ন্যায়-অন্যায়ের বেড়াজালে সাংবাদিকতা

সীমান্ত খোকন
Published : 15 Dec 2017, 11:29 AM
Updated : 15 Dec 2017, 11:29 AM

সংবাদপত্র হলো দেশের চতুর্থ স্তম্ভ। তাই সংবাদপত্র ও সাংবাদিকের ভূমিকা রাষ্ট্রের কাছে অতীব গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের সাংবাদিকতার একটি বড় অংশ কাজ করে দেশের আনাচে-কানাচে তথা মফস্বলে। মফস্বল সাংবাদিকদের পদবীর দিক থেকে জেলা ও উপজেলা প্রতিনিধি হিসেবে নিয়োগ করা হয়। গোটা দেশের সুখ-দুঃখের কথা বা সীমান্ত এলাকা দিয়ে কিভাবে মাদক ঢুকছে ও বিএসএফ কিভাবে বাংলাদেশিকে গুলি করে মারছে, নদী ভাঙ্গনে কত পরিবার নিঃস্ব হয়েছে, থানা বা সেবামূলক সরকারি প্রতিষ্ঠনে যখন ঘুষ ছাড়া কাজ হয়না অথবা নিরীহ পরিবারের কিশোরীটি প্রভাবশালী লম্পট কর্তৃক ধর্ষিত হয়ে বিচারের আশায় ধারে ধারে ঘুরেও যখন বিচার পায়না এসব খবরই বেশি করে থাকে জেলা ও উপজেলা প্রতিনিধিরা। তাই মফস্বল সাংবাদিকদের গুরুত্ব অস্বীকার করা যাবেনা।

কিন্তু মফস্বলের কিছু সাংবাদিক যখন এসব খবর কোন বিশেষ স্বার্থে প্রকাশ না করে চেপে যায় এবং কিছু সাংবাদিক যখন শত হুমকি ও ঝুঁকি নিয়েও এসব খবর প্রকাশ করে এবং এর ফলে বিশেষ মহলের স্বার্থে আঘাত লাগে, সু-সাংবাদিক ও কু-সাংবাদিকের মধ্যে দ্বন্দ্বটা তৈরি হয় তখনই। তবে এই দুই পক্ষের মধ্যে কু-সাংবাদিকের দলটিই বেশি প্রভাবশালী হয়ে থাকে। কেননা, তারা কিছু রাজনীতিবিদ ও বিশেষ কিছু মহলের পাহারাদারের ভূমিকায় কাজ করার দরুণ যেকোন প্রয়োজনে এই সাংবাদিকরাও তাদের সাহায্য পেয়ে থাকে।

বছরখানেক আগের ঘটনা। তখন সদ্য চালু হওয়া নিউজ চ্যানেল 'ডিবিসি নিউজ'এ ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রতিনিধি হওয়ার জন্য আবেদন করি। এর প্রেক্ষিতে টিভি অফিস আমার সাক্ষাৎকার নেওয়ার পর নিজ জেলা থেকে কিছুদিন সংবাদ পাঠানোর নির্দেশ দেয়। এর কিছুদিন পর ওই টিভি অফিস থেকে আমার জেলার সবচেয়ে বিখ্যাত বিষয় ও সবচেয়ে দুর্বল দিক নিয়ে দুইটি বিশেষ সংবাদ তৈরি করে পাঠানোরও নির্দেশও দেয়। তখন আমি বিখ্যাত হিসেবে ঠিক করলাম সুর সম্রাট উস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ'কে নিয়ে একটি রিপোর্ট করা যায়। আর দুর্বল দিক হিসেবে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সীমান্ত এলাকা দিয়ে মাদক প্রবেশের উপর দ্বিতীয় প্রতিবেদনটি তৈরি করবো।

তো দ্বিতীয় প্রতিবেদনটি আগে সারলাম। পরে উস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ'কে নিয়ে প্রতিবেদনের জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের কুমারশীল মোড়ে অবস্থিত সুর সম্রাট উস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ সঙ্গীতাঙ্গনে গেলাম। আমার ক্যামেরার কাজে সাহায্য করার জন্য সাথে নিয়ে গিয়েছিলাম লেখক জাকির মাহদিন নামে এক বন্ধুকে। অফিসের নির্দেশ ছিল প্রতিবেদনে পিটিসি দিতে হবে (ক্যামেরার সামনে দাড়িয়ে প্রতিবেদকের বক্তব্য দেওয়া)। সেখানে যাওয়ার পর পিটিসিতে কি বলবো দাড়িয়ে তা একটু ভাবছিলাম। তখন জাকির ভাই বললেন, আমি একটু ভেতর থেকে আসি। আমি তাকে বললাম ভেতরে যাওয়ার প্রয়োজন নেই, কারণ সেখানে মঞ্জু ভাইসহ মুরুব্বীরা বসে থাকতে পারে।

