মনিপুর-দত্তখলা: উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি যেখানে

সীমান্ত খোকন
Published : 12 Dec 2016, 01:34 PM
Updated : 12 Dec 2016, 01:34 PM

মনিপুর-দত্তখলা। এই নাম দুটি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সবচেয়ে অবহেলিত দু'টি গ্রামের। এক সময় এই এলাকাগুলো সদর উপজেলার অধীনে থাকলেও এখন বিজয়নগর উপজেলার অর্ন্তগত। ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহর থেকে এর দূরত্ব প্রায় ৬ কিলোমিটার হলেও এই গ্রামের মানুষজন বঞ্চিত নাগরিক ও আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা থেকে।

মনিপুর-দত্তখলা গ্রামের আশে পাশে রয়েছে ছোট ছোট এরকম আরো প্রায় কয়েক পাড়া-গ্রাম। এর মধ্যে কল্যাণপুর, আতকা পাড়া, চাওরাখলা, হাওয়াইখলা, শাহপুর, লোহার মোড়া, বঙ্গরখলা, ফারাঙ্গাবাড়ি, গোয়ালখলা ও লক্ষিমোড়া অন্যতম। এসব গ্রাম ও ছোট ছোট পাড়াগুলো উপজেলার পত্তন ইউনিয়নে অর্ন্তগত। ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহর ও এই গ্রামের মাঝখানে রয়েছে ৬ কিলোমিটার প্রশস্থের বিশাল হাওর। বর্ষাকালে এই হাওরে থাকে অথৈ পানি আর শীতকালে থাকে ধান ক্ষেত আর চামড়া পুড়িয়ে দেওয়া রোদ। এই হাওরে আরো আছে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা অল্প কিছু সংখ্যাক ঘরবাড়ি, আছে ডাকাতের ভয়ও। এসব বাড়িঘরে ডাকাতি ও ডাকাতদের দ্বারা ধর্ষণের ঘটনাও ঘটে। কিন্তু এসব খবর পত্র-পত্রিকায় খুব একটা আসেনা বা পাড়া প্রতিবেশীরাও জানেনা। কেননা, মনিপুর ও দত্তখলা গ্রামে ঘরবাড়িগুলো একসাথে গেজাগেজি করে নির্মাণ করা হয়েছে, যাকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আঞ্চলিক ভাষায় "হাটি" বা "আডি" বলা হয়। কিন্তু এই হাউরের ঘরবাড়িগুলো কোন "হাটি"তে না থেকে বিচ্ছিন্ন ভাবে থাকায় বিপদে কারো আত্মচিৎকার কেউ সহজে শুনতে পায়না। তাই এসব ঘটনা অধিকাংশ ক্ষেত্রে চাপা পরে যায়।

শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ ব্যাবস্থা, কর্মসংস্থান ও বাল্যবিয়ে সহ নানা সমস্যায় ভুগছে এই এলাকাগুলোর বাসিন্দারা। এছাড়াও রয়েছে বর্ষাকালে চারদিকে থৈ থৈ পানি, এ যেন এক বিচ্ছিন্ন দ্বীপ। তবে সবচেয়ে বেশি যে সমস্যাটি লক্ষ্য করা গিয়েছে তা হলো, যোগাযোগ ব্যাবস্থা। তাছাড়া শিক্ষার প্রতি এখানকার মানুষের রয়েছে চরম অনিহা। এখানকার ৮০ ভাগ বাবা-মা তাদের সন্তানদের স্কুলে পাঠাতে আগ্রহী নন। আর বিয়ের ক্ষেত্রে ৯০ ভাগ হচ্ছে বাল্য বিবাহ। বিয়ের ১ বছরের মধ্যেই হচ্ছে বাচ্চা প্রসব। আর বাচ্চা প্রসবের ক্ষেত্রে মৃত্যুর সংখ্যাও কম নয়।

এখানে কয়েক গ্রামের জন্য রয়েছে একটি মাত্র ঔষধের ফার্মেসি। যেই ফার্মেসীতে রয়েছে অল্প কিছু ঔষধ। এর মধ্যে আবার অধিকাংশ ঔষদের কোন মেয়াদ নেই বা বোতলের মুখের ছিপি খুলা ঔষধ। তবে সবচেয়ে বেশি আতকে উঠার খবর হলো, এই ফার্মেসীতে যে ডাক্তার আছেন তার বয়স মাত্র ১৪ বছর। অবশ্য এই ডাক্তার সাহেব জানালেন, প্রকৃত ডাক্তারের অনুপস্থিতিতে তিনি তার কাজ চালিয়ে দিচ্ছেন।

