাত্র। কয়েক মাসেই যে বদলে যেতে পারে একটি শহর কিংবা বাজারের ঘিঞ্জি পরিবেশের চিত্র সেটির উদাহরণ হতে পারে এই বাগানটি। দিনাজপুর জেলার খানসামা উপজেলার পাকেরহাট বাজারে যার অবস্থান।

চলুন গল্পটা শুরু করি। কিছুদিন আগে যখন বুক ফাটা খাঁ খাঁ রোদে চারিদিকে সবকিছু ঝিমিয়ে পড়তে শুরু করেছিল তখন এই বাগানটার বুক চিরে তৃষ্ণার কাতরে ফেটে গিয়েছিল মাটি। বাগানের বুক ফাটা আর্তনাদ দেখে চুপ থাকতে পারিনি, বাজারের এর-ওর কাছে একটা পাইপলাইনের জন্য ছুটে বেড়িয়েছি বাগানটাতে একটু পানি দেওয়ার জন্য।

দুর্ভাগ্যবশত বাগানের আশপাশের কোনো মটরলাইনের পাইপগুলো বাগান পর্যন্ত আসেনি। আমার সেদিন খুব কান্না পেয়েছিল ভিতরে ভিতরে। একটি বাগানের কয়েকটি গাছের জন্যও মানুষ কাঁদতে পারে। সত্যিই কি মায়া! আমি বলে কথা নয়, হয়ত বাগান প্রিয় অনেকের এই অবস্থা হতো।

চারিদিকে অনেক মানুষ, মানুষের ভিড়ে মানুষ চেনা যায়না, কিন্তু কিছু কিছু মানু্ষ সমাজ, দেশ, রাষ্ট্র কিংবা মানুষের জন্য কাজ করেন। বাগানটা করেছিলেন বর্তমানে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারি সচিবের দায়িত্বে কর্মরত সাবেক খানসামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাজেবুর রহমান। অনেকের কাছে তিনি মহান, অনেকের কাছে পুত্র, অনেকের কাছে স্যার, অনেকের কাছে বন্ধু আবার অনেকের কাছে অবুঝ লোক বলে পরিচিত ছিলেন খানসামা উপজেলার সাবেক এই ইউএনও।

তিনি চেয়েছিলেন গোটা উপজেলাকে সুন্দর একটি বাগান হিসেবে তৈরি করতে, যেখানে থাকবে সবুজ সাদা মনের কিছু মানুষের বাস। সবাই গড়ে উঠবে সবুজের মত করে টগবগিয়ে! তিনি সেটা পেরেছিলেন, চেষ্টাও করেছিলেন। বর্তমানে যিনি আছেন তিনিও হয়ত চেষ্টা করছেন এরকম একটি সুন্দর বাগান তৈরি করে দিতে। তিনিও সফল হবেন এই কামনাই করি।

সরকারি লোকেরা নিয়ম অনুযায়ি বদলি হন। কিন্তু কতজন আছেন যারা বদলে দেবার জন্য কাজ করে যান স্বার্থ ছাড়া? আমাদের দেশে যখন ঘুষ-বাণিজ্য, দুর্নীতিতে অনেক অফিসাররা ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েন তখন এরকমও কিছু অফিসারের দেখা মিলবে যারা দেশটাকে নিজের পরিবার-পরিজন মনে করেন।

সাজেবুর রহমান শুধু বাগান প্রিয়ই ছিলেন না বরং তিনি বই পড়ার জন্য গড়ে তুলেছেন বিরাট কয়েকটি লাইব্রেরিও। লাইব্রেরিগুলোতে বরাদ্দ দিয়ে গেলেও বর্তমানে সেই টাকা চেয়ারম্যানদের পকেটে ঘুরপাক খাচ্ছে শুনলাম। তিনি চলে গেছেন খানসামা উপজেলা থেকে, এসব নিয়ে অনেকের ভাবনাটাও কমে গেছে। আমরা ক্ষুদ্র দু-একজন ভেবেই বা লাভ কি?

অনেক মানুষও ফুলে ফেঁপে উঠছে, বাগানগুলোও বাড়ছে নিজ গতিতে। বাগানটিতে আর পানি দিতে হয়নি, সৃষ্টিকর্তা বুকফাঁটা আর্তনাতের ডাক শুনে বৃষ্টি নামিয়েছিলেন সেদিন। বাগানটিতে আবার ফুল ফুটবে, হাজার হাজার মানুষ দেখবে, কেউ কেউ বলবে বাগানটি সাজেবুর স্যার লাগিয়েছিলেন। আবার বাগানটি মরে গেলে অনেকেই হয়তো বলবে কাম পায় নাই এখানে বাজারের মধ্যে বাগান লাগাতে গেছেন।

সাজেবুর স্যার যেখানেই থাকেন না কেন গাছগুলো বেঁচে থাকবে আর আপনিও বেঁচে থাকবেন। বেঁচে থাকবে আমাদের মতো বাগানপ্রিয় মানুষগুলোও।