জাকির ভাই আমার কথা শুনলেন না। ভেতরে গিয়ে তিনি নাকি ২টা চেয়ার আনতে চেয়েছিলেন আমাদের বসার জন্য। এই নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিনিয়র সাংবাদিক মঞ্জু ভাইয়ের সাথে জাকির ভাইয়ের কথা কাটাকাটি হয়। তখন আমি ঘটনাস্থলে ছিলাম না। আমি ছিলাম অনেকটা দূরে ও তাদের থেকে আড়ালে অর্থাৎ সঙ্গীতাঙ্গনের সামনে খোলা জায়গায়। এক পর্যায়ে দেখলাম জাকির ভাই দৌড়ে গেইট দিয়ে বের হবার চেষ্টা করছে। জাকির ভাইয়ের পিছনে জঙ্গি জঙ্গি বলে দৌড়াচ্ছে মঞ্জু ভাই ও তার দুই বন্ধু। এই অবস্থা দেখে আমি রীতিমতো তাজ্জব বনে গেলাম। পরে মঞ্জু ভাই জাকির ভাইকে ধরতে পারলো না। মঞ্জু ভাই আমাকে বললেন, জাকির তোমার সাথের কিনা। আমি বললাম হ্যাঁ। তখন তিনি আমাকে হাতে ধরে আলাউদ্দিন সঙ্গীতাঙ্গনের ভীতরে নিয়ে বসালো। কয়েকজন সাংবাদিক ও পুলিশকে তিনি ফোন করলেন। চার জন সাংবাদিক ও দুইজন পুলিশ অফিসার সেখানে গেলেন। তারপর জাকির ভাইয়ের খারাপ আচরণের জন্য তারা সবাই আমাকে দোষারোপ করতে লাগলো। তখন এই ঘটনার জন্য আমি মঞ্জু ভাইয়ের কাছে ক্ষমা চেয়েছি, কিন্তু তিনি ক্ষমা না করে আরো উত্তেজিত হয়ে উঠলেন।

ক্ষমা করুক বা না করুক ঘটনাটা হয়ত এখানেই শেষ হয়ে যেতে পারতো। কিন্তু না। তখন তারা আমাকে বিভিন্ন নিউজের কারণে দোষারোপ করতে লাগলো। অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে অতীতে আমি পত্রিকায় যেসব নিউজ করেছি সেই কারণে তারা সবাই তখন আমাকে অন্যায়ভাবে অনেক কথাই বলেছে। কয়েকবছর আগে যেসব নিউজ করেছি সেই বিষয়েও তারা আমাকে বকাবকি ও হুমকি-ধামকি দিতে লাগলো।

শুধু তাই নয়। ডিবিসি নিউজের এ্যসাইনমেন্টে আখাউড়া সীমান্ত এলাকায় গিয়ে মাদক প্রবেশের বিষয়ে কেন বিজিবির বক্তব্য নিতে গেলাম সে জন্যও রেগে আগুন হয়েছেন আরেক সাংবাদিক রিয়াজউদ্দিন জামি সাহেব। এটা নিয়েও তিনি বকাবকি করেছে আমাকে। নিউজের সূত্র ধরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিটিসিএল অফিসের এক কর্মীর কাছ থেকে আমাকে হত্যা ও মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার হুমকি পাওয়ার পর থানায় জিডি করেছিলাম। এই জিডি করেও নাকি মহা অন্যায় করেছি, এই কথা বলে বকছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক দীপক চৌধুরী বাপ্পী। সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গিয়ে ডাক্তারের অবহেলা ও দুর্ব্যবহারের স্বীকার হয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলাম। এটাও নাকি অন্যায় করেছি এই কথাও বলছিলেন সাংবাদিক বাপ্পী।