বর্ষাকালে নিজের ভিটে মাটি রক্ষা করতে পানির সাথে করতে হয় যুদ্ধ। বর্ষাকালে মাছ ধরা আর বাকি সময় কৃষি কাজই তাদের একমাত্র পেশা। আর যোগাযোগের ক্ষেত্রে বর্ষাকালে নৌকা আর শীতকালে হেটে চলাই একমাত্র ভরসা। এই এলাকার বাসিন্দারা যুগ যুগ ধরেই এই প্রতিকুল পরিবেশের সাথে লড়াই করেই জীবন যাপন করছেন এখানে। "ইন্টারনেট বা ফেসবুক" শব্দটির সাথে এখানকার খুব কম মানুষই পরিচিত।

এই এলাকা এতটাই অবহেলিত যে, শহরের যুবকরা যখন আড্ডায় মাতে তখন তাদের দলের বোকা বন্ধুটিকে অন্য বন্ধুরা "মনিপুর-দত্তখলা" গ্রামের বাসিন্দা বলে মস্কারা করে। একটি নয় দুইটি নয়, উপজেলার পত্তন ইউনিয়নের ২৭টি গ্রামের মধ্যে ১৪টি গ্রামেরই এই অবস্থা। এই কথা জানালেন খোদ ইউপি চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম। প্রতিবেদকের সরেজমিন অনুসন্ধানে উঠে এসেছে এসব তথ্য।

ফুলবানু। ষাটউর্ধো এই মহিলা ঘরের পাশেই বসে ছানি পরা দুটি চোখে আনমনা হয়ে তাকিয়ে আছেন বর্ষার পানির দিকে দূরে কোথাও। কেমন আছেন আপনি? জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'আল্লাহ যিমুন রাকছে তিমুনই আছি বাবা'। পরে লাউ গাছের পরিচর্যা করতে করতে তিনি জানান, ১২ বছর বয়সে তার বিয়ে হয়েছিল এই গ্রামে। তখন পালকিতে করে বর-কনেকে নেওয়া হতো। এখন মোট আট সন্তান তার, কিন্তু কোন সন্তানই আজ প্রতিষ্ঠিত নন। ভালো কোন কর্মসংস্থান না থাকায় খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাতে হয় প্রায় সবার। তার ভাষায় 'পেট ভরে দুইটা ভাতই খাইতে পারিনা আবার বড়লোক ওমু ক্যামনে'। বলছিলেন ফুলবানু।

প্রায় ৫০ বছর আগে এই মহিলার ১২ বছর বয়সে বিয়ে হলেও এই আধুনিক যুগে এসেও এই এলাকার সমাজ ব্যবস্থার এতটুও পরিবর্তন হয়নি। এখনো এই এলাকায় ৯০ ভাগ কিশোরীর বিয়ে হচ্ছে ১২ থেকে ১৩ বছরের মধ্যেই। এই কথা জানিয়েছেন মনিপুর এলাকার মহিলা মেম্বার মাজেদা বেগমের স্বামী দারু মিয়া। তার কথা একটু যাচাই করার জন্য এলাকার কাদামাখা সরু পথ, বাড়িঘরের আনাচে-কানাচে বা কখনো উঠোনে হেটেছি আমরা। দু'চোখে দেখলাম দারু মিয়ার কথার বাস্তব চিত্র। দেখেছি কিভাবে ১২/১৩ বছরের কিশোরী তার শিশুটিকে স্তন পান করাচ্ছে।

অনেক কিশোরী বধুর কোলে আবার দুইটা সন্তানও দেখেছি। এমনই একজন কিশোরী বধু ইউনুস মিয়ার মেয়ে নিপা। দেখেই বুঝা যাচ্ছে তার বয়স ১৩/১৪ হবে। তার শাশুরির সামনে তাকে প্রশ্ন করলে সে জানায় তার বয়স ১৯। ওই কিশোরীর সাথে কথা বলার সময় বার বার বাঁধা দিচ্ছিল তার ভাসর মঙ্গল মিয়া (৫৫)। মঙ্গল মিয়া মিথ্যা বলায় আরো এক ধাপ এগিয়ে বলেন, নিপার বয়স ২৬। পরে অবশ্য নিপা বলেছেন, বাবা-মা'র ইচ্ছাই অল্প বয়সেই বিয়ে বসতে হলো তাকে। নয়লে এলাকার মুরুব্বীরা মন্দ বলবে। এলাকার সবাই যেভাবে চলছে সেভাবেই চলতে হয়। নিপা কোন লেখা-পড়া করেননি। নিপার মতো এরকম অবস্থা এই এলাকার প্রায় সব মেয়েদের।

মাওলানা আব্দুল মুকিত, ইমাম, বাইতুল ফালাহ জামে মসজিদ, কল্যাণপুর, মনিপুর। এই ইমাম সাহেব এখানে ৭ বছর যাবৎ চকুরী করছেন। তিনি জানান, তিনি এখানে আসার পর থেকে অন্তত দেড় থেকে দুইশত মেয়ের বিবাহ সম্পন্ন করেছেন তিনি যাদের বয়স ১২ থেকে ১৩ বছরের বেশি নয়। এখানকার লোকদের তিনি বাল্য বিবাহের ক্ষতিকারক দিক সমন্ধে বুঝিয়েছেন অনেক। কিন্তু এতে কোন কর্ণপাত করেনা এই এলাকার মানুষ। মি. মুকিত বলেন, বিয়ের ক্ষেত্রে অল্পবয়সী কিশোরীদের প্রাপ্ত বয়স্ক বলে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের কাছ থেকে সনদ সংগ্রহ করে অভিবাবকরা। তখন ইমাম বা কাজীদের বিয়ে না পড়িয়ে কিছু করার থাকেনা।

এবিষয়ে পত্তন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম বলেন, জন্ম সনদের ক্ষেত্রে কোন ব্যাক্তিকেই সরারসি ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সনদ দেওয়া হয়না। যে ব্যাক্তির নামে জন্ম সদন দেওয়া হবে তার সমন্ধে স্কুল শিক্ষক বা সরকারি কোন কর্মকর্তার ক্লিয়ারেন্স লাগে। সেই ক্লিয়ারেন্সে যে বয়স লিখা থাকে আমরা জন্ম সনদে তাই লিখে দিই।

ইমাম আব্দুল মুকিত বলেন, বাল্যবিবাহের কারণে বেশিরভাগ সংসারেই এখন অশান্তি লক্ষ করা যাচ্ছে এই গ্রামে। স্বামী-স্ত্রী দুজনেই অপ্রপ্ত বয়সে বিয়ে করার ফলে তারা কেউ কাউকে বুঝতে পারেনা বা বুঝার চেষ্টাও করেনা। অল্প বয়সে সন্তান নেওয়ার ফলে শারিরীক ও মানসিক ভাবে নিস্তেজ হয়ে পরে মা। তখন দেখা যায় স্বামী-স্ত্রী দুজনের মধ্যেই যৌন শক্তি খুব একটা থাকেনা। ফলে একে অপরের প্রতি ভালোবাসা, আকর্ষণ বা সম্মান হারিয়ে ফেলে। এর ফলে তাদের মধ্যে হাতাহাতিও হয়। অনেক স্বামী-স্ত্রীই ঝগড়া-ঝাটি করে আমার কাছে বিচার নিয়ে আসে। লক্ষ করা যায়, যারা এমন কান্ড করে আমার কাছে বিচার নিয়ে আসে তাদের অধিকাংশেরই অপ্রাপ্ত বয়সে বিয়ে হয়েছে। একারণে মা-বাবা ও সন্তানেরা সবসময় বিভিন্ন অসুখে ভোগে। তাছাড়া এখানকার শিশুদের শারিরীক গঠনও ঠিকভাবে গরে উঠেনা।  জানালেন মুকিত।

এই এলাকার মানুষের প্রাণের দাবি হলো যাতায়াত ব্যাবস্থা। যদি বলা হয় এই এলাকাগুলোর এত সমস্যার কারণ কি তবে প্রথমেই বলতে হবে যাতায়াত ব্যবস্থার অভাব। যদি একটি মাত্র সড়ক নির্মাণ করা হতো তাহলেও এই এলাকায় এত সমস্যা থাকতোনা। একটি সড়কের জন্য যখন যুগ যুগ ধরে এই এলাকার মানুষজন সভ্যতা থেকে অনেক পিছিয়ে তখন ২০০৫ সালের দিকে বিএনপির আমলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহর থেকে মনিপুর-দত্তখলা হয়ে শিমলা নামক গ্রাম পর্যন্ত একটি সড়ক নির্মাণ করার পরিকল্পনা করা হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী এই সড়কের জন্য কোটি কোটি টাকা ব্যায়ে তিনটি সেতু নির্মাণ করা হয়। তারপর যা হলো তা আমাদের দেশের চিরচেনা রাজনীতির ফসল। তা হলো, বিএনপির পর তত্ত্বাবধায়ক সরকার এলো, এরপর নির্বাচনের মাধ্যমে এলো আওয়ামীলীগ সরকার। এই সময়ে দুই সরকার এসেছে ও গিয়েছে কিন্তু এই তিন সেতুর জন্য রাস্তা আর নির্মাণ করা হয়নি। ফলে এলাকাবাসীর অবস্থা আগে যা ছিল এখনো তাই আছে।