তখন যার যা ইচ্ছা হয়েছে আমাকে বলেছে। যখন বুঝতে পারছি আমার প্রতি মিথ্যা অপবাদ দেওয়া হচ্ছে বা অফিস এ্যসাইনমেন্টের কাজে গিয়েও নিজ জেলার সাংবাদিকদেরই বাধা পাচ্ছি তখন আমি কিছু কথা বলে তাদেরকে বুঝাতে চেয়েছিলাম যে, আমি ভুল কাজ করিনি। কিন্তু তখন তারা সরাসরি বলে দিল, 'আমরা তোমাকে কোন কথা বলার সুযোগ দিবোনা।' মুহুর্তেই বুঝতে পারলাম অতীতের আমার করা দুর্নীতি বিরোধী নিউজের কারণেই তারা আমাকে ধরার চেষ্টা করছিল এতদিন এবং আজ ধরতে পেরেছে।

যাইহোক, অন্যায়ভাবে মিথ্যা অপবাদ ও বকাবকি তো আর কম করা হলোনা আমাকে? ভেবেছিলাম একটু দেরি হলেও ঘটনাটা হয়ত এখানেই শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু না। ঘটনা এখানেও শেষ না। তারপর আমাকে দিয়ে দেওয়া হলো পুলিশে। আমি ভাবতেও পারিনি অন্যের সাথে বাক-বিতণ্ডার জন্য আমাকে পুলিশে দেওয়া হবে। তাও আবার একজন সাংবাদিক হয়ে আরেকজন সাংবাদিককে কি করে কোন দোষ ছাড়া পুলিশে দিতে পারে? ঘটনাটা প্রথমে নিজেরই বিশ্বাস হচ্ছিলনা। দিনটা ছিল ১৮ আগস্ট ২০১৬। বিকাল ৩টা থেকে একটানা রাত প্রায় ১০টা পর্যন্ত আমি পুলিশের হেফাজতে ছিলাম। ব্যাপারটা স্থানীয় এমপি, জেলা প্রসাশক এবং পুলিশ সুপার পর্যন্ত জানাজানি হয়েছে। কিন্তু সঠিক ব্যবস্থা কেউই নেননি।

এখানে আরেকটা বিষয় হলো, এইযে আমি বিকাল ৩টা থেকে রাত প্রায় ১০ পর্যন্ত পুলিশের হেফাজতে ছিলাম, এই ক্ষেত্রে কিন্তু কোন অভিযোগ ছিলোনা পুলিশের কাছে। সম্পূর্ণ অভিযোগ ছাড়া তাদের প্রতি পুলিশের স্বজনপ্রীতির উপহার হিসেবে আমাকে এই লম্বা সময় অন্যায়ভাবে আটকে রেখেছে পুলিশ। আটক থাকা অবস্থায় আমি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান সাহেবকে ফোনে বিস্তারিত ঘটনা জানিয়েছিলাম। তখন তিনি আমাকে বলেছিলেন, 'আমার জানামতে আপনি একজন ভদ্র ছেলে, আর তাদেরকেও আমি চিনি। কিন্তু আমারও হাত-পা বাধা' তখন তিনি এই ঘটনার জন্য কিছুটা দুঃখ প্রকাশ করে ফোন রেখে দেন। কিন্তু তখনো আমার এই অন্যায়ভাবে বন্দি অবস্থা থেকে মুক্তি আর হলোনা। কিভাবে সেদিন অন্যায়ের হাতিয়ার হিসেবে পুলিশ প্রসাশন ব্যবহৃত হলো, কিভাবে সেদিন গুটিকয়েক অসৎ সাংবাদিক ও পুলিশ প্রসাশন দ্বারা আমার নৈতিক অধিকার হরণ করা হলো, কিভাবে সহজেই আমার প্রতি সুশীল সমাজের নামদারী লোকগুলো অন্যায় করতে পেরেছে, এগুলো ভাবলে সহজেই মনে প্রশ্ন জাগে যে, এই দেশের কথিত সুশিল সমাজ ও প্রশাসন আসলে কতটা ঠিক পথে হাঁটে?