এখন ওই এলাকার কোন অসুস্থ ব্যক্তিকে কাঁধে করে ৬ কিলোমিটার হাওরের দুর্গম রাস্তা পাড়ি দিয়ে শহরের হাসপাতালে আনতে আনতে রোগী পথেই মারা যায়। রাতের বেলা যখন কোন গর্ভবতী মহিলাকে হাসপাতালে নেওয়ার প্রয়োজন হয় তখন মাঝ হাওরে আসার পরই গর্ভবতী মহিলা ও পেটের সন্তান দুটোই মরে। তখন অন্ধকার হাওরেই শোনা যায় কান্নার রোল। ঠিক যেন শেয়ালের পালের হুক্কাহুয়া ডাক। এসব কথা জানালেন মনিপুরের মহিলা মেম্বার মাজেদা বেগমের মেম্বারির দায়িত্ব পালন করা স্বামী দারু মিয়া। মূলত দারু মিয়ার স্ত্রী মেম্বার হলেও মেম্বারের দায়িত্ব পালন করে আসছেন দারু মিয়া। দারু মিয়াকেই সবাই মেম্বার বলে ডাকে। গ্রামে নাকি এমনটাই নিয়ম, জানালেন গ্রামের বাসিন্দারা।

শুধু তাই নয়, হাওরের মাঝখানে রেলগাড়ির মতো লম্বা এই গ্রামটি বর্ষাকালে একটি দ্বীপের মতোই মনে হয়। চারদিকে থৈ থৈ পানি। পানির ঢেউ যেন ভেঙ্গে নিতে চায় গ্রামটিকে। গ্রামটিতে চলাফেরা করার জন্য নেই কোন রাস্তা। যাও একটা আছে তা ৪ ভাগের ৩ ভাগ পানির ঢেউয়ে বিলীন হয়ে গিয়েছে। রাস্তাটা এতই চিকন যে, সমানভাবে একসাথে দুই জন হাটতে কষ্ট হয়। দেখতে অনেকটা জঙ্গলে খরগোশ চলার রাস্তার মতো।

আব্দুর রহমান। এলাকার বিশিষ্ট ব্যাক্তিদের মধ্যে একজন, যিনি এলাকার শালিস সভায় বিচার আচার করে থাকেন। স্থানীয় লোকজন এই দরনের লোকদের সম্মান করে সর্দার বলে ডাকে। এই সর্দার জানান, যখন যে সরকার ক্ষমতায় আসে তখন সেই দলের চেয়ারম্যান প্রার্থীরা এসে বিভিন্ন আশ্বাস দেয়। কিন্তু ভোট শেষ হয়ে যাওয়ার পর তাদের আর কোন দেখা পাওয়া যায়না। এখানকার জনপ্রতিনিধিরা শহরে গিয়ে বসবাস করেন। বর্ষাকালে পানির ঢেউ যেন আমাদের ভিটেবাড়ি আর ভেঙ্গে নিয়ে যেতে না পারে এজন্য ইট-সিমেন্টের তৈরি ব্লক বা এই জাতীয় কিছু দিয়ে ভাঙ্গন ঠেকানোর জন্য দাবি করে আসছি যুগ যুগ ধরে, কিন্তু তাতে কোন ফল হয়না। এজন্য এলাকাবাসী নিজ উদ্যোগে ঢেউ যেন সরাসরি মাটিতে আঘাত করতে না পারে সেজন্য পানিতে বেশি করে কচুরিপনা দিয়ে রেখেছে।

এবিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান তাজুল ইসলামের সাথে দেখা হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের মধ্যপাড়া এলাকার বাসায়। তিনি বলেন, বাজেট সীমাবদ্ধতার কারণে এই সমস্যা সমাধানে কিছু করতে পারছেন না তিনি। তবে এটার জন্য আবেদন করেছি, দেখা যাক কি হয়। চেয়ারম্যানের এই কথার বিপরীতে এলাকাবাসী বলছে, যুগ যুগ ধরেই এসব কথা শুনে এসেছে তারা কিন্তু আদৌ কোন সুফল পাওয়া যায়নি। এই এলাকার আরেকটি সমস্যা হচ্ছে কবরস্থান। কোন ব্যাক্তি মারা গেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার শহরের শিমরাইল কান্দি এলাকার কবরস্থানে গিয়ে কবর দেন তারা।

সরেজমিন অনুসন্ধ্যানের সময় এই এলাকায় একটি শিক্ষিত লোকও পাওয়া যায়নি। আর যেসব বাচ্চারা আছে তাদের ৮০ ভাগই স্কুলে যায়না। এখানে মা-বাবারাই সন্তানদের স্কুলে পাঠায়না। স্কুলে না দিয়ে তাদেরকে দিয়ে করানো হচ্ছে মাছ ধরা ও কৃষি কাজ। বিশ্ব যেখান দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে সেখানে এই এলাকার পুরুষরা বলছে 'আমার বাপ-দাদারা যেটা করেছে আমি ও আমার সন্তানরাও এটাই করতে হবে'।

বর্তমানে সেখানে দুইটি পেশার উপর নির্ভর করেই তারা জীবিকা নির্বাহ করছে। তা হলো, শুকনো মৌসুমে কৃষি কাজ আর বর্ষাকালে মাছ ধরা। এখানেই স্কুলের সামনে দেখা হয়েছিলো তিন কিশোরের সাথে যাদের বয়স ১০ থেকে ১২ বছর হবে। তারা জানালেন, তারা তিন জনই কর্মজিবী। মাছ ধরা আর কৃষি কাজ তাদের পেশা। তারা কখনো স্কুলের বারান্দায় গিয়েও দেখেনি।

এখানে টিভি দেখার জন্য ক্যাবল নেটওয়ার্কের এন্টেনা (ডিস লাইন) এনেছিল এক ব্যাক্তি। কিন্তু এলাকার হুজুরদের (মাদ্রাসা শিক্ষক ও ছাত্র) বাঁধার মুখে সেই ব্যবসা আর দাঁড়াতে পারেনি। হুজুরদের দাবি, ডিস লাইন দেখে নাকি ছেলে-মেয়েরা খারাপ হয়ে যাবে। এনিয়ে এলাকায় ঝগড়া-ফ্যাসাদ হয়েছে, হয়েছে মামলাও মোকদ্দমাও। সবশেষে এই ব্যবসা বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছেন ডিস মালিক।

এই এলাকার মানুষের সুখ-দুঃখ দেখা যার দায়িত্ব, যিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ (সদর ও বিজয়নগর) আসনের এমপি, যাকে প্রতি সভা সমাবেশে বলা হয় উন্নয়নের রুপকার, সেই রুপকার আ ম উবায়দুল মোক্তাদির চৌধুরী আসলেই কতটা উন্নয়ন করছে ওই এলাকার? এবিষয়ে জানতে তার সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করা হয়। প্রথমেই ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে বিজয়নগর রাস্তা নির্মাণের ব্যাপারে কোন ব্যাবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন। তিনি বলেন, যেখানে আপনারা সাংবাদিকরা থাকেন সেখানে উন্নয়ন হয় কি কিরে। কিছুদিন আগে একটা টেন্ডার হয়েছিল সেখানে আপনাদের সাংবাদিকদের কারণে সেই টেন্ডার বাতিল হয়ে গেলো। আপনারা ভালো জিনিস চোখে দেখেননা, খারাপটাই বেশি দেখেন। এরপর তিনি আর কোন প্রশ্ন করার সুযোগ না দিয়ে 'স্টুপিড' বলে গালি দিয়ে ফোন কেটে দেন।

তবে পত্তন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম জানিয়েছেন, বিজয়নগর উপজেলাবাসীর প্রাণের দাবি ব্রাহ্মণবাড়িয়া-শিমলা রাস্তাটির জন্য গত এক বছরে তিনবার টেন্ডার হয়েছিল, কিন্তু বার বারই এটা বাতিল হয়ে গিয়েছে। এখনো এই রাস্তাটির জন্য একটি টেন্ডার হয়েছে যার বাজেট ১৩ কোটি টাকা। কিন্তু কবে নাগাদ কাজ শুরু হবে এবিষয়ে তিনি কিছু বলতে পারছেননা।

লেখক: সাংবাদিক

ই-মেইল: send2khokon@gmail.com

মোবাইল: 01726 335086