রাত ১০টা নাগাদ সদর থনার ওসি'র রুমে শালিস বসলো। বলে রাখছি, এর আগে প্রেসক্লাবে কয়েক দফা মিটিং হয়েছে এই ব্যপারটা নিয়ে। যাই হোক, থানার শালিসে ছিলেন শহরে কিছু রাজনৈতিক ব্যাক্তিত্ব ও ৪/৫জন সাংবাদিক। সব মিলিয়ে প্রায় ২০/২৫ জনের একটি সমাগম কক্ষে ওসি সাহেব নিজেও উপস্থিত ছিলেন। রুমে ঢুকার পর আমাকে সবার সামনে নিয়ে ওসি সাহেবের চেয়ারের সাথে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে। শালিস সভায় চোর বা মারাত্মক অপরাধীকে যেভাবে দাঁড় করিয়ে রাখা হয় আরকি। সেই ভাবেই আমাকে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে। শুরু হলো বিচার। যে যা পারছে তাই বলছে, সত্য-মিথ্যার কোন বালাই নেই। আমি কোন মিথ্যা কথার জবাব দিতে চাইলে সবাই একসাথে ধমক হাকিয়ে উঠছে।

এই ধমকা-ধমকির খেলায় ওসি সাহেবও কম যাননি। সেখানে সাংবাদিক মনির হোসেন ভাই ও জেলা যুবলীগ সভাপতি শাহনূর ভাই ছাড়া আর কাউকেই নিরপেক্ষ কথা বলতে দেখিনি। সেখানে আমাকে আবারো সীমান্তে মাদক প্রবেশ নিয়ে কেন নিউজ করতে গেলাম ও বিজিবির বক্তব্য কেন নিতে গেলাম সে কৈফিয়ত চাইছে সব সাংবাদিরা। বললাম অফিস এ্যসাইনমেন্ট ছিল। এই কথা শুনেই আবার সবাই উত্তেজিত হয়ে উঠলো। আবার ধমকাতে লাগলো। এমন অনেক ধমকা-ধমকি ও মিথ্যা কথা চললো অনেক্ষণ। শুধু কি তাই, তারা বলে দিলে নাকি সীমান্তে বিজিবি আমাকে গুলি করে মেরে ফেলতো এমন কথাও বলা হয়েছে।

কিছুদিন আগে রাস্তায় যখন এক প্রতারককে জনতা আটক করেছিল তখন সেই প্রতারককে থানায় দেওয়া হয়েছিল। সাংবাদিক হিসেবে যখন ওই প্রতারক ও প্রতারিত ব্যক্তির সমন্ধে থানায় তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়েছিলাম তখন এক কনস্টেবল আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করেছিল। সাংবাদিক হিসেবে পরিচয় দেওয়ার পরও সে খারাপ ব্যবহার করেছিল। তখন আমি থানার ওসি মইনুর রহমানের কাছে নালিশ করেছিলাম। তখন তিনি এঘটনার কোন বিচার করেননি। তখন এক এসআই আমাকে বুঝিয়ে বিদায় করলেন। এটা বেশ কিছুদিন আগের কথা।

তো ওই শালিসে তৎকালিন ওসি মইনুর রহমান বলেছেন, আমি নাকি কিছুদিন আগে থানার এক কনস্টেবলের সাথেও ঝামেলা লাগিয়েছি। আমি বলতে চেয়েছিলাম ওই ঝামেলাটা আমি লাগাইনি, লাগিয়েছিল আপনারই কনস্টেবল। এই কথা বলা মাত্রই সবাই আবার গর্জে উঠলো।

যাই হোক শেষ পর্যন্ত তারা সকলে মিলে সিদ্ধান্ত নিল যে, একটি কাগজে মুচলেকা নিয়ে আমাকে ছেড়ে দেওয়া হবে। সেই কাগজে লিখা থাকবে, আমি অপসাংবাদিকতা করার কারণে ক্ষমাপ্রার্থী। আমি প্রতিবাদ কররাম, বললাম আমি যেহেতু কখনো অপসাংবাদিকতা করিনি বা এরকম কোন প্রমাণও আপনারা দিতে পারবেননা তাই আমি কেন এটাতে সই করবো? আপনারা আমার প্রতি অন্যায় করছেন মিথ্যে বলছেন। এই কথা শুনার পর যেন তাদের মাথায় বাজ পরলো। সবাই আবার রেগে মেগে আগুন!

তখন জেলা যুবলীগের সভাপতি শাহনূর ভাই তাদেরকে বলেছিলেন, অপসাংবাদিকতার সংজ্ঞা কি সেটা আগে আমাকে বলো? যদি তার সাংবাদিকতা সঠিক হয় এবং অপসাংবাদিকতার ব্যাখায় না পরে তাহলে তোমরা কিসের ভিত্তিতে ছেলেটার ক্যারিয়ার নষ্ট করতে চাচ্ছো?

এই কথায় সহমত পোষন করেছিলেন সাংবাদিক মনির ভাইও। এই কথার পর তারা সবাই চুপষে গেলো। পরবর্তীতে এই অনাকাঙ্খিত ঘটনার জন্য আমি ক্ষমাপ্রার্থী এমন লিখা একটি কাগজে আমার সই করতে হয়েছে তাদের চাপে। সই করার পর সাংবাদিক আল আমীন শাহীন বলেছে, সে তো সই দিয়েই দিয়েছে। এইবার আমরা সইয়ের উপর ফাকা স্থানে লিখে দিই যে, 'আমি অপসাংবাদিকতা করেছি'। তখন আমি প্রতিবাদ করে বললাম, সই করার পর আপনাদের মনগড়া মতো কোন লিখা লিখতে পরেননা, এটা মহা অন্যায়। তখন সাংবাদিক রুমী সাহেব দেখলাম 'অপসাংবাদিকতা' শব্দটি লিখার জন্য উঠে পরে লেগেছিলেন। অথচ তার সাথে কখনো আমার ভালো ভাবে কথাই হয়নি কখনো। রাস্তাই রুমী ভাইকে দেখলে সালাম দেওয়া ছাড়া আর বেশি কিছুই বলতামনা আমি। সেই ব্যক্তিই দেখলাম আমার ক্ষতি করার জন্য কম চেষ্টা করেননি। অবশেষে আমি সই করার পর থানাতে ওসির টেবিলে বসেই সেই কাগজে তারা 'অপসাংবাদিকতা' শব্দটি লিখেই দিল।

তারা লিখেছে, 'আমি কখনো অপসাংবাদিকতা করবোনা'। তারপর এই মুচলেকার কোন কপিও আমাকে দেয়নি তারা। পরে থানা থেকে বের হয়ে মঞ্জু ভাইয়ের পায়ে ধরে ক্ষমা চাইতে বলা হলো আমাকে, তখন পায়ে ধরে ক্ষমা চেয়েছি। তারপর মঞ্জু সাহেব প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদককে বললেন আমাকে যেন অচিরেই ক্লাবের সদস্য বানানো হয়। আমি প্রেসক্লাবের হলরুমে দাঁড়ালে নাকি রুমটা উজ্জল হয়ে থাকবে। এবং বিটিসিএল এফিসের কর্মীর কাছ থেকে যে হুমকি পেয়ে জিডি করেছিলাম অচিরেই সেই জিডি তুলে নেওয়ার জন্য আমাকে চাপ প্রয়োগ করা হলো সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে। আমি বললাম, যেহেতু আমাকে হত্যার হুমকি দিয়ে রেখেছে সেহেতু জিডি তুলে নিলে যদি আমার কোন সমস্যা হয় তখন? তখন মঞ্জু ভাই আবার রেগে গেলেন, আমাকে বললেন, 'এই ছেলে কখনো মানুষ হবেনা, সে পথে ঘাটে লাঞ্ছিত হয়ে মরবে'।

অন্যায় ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে লিখলে এই জেলার সাংবাদিকদের এত গা জ্বলে কেন? এই প্রশ্নটির উত্তর জানা থাকলেও বলতে চাইনা। আমি চাইনা এই মহান পেশাটায় কলঙ্ক লাগুক।

যাই হোক, পরে নিউজ চ্যানেল 'ডিবিসি নিউজে' যেন আমার নিয়োগ না হয় সেই জন্য সাংবাদিকদের আরেকটি সেন্ডিকেট ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশেরই এক উর্ধতন কর্মকর্তাকে দিয়ে সেই মুচলেকার কাগজটি প্রেসক্লাব থেকে সংগ্রহ করে সেখানে নিজেরা আরো কিছু নেতিবাচক কথা লিখে ডিবিসি নিউজের অফিসে দিয়েছে। যাতে করে আমার নিয়োগ অনিশ্চিত হয়ে যায়। পরে তাতে আমার নিয়োগ সত্যিই হয়নি। সাংবাদিকতায় এইসব আগাছা সাফ হওয়া খুবই দরকার বলে আমি মনে করি।